Take a fresh look at your lifestyle.

মাহে রমজান

0

বিল্লাল বিন কাশেম :
২৬তম রোজার দোয়া : হে আল্লাহ! এদিনে আমার প্রচেষ্টাকে গ্রহণ করে নিন। আমার সব গুনাহ মাফ করে দিন। আমার সব আমল কাজ কবুল করুন এবং সব দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখুন। হে সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রোতা।
আজ ২৬ রমজান। দিনের শেষে আসন্ন রাতটি ২৭ রমজানের রাত হিসেবে চিহ্নিত। হাদিস শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী আজকের রাতটি পবিত্র লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে অধিক সম্ভাবনার ভিত্তিতে আজ রাতে সারা দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করে থাকেন। মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত ও গুরুত্ব অনেকাংশে মহিমান্বিত এ রাতের কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকের এই মহিমান্বিত রাতে আল্লাহ আমাদের সকলের দোয়া কবুল করুন।
২৭ শে রমজান কি শবে কদর? মহামহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদর বা শবে কদর, যে রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাত কে পাওয়ার জন্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ অধীর অপেক্ষায় থাকেন। আমাদের দেশে বেশ ঘটা করে ২৬শে রমজানের দিবাগত রাতে লাইলাতুল কদর পালিত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করেন। প্রশ্ন হচ্ছে রমজানের ২৭ তারিখ সম্ভাব্য শবে কদরের রাত, এই তথ্যের ভিত্তি কি? বাস্তবে এই তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। এটি কিছু ইসলামী বিশেষজ্ঞগণের নানা হিসাবের ফল হিসেবে অভিহিত করে চেনে অনেকে। যেখানে এই মহামহিমান্বিত রাত সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী করিম (সা.) সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করতে পারেননি, সেখানে কোন সাহসে আমরা তারিখ নির্দিষ্ট করে ফেলেছি। এটা মহা-অন্যায়। অথচ সহি হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করার জন্যে।
১. রমজানের শেষ দশকে প্রিয় নবী (সা.) স্ত্রী-পরিবার সহ সারারাত জেগে ইবাদত করতেন:
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
“রমজানের শেষ দশক প্রবেশ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নিতেন, নিজে সারারাত জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।” (সহীহ বুখরী, অধ্যায়: শবে কদরের ফযীলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ইতিকাফ।) কোমর বাঁধার অর্থ হলো: পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে চেষ্টা-সাধনায় লিপ্ত হওয়া। কোনো কোনো আলেম এর ব্যাখ্যায় বলেন: স্ত্রী সহবাস থেকে দূরে থাকা।
২. রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশকে যত বেশি পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না। হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) যে পরিমাণ পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না।”{সহীহ মুসলিম: রমজানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) বেশি বেশি পরিশ্রম করা।}
শবে কদর কখন হবে? শবে কদর হবে রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে:
ক. হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান কর।” (সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করা।)
খ. আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:
স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্র দেখানো হলো। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।”(সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত।)
কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে, দু ব্যক্তির বিবাদের কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ভুলে গেছেন।
গ. শবে কদর কি শুধু রামাযানের সাতাইশ রাতের জন্য নির্দিষ্ট?
আমাদের দেশে সাধারণত মানুষ শুধু রামাযানের সাতাইশ তারিখে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করে এবং ধারণা করে এ রাতেই শবে কদর অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এ ধারণা, সুন্নতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান কর। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: রোযা।)
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন:
স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্র দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।”(সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত।)
ঘ. তবে শেষ সাত দিনের বেজোড় রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি: যেমন, নিম্নোক্ত হাদীসটি:
ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত যে, কয়েকজন সাহাবী রমজানের শেষ সাত রাত্রিতে স্বপ্ন মারফত শবে কদর হতে দেখেছেন। সাহাবীদের এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি দেখছি তোমাদের স্বপ্নগুলো মিলে যাচ্ছে শেষ সাত রাত্রিতে। অতএব কেউ চাইলে শেষ সাত রাত্রিতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে পারে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) এ মর্মে আরও হাদীস রয়েছে।
কোনো কোনো সালাফে-সালেহীন সাতাইশ রাত শবে কদর হওয়ার অধিক সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছেন। সাহাবীগণের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা.), মুআবিয়া, উবাই ইবনে কা’ব (রা.) এর মতামত থেকে এটাই বুঝা যায়। কিন্তু প্রিয় নবী (সা.) থেকে এভাবে নির্দিষ্ট করে লাইলাতুল কদর হওয়ার কোনো হাদীস নাই। তাই উপরোক্ত সাহবীদের কথার উপর ভিত্তি করে বড় জোর সাতাইশে রাতে শবে কদর হওয়াকে অধিক সম্ভাবনাময় বলা যেতে পারে। নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। সঠিক কথা হলো, শবে কদর কখনও ২১, কখনও ২৩, কখনও ২৫, কখনও ২৭ আবার কখনও ২৯ রাতে হতে পারে।
সুতরাং শুধু সাতাইশ তারিখ নয় বরং কোনো ব্যক্তি যদি রামাযানের শেষ দশকের উপরোক্ত ৭টি রাত জাগ্রত হয়ে ইবাদত-বন্দেগী করে তবে নিশ্চিতভাবে শবে কদর পাবে। কিন্তু শুধু সাতাইশ রাত জাগলে শবে কদর পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। বরং অন্যান্য রাত বাদ দিয়ে শুধু সাতাইশ রাত উদযাপন করা কতটা যৌক্তিক! বিশেষ করে আমাদের দেশে যেভাবে শুধু সাতাইশ তারিখ নির্দিষ্ট করে নেয়া হয়েছে সেটি না করে কোরআন হাদিসের আলোকে শবে করের রাত খুঁজতে হবে। আল্লাহ আমাদের কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমাদের আমল করার তৌফিক এনায়েত করুন। আমিন।
লেখক : উপ-পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়

Leave A Reply

Your email address will not be published.