Take a fresh look at your lifestyle.

মাহে রমজান

0

বিল্লাল বিন কাশেম :

২৮ তম রোজার দোয়া : হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে নফল এবাদতের পর্যাপ্ত সুযোগ দিন। ধর্মীয় শিক্ষার মর্যাদায় আমাকে ভূষিত করুন। আপনার নৈকট্য লাভের পথকে আমার জন্যে সহজ করে দিন। হে পবিত্র সত্তা ! যাকে, অনুরোধকারীদের কোন আবেদন নিবেদন , ন্যায়বিচার থেকে টলাতে পারে না।

আজ ২৮ রমজান। রমজানের শেষ হতে আর এক/ দুইদিন বাকী। এবার ভেবে দেখা যাক রমজানের শিক্ষা কতটা অর্জন করেছি। ইবাদতের স্বাদ গ্রহণে কতটুকু সফলতা অর্জিত হয়েছে। মহান রবের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য কতটা আকর্ষণ বেড়েছে। করণীয় কাজগুলোর কতটুকু অর্জিত হয়েছে। অহমিকা, লোভ, লালসা থেকে মুক্ত হতে পেরেছি কি? হিংসা গিবত থেকে বেঁচে থাকতে পারছি তো?

কতটুকু সংযমী হতে পেরেছি। বর্জনীয় কাজগুলোর কতগুলো বর্জন করতে পেরেছি। মিথ্যার কুফল সম্পর্কে নিশ্চয় জেনেছি যে, মিথ্যা ও সিয়াম একসঙ্গে চলতে পারে না। মিথ্যা আশ্রয়ীদের সাওমের আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন হল, সেই মিথ্যা থেকে কি আমরা বিরত থাকার প্রশিক্ষণ নিতে পেরেছি। কলুষিত নাফসকে কতটুকু কলুষমুক্ত করতে পেরেছি। নাজাতের মাসে যদি মুক্তি না পাই তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না।

জিবরিল আমিন দোয়া করছেন, ‘যে রমজান মাস পেয়েও এমনভাবে মৃত্যুবরণ করল যে তাকে ক্ষমা করা হয়নি আল্লাহ তাকে (তাঁর রহমত) থেকে দূরে সরিয়ে দিন’ আমি (নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললাম ‘আমিন’।

(মু’জামুল আওসাত : তাবারানী)। অন্য একটি হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘এই যে রমজান এসেছে। এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। আগুনের (জাহান্নাম) দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে বেড়ি পরিয়ে দেয়া হয়। দূর হোক সে ব্যক্তি যে রমজান তো পেল কিন্তু নিজের জন্য ক্ষমা নিশ্চিত করতে পারল না। এ মাসে যদি তাকে ক্ষমা করা না হয় তাহলে আর কবে?’ (মু’জামুল আওসাত : তাবারানী)।

মহান রবের দরবার থেকে আমাকে অবশ্যই নাজাত ও মুক্তি নিশ্চিত করতেই হবে। তিনিই তো আমাদের নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, নিজেদের ওপর জুলুমকারী হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চিত তিনি সকল পাপ মোচন করে দেবেন। তিনিই একমাত্র মহান ক্ষমাশীল, মহাদয়াবান।’ (সুরা যুমার : ৫৪)। তাঁকে কীভাবে ডাকব? কীভাবে জানাব ফরিয়াদ?

তিনি কাছে না দূরে? উত্তর তিনিই (আল্লাহ) দিচ্ছেন, যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করে (আমি কাছে না দূরে) তখন আপনি বলে দিন, আমি তো রয়েছি অতি কাছে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনায় আমি সাড়া দিই যখন সে আমার কাছে প্রার্থনা করে।’ (সুরা বাকারাহ : ১৮৬)।
এবারে চুপ থাকা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে শেষ করবো। একটি মিশরীয় প্রবাদ আছে চুপ থাকা নিয়ে, ‘কোলাহল যদি রূপার তৈরি হয়, নিরবতা তবে সোনার তৈরি।” আরবি প্রবাদটাও অসাধারণ, “তুমি তখনোই কথা বলো যখন তা চুপ থাকার চেয়েও সুন্দর।’

কেন চুপ থাকাকে এত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে? কারন জিহ্বা দ্বারা সংশ্লিষ্ট গুনাহ গুলো আমাদের ভালো আমলগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এবার জেনে নেয়া যাক জিহ্বা দ্বারা সৃষ্ট কবিরা গুনাহ সমূহ; ক. মিথ্যা কথা বলা; খ. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া; গ. মিথ্যা শপথ করা; গ. গিবত করা; ঘ. পরনিন্দা করা; ঙ. অভিশাপ দেয়া; চ. খোঁটা দেওয়া; এবং ছ. চোগলখোরি করা।

আমরা সারাদিনে যত কথা বলি তার বেশিরভাগই দেখা যায় অপ্রয়োজনীয় এবং মিথ্যাচার ও গিবতে পরিপূর্ণ। অথচ মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দই লিপিবদ্ধ হচ্ছে। মহান আল্লাহ বলেন,
“মানুষ যে কথাই উচ্চারন করুক না কেন তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।” (সূরা কাফঃ ১৮)। হাশরের ময়দানে দেখা গেল আমাদের পূণ্যের চেয়ে পাপের পাল্লা ভারি। অবাক! কখনো কারো ক্ষতি করিনি, কারো প্রতি অন্যায় করিনি, তারপরো এ অবস্থা কেন? তখন উত্তর আসবে, “এগুলো তোমার মুখ নিঃসৃত পাপের ফল। ” আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এ জন্যই বলে গেছেন, “অধিকাংশ মানুষ জিহ্বা দ্বারা সংঘটিত পাপের কারনে জাহান্নামে যাবে।” (তিরমিযিঃ ১৬১৮)। তাহলে কি করনীয়? এর সমাধানও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দিয়ে গেছেন। “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে নতুবা চুপ থাকে।” (মিশকাত হা/৪২৪৩)আমাদের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি তো? নাকি জিহ্বাই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে? পবিত্র রমজান হোক জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাস। মহান রব আমাদের জীবনকে মাহে রমজানের শিক্ষা নিয়ে চলার তৌফিক এনায়েত করুন। আমিন

লেখক : উপ-পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.