আবারও আনন্দের ঈদ
প্রতিবেদক :
মহামারির কালোছায়া দূরে ঠেলে আবারও ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এবার ঈদের নামাজ, কোলাকুলিতে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তাই জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে।
হিজরি বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজান। এ মাস শেষে শাওয়াল মাস, আর এই মাসের প্রথম দিনটি ঈদুল ফিতর হিসেবে পালিত হয়। আজ (মঙ্গলবার) শাওয়াল মাসের শুরু।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত দুই বছর কোলাকুলি তো দূরের কথা, আসা যায়নি কাছাকাছিও। ভয় সংক্রমনের। মৃত্যুর। চেনা মানুষগুলো সব কেমন অচেনা হয়ে যায় দিনে দিনে। স্বজনও হয়ে গেল পর। নিথর দেহ অসহায় পড়ে থাকে, হাসপাতালের মর্গে কিংবা ফ্রিজিং ভ্যানে। মানুষ এমনও হয়! বেঁচে থাকাই যে শেষ কথা, লিখে গেল সে কথা, মহামারি করোনা।
আপাতত নেই আর মহামারির কালো ছায়া খুব। নতুন আক্রান্ত হলেও ভয়ের নয় ততটা। এবারের ঈদে নেই কঠিনের কাঁটা। দুবছর পর, আবারও চিরচেনা ঈদ এলো। সঙ্গে নিয়ে আনন্দ আর সৌহার্দ্যরে বার্তা। তবুও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
দূরত্ব বজায় রাখতে ঈদগাহে নামাজও বন্ধ ছিল দুবছর। মসজিদে লাল দাগের চৌহদ্দিতে ঢেকে রাখা মুখে আদায় হয় নামাজ। যেন জীবাণু নয় আতঙ্কিত চেহারা যেন না দেখে কেউ। যদিও যায়নি লুকানো শঙ্কিত চোখ। ঈদ এসেছিল, কিন্তু আনন্দ ছিল নির্বাসিত। যেন নিয়মরক্ষা। এবার ঈদগাহে সারিবদ্ধ হয়ে নামাজ পড়বে ধর্মপ্রাণ মুসলমান। কাঁধে কাঁধ মিলবে। বুকে মিলবে বুক। সৌহার্দ্যরে আলিঙ্গনে কাছে আসবে দূরে যাওয়া মুখ। আহা! কত অপেক্ষার শেষে। কতপ্রাণের আকস্মিক বিদায়ের পর, আপাত স্বাভাবিক সময়।
ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দেরই অংশ হয়ে গেছে বহুদিন। ঈদ মানেই নাড়ির টানে শিকড়ে ফেরা। দীর্ঘ যানজট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা পথে। গ্রীষ্মের নিদারুণ দাবদাহে। তবু প্রিয়জনের কাছে ফেরা মানুষের ঢল থেমে থাকে না কখনই। মহামারির মধ্যে বারণ ছিল। কঠোর ছিল আইন। তবু নিবৃত্ত করা যায়নি কাউকে। যান চলাচল বন্ধ ছিল, পায়ে হেঁটে রওনা দিয়ে মানুষ। ফেরি জাহাজে ঘরমুখো মানুষের অগুণতি মাথা, ঝাঁকায় ভরা কালোজামের মতো ছিল দেখতে। নদীর ঘোলা জলেও হাবুডুবু খেয়েছে মানুষ। দমে যায়নি তারপরও।
সংশ্লিষ্টদের হিসাব বলছে, এবার বাড়ি ফিরেছে গতবারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ। সঙ্গতই। এবার কোনো বারণ ছিল না। দুবছর ধৈর্য্যরে বাঁধ যাদের আকড়ে ছিল, এবার শ্বাস ফেলেছে তারা। ট্রেন, বাস, লঞ্চ কিংবা ব্যক্তিগত পরিবহন, পথে পথে মানুষের মিছিল ছিল সেই চিরচেনা রূপে। স্বাভাবিক কারণে গ্রামেও ঈদের আমেজ ফিরবে এবার। কতদিন দেখা হয়নি প্রিয়মুখের সঙ্গে। এর মাঝে বিয়োগ হয়েছে কত স্বজন, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, হিতাকাক্সক্ষী। মাটিতে মিশে আছে তারা সমাধি পাড়ায়। আনন্দের দিনে হবে তাদের অশ্রু বিসর্জনে স্মরণ।
দুবছরের কঠোর বারণকাল পেরিয়ে এবছর ঈদ বাড়তি আনন্দ নিয়ে এলো ঘরে ঘরে। বর্ণিল সাজে সাজবে শিশু-কিশোর-নবীণ-প্রবীণ সকলে। বিশেষ মিষ্টান্ন আর খাবারের আয়োজনও থাকবে বরাবরের মতোই। থাকবে অতিথির অপেক্ষা। আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চিরচেনা সেই সংস্কৃতি। দল বেঁধে বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি ঘুরেফেরা, পাড়া মহল্লায় আনন্দ আড্ডায় ভাসবে দিন। এই তো কাক্সিক্ষত ঈদ।
রোববার সন্ধ্যা থেকেই কানে ভেসে আসছে, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসামানী তাগিদ।’ টিভি পর্দায় শুরু হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ আয়োজন। মানুষের মুখে মুখে এই গান। টলটলে আকাশে হালকা হলদে আভা। চাঁদ দেখতে ছাদে ছাদে মানুষের ভিড়। মসজিদে মাইকে মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, ঈদের বার্তা। কাল কখন কোথায় ঈদের জামাত হবে, তার সময়সূচি ঘোষণা হচ্ছে উচ্চকণ্ঠে। আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক ধনী-নির্ধননির্বিশেষে। মহামারির কালোছায়া মুক্ত ঈদ ফিরে আসুক আপন মহিমায়। মুছে দিক বিগত সব বেদনা, অকল্যাণ। ঈদ মোবারক।