Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

সৃষ্টিশীল বাঙালির যে বিবর্তনাশ্রয়ী ইতিহাস, আলাউদ্দিন আল আজাদ তার এক বিরল যুগসেতুর সাক্ষী। কেননা বাংলাদেশের সাহিত্যের স্বাতন্ত্র্যনির্দেশী শুরু যে নতুন কবিতায় (১৯৫০), আলাউদ্দিন আল আজাদ তার একজন মুখ্য লেখক হলেও তাঁর সাহিত্যিক যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশবিভাগের আগে, অন্তত ১৯৪৬ সালে।

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন সম্পাদিত ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রবন্ধ ‘আবেগ’ ও গল্প ‘জানোয়ার’। অর্থাৎ কবিতা নয়, মননশীল রচনা ও কাহিনীমূলক গদ্যবয়ান দিয়েই তাঁর যাত্রা শুরু।

তারপর গদ্যে-পদ্যে-সংলাপে তিনি অজস্র ধারায় বিচিত্র আঙ্গিকে লিখেছেন ও প্রকাশিত হয়েছেন। চব্বিশটি উপন্যাস, একশ আঠারোটি গল্প, বারোটি নাটক, এগারোটি কাব্যগ্রন্থ, পাঁচটি প্রবন্ধগ্রন্থ ও বেশ-কিছু সম্পাদিত গ্রন্থের জন্যে তিনি আমাদের অতিপ্রজ লেখকদের গোত্রভুক্ত।

তাঁর সৃষ্টির পালা চলছে দিগন্ত থেকে দিগন্ত ছাড়িয়ে। ইউনেস্কো পুরস্কার পেয়েছে তাঁর ‘কর্ণফুলি’ উপন্যাসের জন্য। এক ডাকে সেরা উপন্যাসের (বেস্ট সেলার) ঘরে নাম কিনেছে তাঁর ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’। তাঁর ‘স্মৃতির মিনার’ হয়ে উঠলো শহীদ মিনারের একতম স্মারক কবিতা। হলেন তিনি বহুমাত্রিক ও সব্যসাচী লেখক-কথাসাহিত্যিক, কবি, সনেটকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্রের গল্পকার ও স্ক্রিপ্ট লেখক, টিভির জনপ্রিয় ধারাবাহিক আলেখ্যানুষ্ঠান (রত্নদীপ)-এর স্রষ্টা, শিশুসাহিত্যিক, আদর্শ পত্রলেখক, মুক্তিযুদ্ধের কথাকার এবং গীতিকারও।

ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (১৯৪৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯৫৩) ও স্নাতকোত্তর (১৯৫৪) এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবন ও কবিতা’ বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি (১৯৭০) লাভ করেন। পরে তিনি অরগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে উচ্চ প্রশিক্ষণ (১৯৮৩) গ্রহণ করেন।

তিনি নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ (১৯৫৫), ঢাকা জগন্নাথ কলেজ (১৯৫৬-৬১), সিলেট এমসি কলেজ (১৯৬২-৬৮) এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ (১৯৬৪-৬৭)-এ অধ্যাপনা করেন। তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন (১৯৭৪-৭৫)। এ ছাড়া তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল প্রফেসর ও নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব (১৯৯০-৯২) পালন করেন।

ষাটের দশকে রচিত তার উপন্যাস ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ (১৯৬০) ও ‘কর্ণফুলী’ (১৯৬২) ব্যাপক সাড়া জাগায়। তেইশ নম্বর তৈলচিত্র উপন্যাসটির বিষয়বস্তু অবলম্বনে ‘বসুন্ধরা’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্ত। এ চলচ্চিত্রটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

তাঁর অন্যান্য উপন্যাসঃ ‘শীতের শেষরাত বসন্তের প্রথমদিন’ (১৯৬২), ‘ক্ষুধা ও আশা’ (১৯৬৪), ‘শ্যামল ছায়ার সংবাদ’ (১৯৮৬) উল্লেখযোগ্য।

নাটকের মধ্যেঃ ‘মরক্কোর যাদুকর’ (১৯৫৯), ‘মায়াবী প্রহর’ (১৯৬৩), ‘ধন্যবাদ’ (১৯৬৫), ‘নিঃশব্দ যাত্রা’ (১৯৭২), ‘নরকে লাল গোলাপ’ (১৯৭২) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

কাবগ্রন্থগুলির মধ্যেঃ ‘মানচিত্র’ (১৯৬১), ‘ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ’ (১৯৬২), ‘লেলিহান পান্ডুলিপি’ (১৯৭৫), ‘নিখোঁজ সনেটগুচ্ছ’ (১৯৮৩) ‘সাজঘর’ (১৯৯০) ও ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (১৯৮৭) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আলাউদ্দিন আল আজাদ ভাষা আন্দোলনের গণমুখী ও স্বদেশপ্রেমী সাহিত্যধারার লেখক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ তাঁকে প্রেরণাদীপ্ত দায়িত্ববান শিল্পীর ভূমিকা গ্রহণে উজ্জীবিত করে। মানুষ ও সমাজ আলাউদ্দিন আল আজাদের সাহিত্য ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু।

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আলাউদ্দিন আল আজাদ বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৪), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৪), জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার (১৯৭১), একুশে পদক (১৯৮৬), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক (১৯৯৪) উল্লেখযোগ্য।

২০০৯ সালের ৩ জুলাই তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৩২ সালের আজকের দিনে (৬ মে) নরসিংদী জেলার রায়পুর থানার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.