Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : অনরে দ্য বালজাক

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

ফরাসি বিপ্লবের পর ফরাসি ভাষায় কথাসাহিত্যের যে জোয়ার আসে, বলা যায় বালজাক তার ধারক ও বাহক। তাঁকে বলা হয় রিয়ালিজমের গুরু।

তিনি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রায় ১০০টি উপন্যাস রচনা করেছেন- যেগুলোকে তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। এই বিশাল রচনাভাণ্ডারকে একত্রে La Comédie Humaine বলা হয়। ১৮১৫ সালে নেপোলিয়ন বোনাপার্তের পতনের পর ফ্রান্সের জনগণের জীবনযাত্রার বাস্তবিক আখ্যান তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসগুলোতে।

রিয়ালিস্টিক লেখকদের রীতি অনুসারে তিনি তাঁর লেখায় সেসব নর-নারীর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন, যাঁরা সুস্থ জীবনের পথ থেকে নানা কারণে বিচ্যুত হয়েছেন। বিবাহিত জীবনে অসুখী, অপরিতৃপ্ত এবং সামান্য বিকৃত চরিত্রের নারীর দল তাঁর রচনায় বরাবরই ভিড় করেছে।

কিন্তু বালজাকের লেখায় বারবার অসুখী নারীদের উপস্থিতি কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর হলো, সম্ভবত তাঁর ব্যক্তিগত নারীপ্রেম ও নারীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি!

তারুণ্যের শুরুতে বালজাক প্রথম যে নারীর প্রেমে পড়েন, তা নিয়ে আছে মজার ঘটনা। ওই সময় বালজাকের মা খেয়াল করলেন, হঠাৎই তাঁর ছেলে সাজপোশাকের ব্যাপারে মনোযোগী হয়ে উঠছে, নিয়ম করে দুই বেলা সে পাশের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সে সময় ওই বাড়িতে থাকতেন মাদাম দ্য বার্নি। তাঁদের সামাজিক মর্যাদা ছিল অপেক্ষাকৃত উঁচুতে।
মা ভাবলেন, মাদাম দ্য বার্নির কিশোরী মেয়ের সঙ্গে বালজাকের বিয়ে হলে মন্দ হয় না- এতে তাঁর বংশের মর্যাদা বাড়বে। কিন্তু কয়েক দিন পর প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়লেন তিনি- মেয়ে নয়, বালজাকের ভালোবাসার পাত্রী মাদাম দ্য বার্নি নিজেই! বার্নি তখন নয় সন্তানের মা, বয়স ৪৫। বালজাককে বার্নি তাঁর ছেলের মতো গ্রহণ করেছিলেন।

নানাভাবে তাঁকে প্রবোধ দেওয়া হলেও কোনো ফল হলো না। এক প্রবল আদিম আকর্ষণ প্রৌঢ় হৃদয়ের দুর্বল প্রতিরোধ ভাসিয়ে নিল, বালজাকের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন বার্নি। সমাজের ধিক্কার তাঁদের প্রেমে ফাটল ধরাতে পারেনি। বার্নি যত দিন বেঁচে ছিলেন, বালজাক তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিয়েছেন।

বিবাহিত নারীদের প্রতি বালজাকের প্রেম কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ব্যক্তিগত জীবনে পরের দিকে তিনি যত মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন, তাঁরা সবাই পরিণত বয়সের বিবাহিত নারী। ফলে বিবাহিত নারীদের আশাহীন-সান্ত্বনাহীন জীবনের কথা তাঁর রচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। বালজাকের রচনা তৎকালীন নারী মহলে অভূতপূর্ব সমাদর লাভ করেছিল। জানা যায়, ইউরোপের সব দেশ থেকে ভক্ত-পাঠিকারা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিঠি দিতেন তাঁকে।

১৮৩২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইভলিন দ্য হানস্কা নামের এক অভিজাত পোলিশ রমণী বালজাকের প্রশংসা করে চিঠি লেখেন। ১৮৩৩ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁদের দেখা হয়। বালজাক গভীরভাবে হানস্কার প্রেমে পড়ে যান। হানস্কার স্বামী ছিলেন পোল্যান্ডের এক বড় ভূস্বামী, স্ত্রীর চেয়ে তিনি ছিলেন ২২ বছরের বড়। স্বামীর বন্ধন থেকে যখন মুক্ত হতে পারবেন, তখন বালজাককে বিয়ে করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন হানস্কা।

এ ক্ষেত্রে হানস্কা হয়তো এমনিতেই বালজাকের সঙ্গে চলে আসতে পারতেন, কিন্তু এভাবে এলে স্বামীর সম্পত্তি পাওয়া যাবে না, তাই থেকে গিয়েছিলেন। তাঁদের ভরসা ছিল, হানস্কার স্বামী অসুস্থ, অর্থাৎ যেকোনো মুহূর্তে তাঁর আয়ু শেষ হয়ে যেতে পারে। বলা চলে, এ ধরনের প্রতিশ্রুতির পর বালজাক প্রতি মুহূর্তেই হানস্কার স্বামীর মৃত্যু কামনা করতেন।

বিয়ের প্রস্তুতির জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা করে লিখতেন। এছাড়া নানা ধরনের ব্যবসার মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করতেন। কিন্তু তাঁর সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তিনি। অতিরিক্ত পরিশ্রমে তাঁর শরীর ভেঙে পড়ে।

১৮৪১ সালের নভেম্বর মাসে হানস্কার স্বামীর মৃত্যু হয়, তবে বালজাকের সঙ্গে তাঁর প্রত্যাশিত বিয়ে হয় ১৮৫০ সালের ১৪ মার্চ। এই বিয়ের জন্য বালজাককে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৮ বছর। তত দিনে পাত্রীর বয়স ৪৫ পার হয়ে গেছে আর পাত্রের ৫১ বছর। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বিবাহিত জীবনের মাত্র দুই মাস অতিক্রান্ত না হতেই মারা যান বালজাক!

১৮৫০ সালের ১৮ আগস্ট মৃত্যু হয় বালজাকের।

অনরে দ্য বালজাক ১৭৯৯ সালের আজকের দিনে (২০ মে) ফ্রান্সের তুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.