Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে দুই মেট্রিক টন সিলিকন জেলযুক্ত চিংড়ি উদ্ধার, আড়াই লাখ টাকা জরিমানা

মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা

0

প্রতিবেদক :
যশোরে র‌্যাবের অভিযানে দুই মেট্রিক টন সিলিকন জেলযুক্ত চিংড়ি উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাতে যশোরের র‌্যাব সদস্যরা শহরের বাহাদুরপুরে অভিযান চালিয়ে চিংড়িভর্তি তিনটি ট্রাক জব্দ করে। পরে সেখানে মৎস্য অধিদপ্তর খুলনার সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই মেট্রিকটন চিংড়ি উদ্ধারসহ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

তিন ট্রাক চিংড়ি জব্দের ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। শত শত উৎসুক জনতা ভিড় করে জব্দকৃত চিংড়ি দেখার জন্য। চোখের সামনে চিংড়ির দেহ থেকে জেল বের হতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, জীবনে প্রথম এমন দৃশ্য দেখলাম। এভাবে আমাদের বিষ খাওয়ানো হচ্ছে। সরকারের উচিত এমন জঘন্য কাজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা।

স্থানীয় চা দোকানি আলম হোসেন বলেন, মানুষের জীবনের আর কোনো মূল্য নেই। এইসব ভেজাল খেয়েই আমরা অসুস্থ হয়ে পরছি। তিনি আরও বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ এতকিছু বুঝিনা, আমরা ভেজালমুক্ত দেশ চাই আর সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি যারা এভাবে মানুষকে ঠকিয়ে রাতারাতি বড়লোক হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।

অভিযানের বিষয়ে র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এম নাজিউর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি খুলনার ডুমুরিয়া ফুলতলা শাহাপুর থেকে তিন ট্রাক বোঝাই সিলিকন জেলযুক্ত চিংড়ি ঢাকা কারওরান বাজার ও আব্দুল্লাহপুর যাচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি চৌকস দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে ট্রাক তিনটি যশোর-মাগুরা মহাসড়কের বাহাদুরপুর আসলে আটক করে খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়। তারা এসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন ট্রাক চিংড়ির মধ্যে ৬১ কার্টুনে দুই মেট্রিক টন চিংড়িতে সিলিকন জেলের উপস্থিতি শনাক্ত করে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। পরে আদালতের মাধ্যমে তিনটি ট্রাকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যা চিংড়ির মালিকদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত চিংড়ি মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তার উপস্থিতে বিনষ্ট করা হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, আমাদের দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী স্থানীয় বাজারে চিংড়ি সরবারহের জন্য অসাধু উপায়ে ওজন বৃদ্ধি করছে যা আইনগত অপরাধ। আমরা দীর্ঘদিন যাবত এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় এবং র‌্যাব-৬ যশোরের সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তিনি সিলিকন জেলের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, চিংড়ির দেহে যা পুশ করা হচ্ছে তাতে ক্রেতারা শুধু ওজনের দিক থেকে ঠকছেন তা নয়। এসব জেল মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে বড় ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে অর্থে এটি ‘স্লো-পয়জনিং’-এর পর্যায়ে পড়ে। অর্থাৎ এসব মাছ ব্যবসায়ী নীরব ঘাতকের ভূমিকা নিয়ে অগণিত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এক কেজি চিংড়িতে ২৫০ গ্রাম জেল পুশ করা হচ্ছে। এতে প্রতি কেজিতে বিক্রেতা ১০০ টাকা বেশি পাচ্ছেন। এসব চিংড়ির প্রায় সবই জেলযুক্ত। ভাতের মাড় ও আরও কয়েক প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের এই জেল তৈরি করা হয়। সিরিঞ্জ দিয়ে ওই জেল চিংড়ির মাথায় পুশ করা হয়।

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক আশেকুর রহমান বলেন, চিংড়িতে ব্যবহৃত এই জেলটি মূলত সিজারিয়ান অপারেশনের পর রোগীর ক্ষত ঢাকতে ব্যবহার করা হয়। যা সিলিকন জেল নামে পরিচিত। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যে কেউ এগুলো কিনতে পারে। চিংড়িতে ব্যবহৃত এসব জেল জীবননাশী। এগুলো মানুষের চোখ, কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। ধীরে ধীরে মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে থাকে এতে। এটা তো খাদ্য উপাদান নয়, পেটে গেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও হতে পারে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.