Take a fresh look at your lifestyle.

শয্যাশায়ী পত্রিকা হকার শফির ইচ্ছাপূরণ করলেন ইউএনও

0

প্রতিবেদক :
যশোরের চৌগাছা শহরে ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন পত্রিকা বিক্রি করতেন। সম্প্রতি ব্রেন স্টোকে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী শফিকুল ইসলাম শফি (৬৫)। চিকিৎসাব্যয় বহন করতে গিয়ে পথে বসার উপক্রম তার। গত আগস্টে স্ত্রীও মারা গেছেন। দুই সন্তানকে (সম্মান প্রথম বর্ষ ও চতুর্থ শ্রেণী পড়ুয়া) নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তার ইচ্ছা ছিল একটা নতুন হুইল চেয়ার প্রাপ্তির। খবর পেয়ে আজ রোববার (২২ মে) চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের হুদা ফতেপুর গ্রামের বাড়িতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। তিনি একটি হুইল চেয়ার প্রদান করেন শফিকুল ইসলাম শফিকে। তার ইচ্ছা পূরণ করায় খুবই খুশি হন। একইসাথে তার এই সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশের আব্দার জানান।

জানা যায়, ২০২০ সালের শেষদিকে ব্রেন স্ট্রোক করেন শফি। সহায় সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা করে পরিবার। বিছানাধারী হয়ে পড়েন শফি। সারাদিন শুয়ে থাকেন মাটি-চাটাই-টিনের ঝুপড়ি ঘরের বারান্দার একটি চৌকিতে। বাম হাত একেবারেই অকেজো। কোনোভাবেই নিজে চলাচল করতে পারেন না তিনি। কলেজে এইচএসসি পড়া ছেলেকে নামতে হয় দিনমজুরিতে। পত্রিকা বিক্রিও করোনায় একেবারেই কমে গেলে মজুরি ছাড়া আর উপায়ও ছিল না এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেটির। ছেলের মজুরিতে স্ত্রীর সেবায় শফির চিকিৎসা চলছিল কোনোভাবে। তবে সেই স্ত্রীও শফিকে ছেড়ে যান ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট। একেবারেই অসহায় অবস্থা। সদ্য এইচএসসি পাশ ছেলে আর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া মেয়ে বাবাকে নিয়ে কি করবে? তবুও দমে না যেয়ে ছেলে মজুরি করতে থাকে পরের খেতে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া ছোট বোনকে বাড়িতে রেখে ছেলেটি যায় পরের খেতে মজুরি দিতে। দিন শেষে সন্ধ্যায় এসে বাবাকে প্রশ্রাব-মলত্যাগ করিয়ে খাইয়ে আবারও শুইয়ে দেন। রাতে বাবার বাথরুম করায় ছেলে নিজেই। ছোটবোনটিকেও আগলে রাখেন। তবে ঘরে কিছু খাবার থাকলেও দিনে বাবাকে খাওয়াতে পারেন না, খাওয়ার পর বাথরুমে নেবে কে এই ভয়ে। শফির ছোট্ট মেয়েটি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়, মাঝে মধ্যে নিজে রান্না করে খায়। আর বারান্দায় শুয়ে থাকা বাবাকে চৌকি দেয়। শফির খুব ইচ্ছা একটি হুইল চেয়ার হলে অন্তত বসে থাকতে পারতো দিনে কিছু সময়। বা শেষ জীবনে একটু ঘুরে বেড়াতে পারতেন।

বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ পান চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। চৌগাছা সমিতি-ঢাকা গত ঈদ উল ফিতরের পরদিন উপজেলার শতাধিক ব্যক্তিকে হুইল চেয়ার প্রদান করে। তার মধ্যে একটি চেয়ার ছিল ইউএনওর কাছে। তিনি রোববার বিকেলে সেটা নিয়ে পৌঁছান শফির বাড়িতে। হুইল চেয়ার খুলে বের করতেই শফি আনন্দে কেঁদে ফেলেন। কানে না শোনা শফি জোরে জোরে বলতে থাকেন এটা আমার জন্য! ইচ্ছা প্রকাশ করেন সেটিতে ওঠার জন্য। ইউএনওর নির্দেশে আনসার সদস্য ও গাড়িচালক সেলিম ও স্থানীয় একব্যক্তির সহায়তায় হুইল চেয়ারে ওঠানো হয়। শফি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না এটি তার জন্য। কানের গোড়ায় যেয়ে জোরে ইউএনও এসেছেন এটি নিয়ে বলতেই শুনে হাত উপরে তুলে এটেনশনের মতো করে সালাম দেন ইউএনওকে। শুরু হয়ে যায় শফির জোরে জোরে কান্না। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন ইউএনওর জন্য। ইচ্ছা পোষণ করেন তাকে একটু উঠানে নামানোর জন্য। আনসার ও গাড়িচালক সেলিমের সহায়তায় নামানো হয় উঠানে। দেখিয়ে দেয়া হয় নিজেই চালাতে পারবেন হুইল চেয়ার। শফি আবেগে জোরে জোরে কেঁদে ফেলেন। বলতে থাকেন আমি নিজেই ঘুরতে পারবো, নিজেই চালাতে পারবো। মেয়ে পিছনে ধরে রাখবে। আবেগে কেঁদে কেঁদে ইউএনওকে জানান, আমার এই মেয়ে গালে তুলে খাওয়ায়। ওর মা মারা গেছে গতবছর আগস্টের ১৫ তারিখে। উপরে আল্লাহ আছেন, তিনি আপনার ভালো করুন। দীর্ঘজীবি করুন।

সর্বশেষ যখন ইউএনও বিদায় নিতে চান শফিকে আবারও তুলে দেয়া হয় তার শোবার বারান্দায়। তখন শফি বলতে থাকেন এটা পত্রিকায় ছাপা হবে না? পত্রিকায় ছাপা হবে না? বলা হয় অসুবিধা নেই। ছাপা হবে। শফির আবদার আমাকে একটা পত্রিকা পাঠিয়ে দিতে হবে। ইউএনও আশ্বাস দেন পত্রিকা পাঠিয়ে দেয়া হবে। আরও বলেন ছেলে আসলে তার অফিসে যেয়ে দেখা করার জন্য।

Leave A Reply

Your email address will not be published.