Take a fresh look at your lifestyle.

কাজী নজরুল- বাঙালির বাতিঘর

0

শ্রাবণী সুর :
বাংলাদেশর জাতীয় কবি কাজী নজরুলের জন্মদিন ও মৃত্যুদিন যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে থাকে। এবারও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হবে কবির ১২৪তম জন্মদিন।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম জনপ্রিয় অগ্রণী বাঙালি কবি। তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক (ঔপন্যাসিক ও গল্পলেখক), গীতিকার ও শিল্পী, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং একজন সক্রিয় সৈনিক হিসেবে সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বদা- সর্বদা ছিলেন সোচ্চার। তাঁর লেখা ইসলামি গান ও শ্যামাসংগীত কীর্ত্তন বাংলাসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে। তিনি বাংলা কবিতায় অগ্রণী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার অগ্রনায়ক হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি বাংলা কবিতা তথা বাংলাসাহিত্য সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অগ্রগণ্য।

বাঙালি মনীষীর এক অনন্য নিদর্শন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বাংলাভাষার অন্যতম সেরা কবি, প্রেমের কবি সুন্দরের কবি মানুষের কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা-গান, গল্প-উপন্যাস সমানভাবে সমাদৃত ও পাঠ্য। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী ভাবধারার কারণে তাঁকে ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার-অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।

বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যধারায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় তার ছিল অবাধ বিচরণ। যুদ্ধের ময়দানেও তিনি লেখনির মাধ্যমেও তার প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর অসংখ্য কবিতা-গানে তা প্রতিফলিতও হয়েছে। বলা হয়, অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো ছিল তাঁর প্রকাশ। তিনি যেমন লেখাতে বিদ্রোহী ছিলেন, তেমনি ব্যক্তিজীবনে ও কাজে-কর্মেও ছিলেন আপোষহীন। এটাই ‘বিদ্রোহী কবি’র সার্থকতা।
এক হাতে বাঁকা বাশের বাঁশরী
আর এক হাতে রণতূর্য….

কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৯৯ সালের ২৫ মে ইংরাজি, বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ব্লকে ছিল চুরুলিয়া গ্রাম। কবির পিতামহ কাজী আমিন উল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ৬ষ্ঠ সন্তান কবি। পিতা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং পাশের মাজারের খাদেম। নজরুলের তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড় কাজী সাহেবজান ও কনিষ্ঠ বোন উম্মে কুলসুম। দুঃখের সংসারে জন্মেছিলেন বলে কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। ছেলেবেলায় কবি নজরুল গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজও করেন। পাশাপাশি তিনি মক্তবে কুরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ল তার বয়স মাত্র নয় বছর। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তাঁর শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য তাঁকে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হয়। বাবার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন। যা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ঐতিহ্যের সার্থক ব্যবহারে এ সম্পৃক্ততা খুব ফলপ্রসূ হয়েছে।

শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যে জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করেছেন কবি। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভা শুধু সাহিত্য কিংবা সংগীতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। অবিভক্ত বাংলার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। উপনিবেশিক শাসনামলে পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজী নজরুল ইসলাম অসামান্য খ্যাতি অর্জন করেন। তার সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নবযুগ, লাঙল, ধূমকেতু ইত্যাদি।

ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলার সংবাদপত্রের ইতিহাসে নবযুগ এক উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, ক্রমাম্বয়ে পত্রিকাটি বাঙালি জাতীয়তাবাদের মুখপত্রে পরিণত হয়। নবযুগের মাধ্যমেই কবির সঙ্গে সাংবাদিকতা জীবনের যোগসূত্র স্থাপিত হয়। বলা চলে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় নবযুগ দিয়েই। আবার তার সাংবাদিকতার পরিসমাপ্তি ঘটে নবযুগেই।

১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।যুদ্ধ শেষে কবি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর থেকে তিনি বাকরুদ্ধ জীবন যাপন করেন। শোনা যায় ১৯৪১ সালে হাজী মোহম্মদ মহসীনের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তাকে শেষ বক্তৃতা করতে দেখা যায়।তারপর তার নিথর নীরব করুণ চাহনি নিয়ে কেটেছে দীর্ঘকাল।

১৯৭২ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের উদ্যোগে মানবতার কবি নজরুল কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আসেন। কাজী নজরুল ইসলামকে তাঁর ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল।১৯৭৬ সালের ২৯ জুলাই অনন্তলোকে পাড়ি দেন।

আজকের দুঃসময়ে নজরুলের সাহিত্য চর্চা খুব দরকার। অসাম্প্রদায়িক মৌলবাদবিরোধী মানুষের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে মানুষের জয়গান ধ্বনিত হোক। বাজুক প্রাণে প্রাণে
মোরা একবৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান।।

লেখক সংস্কৃতিকর্মী

Leave A Reply

Your email address will not be published.