বাবলু ভট্টাচার্য :
কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও প্রকাশক, তিনটি পরিচয়েই পরিচিত মঈনুল আহসান সাবের।
পৈতৃক ভিটে পিরোজপুর। তবে, যদিও প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বাংলাদেশের প্রায় পুরোটাই ঘুরেছেন, ওই পিরোজপুরেই তার যাওয়া হয়নি। সম্ভবত যাবেনও না, বাবার ফেলে আসা জায়গাটা ভূমিহীন সাবের কল্পনায় সাজিয়ে রেখেছেন।
লেখাপড়া করেছেন গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল। ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজবিজ্ঞানে এম এস এস। তবে, পুরনো কথা যদিও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাকে যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান চত্বর।
বাবা কবি আহসান হাবিব। সাবের ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে বইয়ের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন।
কলেজ জীবন থেকেই লেখালেখি করতে শুরু করেন। কিন্তু সাংবাদিক বাবার কারণে ছোটবেলাতেই এই পেশার প্রতি টান তৈরি হয়। পরবর্তীতে পেশা হিসাবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেন। লেখালেখি করছেন গত কয়েক দশক জুড়ে। প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় উপন্যাস, ছোটগল্প, কিশোর উপন্যাস।
তার বেশ কয়েকটি লেখা নিয়ে টেলিভিশন নাটকও তৈরি হয়েছে।
বড়দের জন্য লেখালেখির শুরু ১৯৭৪ সালে। একই বছর ২৮ জুন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ছাপা হয়েছিল প্রথম গল্প ‘মোহনী তমসা’। তখন তিনি এইচএসসির প্রথম বর্ষের ছাত্র। তারপর বিরতিহীন ও বিরতিসহ লেখালেখি। গল্প, উপন্যাস, কিশোর রচনা, অনুবাদ, রূপান্তর- সব মিলিয়ে বই বোধহয় একশ ছাড়িয়েছে। সংখ্যাটা হয়তো বেশিই। প্রথম বই গল্পগ্রন্থ ‘পরাস্ত সহিস’ বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে।
যে মধ্যবিত্ত সমাজে তার বেড়ে ওঠা, সেই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, বেদনা, বঞ্চনা, প্রতারণা তাঁর লেখায় ঘুরে ফিরে এসেছে।
এক সাক্ষাৎকারে সাবের বলেন- ”এই সমাজেই আমি বেড়ে উঠেছি। যখন লেখালেখি শুরু, তখন সদ্য স্বাধীন একটি দেশে নতুন মধ্যবিত্ত একটি সমাজ বিকশিত হচ্ছে। তাদের নিয়ে লেখতে দিয়ে দেখি একধরণের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। কারণ এই মানুষগুলোকে আমি চিনি।”
কখনো কখনো লেখকের ব্যক্তি জীবনের অনেক গল্পও লেখায় এসেছে। তা হয়তো পাঠকের পক্ষে ধরা সম্ভব না।
এক সময়ে তার মনে হলো, বাংলাদেশে এখনো বহু ধরণের বই বাকি আছে, যেসব বই কেউ প্রকাশ করছে না। হাতে কিছু টাকাও ছিল। আবার নিজের বাবাও একবার প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। এসব কারণ মিলে তিনি প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেন।
বন্ধুদের সংখ্যা খুব কম। একা থাকতে ভালোবাসেন। নির্জনতা প্রিয়, ভ্রমণ ভালো লাগে। আবার ইচ্ছা করলে ঘরেও দিনের পর দিন পার করে দিতে পারেন।
পুরস্কার পেয়েছেন বেশ কয়েকটি। বাপী শাহরিয়ার শিশু সাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপ্স পুরস্কার এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার। তবে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা, তা হলো- তিনি অর্জন করেছেন বিমুগ্ধ পাঠক ও ঋদ্ধ সমালোচক।
মঈনুল আহসান সাবের ১৯৫৮ সালের আজকের দিনে (২৬ মে) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব