Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিন স্মরণ : হুমায়ুন ফরিদী

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

‘মহিলা সমিতির সামনে ছোটখাট একটা জটলা। এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, এক যুবক চা খাচ্ছে- আর একদল যুবক তাকে ঘিরে ধরে চা খাওয়া দেখছে, যুবকটি হুমায়ুন ফরিদী। আমার এই বইটি সেই যুবককে উৎসর্গ করলাম।’ -হুমায়ুন আহমেদ তাঁর একটি বইয়ের উৎসর্গপত্রে এমনটিই লিখেছেন।

হুমায়ুন ফরিদীর বাবা এ টি এম নুরুল ইসলাম ছিলেন জুরী বোর্ডের কর্মকর্তা। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে ফরিদীকে মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুরসহ অসংখ্য জেলায় ঘুরতে হয়েছে। মা বেগম ফরিদা ইসলাম গৃহিনী।

প্রাথমিক শিক্ষা নিজ গ্রাম কালীগঞ্জে। মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুল পাস দিয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন। এলো একাত্তুর, চলে গেলেন যুদ্ধে। শেষে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স করলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল দীনের সংস্পর্শে আসেন। এই ক্যাম্পাসেই ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক লিখে নির্দেশনা দেন এবং অভিনয়ও করেন ফরিদী।

ছাত্রাবস্থায়ই ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হন। জড়িয়ে যান মঞ্চের সাথে। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাঙালির নিজস্ব নাট্য আঙ্গিক গঠনে গ্রাম থিয়েটারের ভূমিকা ছিল অসামান্য, ফরিদী এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে তিনি সিনেমার রূপালি জগতে পা বাড়ান।

সেলিম আল দীনের ‘সংবাদ কার্টুন’-এ একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করে ফরিদী মঞ্চে উঠে আসেন। মঞ্চে তাঁর অভিনীত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘শকুন্তলা’, ‘ফনিমনসা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘মুন্তাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। ১৯৯০ সালে স্ব-নির্দেশিত ‘ভূত’ দিয়ে শেষ হয় ফরিদীর ঢাকা থিয়েটারের জীবন।

আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’ ফরিদীর অভিনীত প্রথম টেলিভিশন নাটক। আশির দশকের দর্শকদের নিশ্চয়ই বিটিভি’র ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’ (৮৩) তে সেরাজ তালুকদারের কথা মনে আছে। এরপর শহীদুল্লাহ কায়সারের ‘সংশপ্তক’ (৮৭-৮৮)-এ ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রে-ফরিদীর অনবদ্য অভিনয় কেউ ভোলেনি।

‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘একটি লাল শাড়ি’, ‘নীল নকশার সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘বকুলপুর কতদূর’’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘ও যাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘কাছের মানুষ’, ‘কোথাও কেউ নাই’, ‘মোহনা’, ‘ভবেরহাট’, ‘জহুরা’, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস’, ‘প্রতিধ্বনি’, ‘শৃঙ্খল’, ‘প্রিয়জন নিবাস’, ‘অক্টোপাস’, ‘আরমান ভাই দ্য জেন্টেলম্যান’- আরো অনেক নাটকে বিরামহীনভাবে দর্শকদের হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন।

নব্বুইয়ের গোড়া থেকেই হুমায়ুন ফরিদীর বড় পর্দার জীবন শুরু হয়। বাণিজ্যিক আর বিকল্প ধারা মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ছবি তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’। এরপর তাঁর অভিনীত সিনেমার মধ্যে ‘সন্ত্রাস’, ‘বীরপুরুষ’, ‘দিনমজুর’, ‘লড়াকু’, ‘দহন,’ দুর্জয়, ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘কন্যাদান’, ‘আঞ্জুমান’, ‘বিচার হবে’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শুধু তুমি’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘একাত্তুরের যীশু’, ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’, ‘মিথ্যার মৃত্যু’. ‘বিদ্রোহ চারিদিকে, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘রূপকথার গল্প’, ‘আহা!’, ‘প্রিয়তমেষু’, ‘মেহেরজান’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

নায়ক-খলনায়ক দু-চরিত্রেই তিনি ছিলেন সাবলীল, এক কথায় ভার্সেটাইল। এক সময়ে মানুষ আর নায়ককে না, এক ভিলেনকে দেখতেই হলে যেতেন। সেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী খলনায়ক ফরিদী। প্রায় দেড় দশক তিনি দর্শকদের চুম্বকের মতো সিনেমা হলে আটকে রাখেন।

নাটকে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি মেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননা। আর ২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ ছবিতে সেরা অভিনেতা হিসাবে পান ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে কিছুদিন অতিথি শিক্ষক হিসাবেও পাঠদান করেন।

২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ৫৯ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

হুমায়ুন ফরিদী ১৯৫২ সালের আজকের দিনে (২৯ মে) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.