প্রতিবেদক :
যশোরের বাঘারপাড়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষীদের জীবননাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বাঘারপাড়া থানায় তিনটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। রজব আলী বিশ্বাস হত্যার বাদী খলিলুর রহমান খোকন গত ২৭ মে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেছেন। এর একদিন পরেই ২৮ মে ময়েন উদ্দিন ওরফে ময়না হত্যার সাক্ষী আফসার উদ্দীন ও আলা উদ্দীন আরও দুটি জিডি করেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও জিডি সূত্র মতে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের পার করে দেয়ার কারণে মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালী বাজার ঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ধরে নিয়ে যায়। পরে প্রেমচারা গ্রামের চিনারাশি আমবাগানে নিয়ে রজব আলী বিশ্বাসকে জবাই করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে খলিলুর রহমান খোকন মাগুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শালিখা আমলী আদালতে মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রেরণ করা হয়। তখন থেকেই আমজাদের পরিবারের সদস্য ও তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন সময় বাদী ও সাক্ষীদের হুমকি দিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান খোকন বলেন, গত ২২ মে সকালে প্রেমচারাতে আত্মীয় বাড়ি থেকে ফেরার সময় চাঁদপুর গ্রামের জনৈক রিজাউল মোল্যার বাড়ির সামনে আমজাদ রাজাকারের ভাড়াটে লোক তরিকুল আনোয়ার টুটুলের নেতৃত্বে তার ভাগ্নে জাহিদুল ইসলাম, ছেলে আনোয়ার হোসেন খোকন, ছোটভাই মাসুম বিল্লাহসহ কয়েকজন তাকে গালিগালাজ করে। মামলা তুলে না নিলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। আমার চিৎকারে স্থানীয়রা চলে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে আমি বাঘারপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।
জিডিতে একই অভিযোগ করেছে উত্তর চাঁদপুর গ্রামের ময়েনউদ্দিন ওরফে ময়না হত্যার সাক্ষী আফসার উদ্দীন ও আলা উদ্দীন। তারা জানান, ১৯৭১ সালের ৩ ভাদ্র দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাঘারপাড়া থানার উত্তর চাঁদপুর গ্রামের ময়েনউদ্দিন ওরফে ময়নাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায় আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা। সেখানে তিনদিন আটক রেখে নির্যাতন করে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে আমজাদ হোসেন মোল্লা গুলি করে হত্যা করে ময়নাকে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী।
আমজাদ রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
– বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দীন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাক্ষী দেয়ায় ভাড়াটে মাস্তান টুটুলের নেতৃত্বে আমজাদ রাজাকারের ছেলে ও ভাগ্নে আমাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। সর্বশেষ গত ১৮ মে আমাদের বাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। আমরা এই মামলায় সাক্ষী দিলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাঘারপাড়া থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি। ময়েন হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী আফসার উদ্দীন বলেন, আমজাদ রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে যেয়ে বাঘারপাড়ায় তফসির মোল্যাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমিও এখন শঙ্কায় রয়েছি।
এ বিষয়ে বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দীন জানান, আমজাদ রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।