Take a fresh look at your lifestyle.

শুভ জন্মদিন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

শুরুটা হয়েছিলো ১৯৭০ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ চলচ্চিত্র থেকে। চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো এক তরুণ যুবা, হতাশার সাথে সে নিত্য অভ্যস্ত। তবু চাকরির ভাইভা বোর্ডে গিয়ে সে নিজের চিন্তা-ভাবনা বা মতাদর্শের সাথে আপোস করতে পারে না। ভেতরে ভেতরে কিছুটা চাপা আগুনের দেখা মিললেও তার কখনো বহিঃপ্রকাশ ঘটে না। তার চোখেমুখে চাপা ক্ষোভ সবসময়ই
লক্ষ্য করা যায়।

ধৃতিমানের মুখাবয়বের যে প্রয়োজনীয় কাঠিন্য, তা যেন চরিত্রটির জন্য পুরোপুরি মানানসই ছিল। প্রত্যাখ্যাত হতে হতে একটা সময় এমন আসে, যখন ব্যক্তি আর অবাক হয় না, সেই অভ্যস্ততাটি তিনি অনেক সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার চেহারায় ও চলনে।

ধৃতিমান চ্যাটার্জী নামে তাকে বেশি চেনা গেলেও তার প্রকৃত নাম ‘সুন্দর চ্যাটার্জী’।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থিয়েটারের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং তার পরবর্তী অভিনয়জীবনের জন্যও তিনি সেই নির্দিষ্ট সময়ের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। সে সময় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন ধৃতিমান। তার পিতার ছবি তোলার শখ ছিল এবং তার বেশ কিছু ক্যামেরাও ছিল। সে থেকেই যেন ক্যামেরার প্রতি এক দুর্বার আকর্ষণ কাজ করতো ধৃতিমানের।

বাবা-মা দুজনেই ছিলেন ফিল্ম সোসাইটির সদস্য। তার মতে, তখন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজের সংস্কৃতির সাথে সিনেমার সম্পর্ক ঠিক সাহিত্যের মতোই ছিল। তাই সিনেমার সাথে জড়িয়ে পড়া খুব একটা কাকতালীয় ছিল না তার জন্য।

বাংলা থেকে শুরু করে হিন্দি, ইংরেজি, সিংহলি ভাষাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

তিনি অভিনয় করেছেন হলিউডের সিনেমাতেও। ‘হলি স্মোক’ সিনেমায় তাকে দেখা যায় অভিনেত্রী কেট উইন্সলেটের সাথে। এদিকে টালিউডের সাথে বলিউডে তার দৃপ্ত পদচারণা তো রয়েছেই।

বলিউডে করা তার প্রথম সিনেমা ‘ব্ল্যাক’, এতে মিশেলের পিতার চরিত্রে তার দৃঢ় অভিনয় সিনেমাটিতে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছিল। এছাড়াও বলিউডে তাকে দেখা গিয়েছে ‘কাহানি’, ‘এজেন্ট বিনোদ’, ‘পিংক’ চলচ্চিত্রে।

কাজের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিকতাই তার প্রথম পছন্দ ও স্বভাব। কখনো নিজেকে একটি ক্ষেত্রে আটকে রাখেননি তিনি। বিজ্ঞাপন, অভিনয়, চলচ্চিত্র নির্মাণ, শখের ফটোগ্রাফি- সবকিছুতেই মেতে থাকতে ভালোবাসেন ধৃতিমান।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি কলকাতার অল ইন্ডিয়া রেডিওর খণ্ডকালীন ঘোষক হিসেবে কাজ করেন। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের সাথে যুক্ত হন ধৃতিমান। বর্তমানে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড জুরির একজন সদস্য তিনি।

তিনি কখনো বাণিজ্যিক ধারার সিনেমার প্রতি ঝোঁকেননি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে সবসময় নিজের পছন্দকে স্থান দিয়েছেন তিনি, প্রয়োজনকে নয়। তাই সমান্তরাল ধারার সিনেমাতেই তার দৃপ্ত পদচারণা লক্ষ্য করা যায়।

‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিতে অভিনয়ের কিছুদিন পর মৃণাল সেন ‘পদাতিক’ সিনেমার পরিকল্পনা হাতে নিয়েই মূল চরিত্রে ধৃতিমানকে নিলেন। বেশ কয়েক বছর পর শুরু হলো ‘আকালের সন্ধানে’ সিনেমার কাজ।

ধৃতিমানের মতে, এটিই তার এত বছরের ক্যারিয়ারে একমাত্র সিনেমা, যার মূল চরিত্রে অভিনয় করবার জন্য তিনি নিজে পরিচালককে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এই সিনেমার মূল চরিত্র অর্থাৎ পরিচালকের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন, সাথে ছিলেন স্মিতা পাতিল।

অভিনয়ের চেয়ে সিনেমা বানানোর প্রতি তার ঝোঁক অনেক বেশি ছিল সবসময়ই। এমনকি সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনদের সাথে তিনি কাজ করতেন অভিনয়ের জন্য নয়, তাদের পরিচালনার কাজ কাছ থেকে দেখবার জন্য।

অভিনয়ে অসামান্য পারদর্শিতা তাকে দিয়েছে দক্ষ অভিনেতার তকমা। এবং এখনও তিনি থেমে নেই। মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে ‘নকশাল’ সিনেমায় তাকে দেখা যায় বেশ নেতিবাচক ও শক্তিশালী একটি চরিত্রে।

অপর্ণা সেনের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব, একসাথে পড়াশোনাও করেছেন। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’ এও ধৃতিমান অভিনয় করেন। নিজের চেয়ে অনেক কমবয়সী অভিনেত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে প্রথমে কিছুটা ইতস্তত বোধ করলেও দক্ষতার জোরে তিনি সে যাত্রাও ভালোমতেই উতরে যান।

সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের সঙ্গে অভিনয়ের বদৌলতেই বেশ ঘনিষ্ঠতা তার। সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় ধৃতিমানকে দেখা গেছে প্রফেসর শঙ্কুর চরিত্রে। সত্যজিতের সৃষ্টি করা অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র এটি। ২০১৮ সালের শেষের দিকে ‘প্রফেসর
শঙ্কু ও এল ডোরাডো’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে।

ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় ১৯৪৫ সালের আজকের দিনে (৩০ মে) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.