Take a fresh look at your lifestyle.

দুই দিনেও যশোরে কঙ্কাল রহস্যের জট খোলেনি

প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন

0

প্রতিবেদক :
যশোরে বাড়ি নির্মাণে খননকালে ড্রামের ভিতর উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটির রহস্যের জট খোলেনি দুই দিনেও। পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ রেজাল্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার কঙ্কালটির ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার কঙ্কালটির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে যশোর আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে। কঙ্কালটির পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ রেজাল্টের পাশাপাশি পুলিশ যশোরে সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সাথেও কথা বলছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন থানায় নিখোঁজদের জিডির বিষয়ে অনুসন্ধানে বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এদিকে, এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। যশোর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বাবুল কিশোর সাহাকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ ও ডা. আব্দুর রশিদ।

সোমবার (৩০ মে) দুপুরে যশোর শহরের কাজীপাড়া নিরিবিলি এলাকায় একটি জমিতে বাড়ি নির্মানের জন্য খননকালে একটি ড্রাম থেকে কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকার বজলুর রহমান আড়াই বছর আগে একটি জমি কেনেন। ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছিল। সোমবার পাইলিং করতে গিয়ে মাটির নিচে একটি ড্রামের সন্ধান পান শ্রমিকেরা। পরে তারা পুলিশকে খবর দিলে ড্রাম খুলে মানুষের কঙ্কাল বের করে। আর পুলিশ বলছে, নিহত ব্যক্তি পুরুষ না নারী তা শনাক্ত করা যায়নি। হত্যার পর গুমের উদ্দেশ্যে হত্যাকারীরা লাশ ড্রামে রেখে পুঁতে রাখে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যাবে নিহত ব্যক্তি পুরুষ না নারী।

উদ্ধারকৃত কঙ্কাল, ফাইল ছবি

এদিকে, হঠাৎ করে ঐ এলাকায় মানুষের কঙ্কাল পাওয়ার খবরে এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন ঐ কঙ্কালে পরিণত হওয়া মানুষটি কে! কি তার পরিচয় বা কিভাবে কারা করলো এই ঘটনা। যে জায়গায় গত ৪ দিন ধরে ভবন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছিল; সেখানে সব কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি নির্মাণ শ্রমিকদের সকল যন্ত্রপাতি এবং অস্থায়ীভাবে থাকার জন্য ঘরও ভেঙ্গে নিয়ে গেছেন তারা। স্থানীয়রা জানিয়েছে, ঐ এলাকায় জনসাধারণের চলাচলও কমে গেছে।

স্থানীয় বয়োজৈষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা ডা. ইউসুফ জানান, এই এলাকায় গত ৮-১০ বছরে কোনো মানুষ নিখোঁজ হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। এখানে বাড়ি নির্মাণের জন্য ৪ দিন ৮-১০ জন করে কাজ করতো। কিন্তু মাটি খুড়ে কঙ্কাল পাওয়ার ফলে সব কর্মযজ্ঞ বন্ধ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে শ্মশান হয়ে গেছে।

যশোর কোতয়ালি মডেল থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, কাজীপাড়া নিরিবিলি এলাকার আজিজুর রহমান বুকড়ার জামাই মশিউর রহমান ২০১৪ সালে একই এলাকার মৃত আব্দুল বারীর ছেলে শেখ আব্দুল মুত্তালিবের কাছ থেকে কয়েক শতক জমি কেনেন। কিন্তু তিনি রেজিস্ট্রি করে নেননি। তিনি ওই জমিতে রিংস্লাব বসিয়ে একটি কাঁচা বাথরুম নির্মাণ করেন। আড়াই বছর আগে মশিউর রহমান শার্শা উপজেলার শাখারিপোতা গ্রামের বাসিন্দা গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা বজলুর রহমানের কাছে ওই জমি বিক্রি (রেজিস্ট্রি করে দেন প‚র্বের মালিক শেখ আব্দুল মুত্তালিব) করে দেন। সোমবার দুপুরে বজলুর রহমান বাড়ি নির্মাণের জন্য শ্রমিক দিয়ে সেখানে কাজ করাচ্ছিলেন। এ সময় জমিতে মাটি দিয়ে ঢাকা থাকা ওই কাঁচা কুয়ায় কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা ভেতরে নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামের সন্ধান পান। ড্রামের ভেতরে পাওয়া যায় অজ্ঞাত পরিচয় একজনের কঙ্কাল।

বুধবার এ বিষয়ে জমির মালিক বেনাপোল এলাকার বজলুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। তবে কঙ্কাল উদ্ধারের দিন তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আড়াই বছর আগে সোয়া চার শতক জমিটি তিনি পুরাতন কসবা এলাকার মোতালেব বাবুর কাছ থেকে কিনেছেন। কিছুদিন আগে তিনি এ জমিতে কাজ শুরু করেন। এরমাঝে শ্রমিকদের মাধ্যমে তিনি খবরটি জানতে পারেন। আর এই বিষয়ে যশোর কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, আমরা ধারণা করছি প্রায় ৪-৫ বছর আগে অজ্ঞাত পরিচয় ওই ব্যক্তি হত্যার শিকার হয়েছেন। কঙ্কাল ময়নাতদন্ত শেষে ডিএননের জন্য পাঠানো হয়েছে। রেজাল্ট আসলেই অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। সেইজন্য সবার অপেক্ষা করতে হবে। তবে তদন্ত চলমান রয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.