Take a fresh look at your lifestyle.

মেডিকেল শিক্ষার্থী অমির পরিবেশ কর্মী হয়ে ওঠার গল্প

0

প্রতিবেদক :
পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৫ জুন পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বাংলাদেশে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে তরুণদের মধ্যে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে একজন ফারিহা সুলতানা অমি। পেশায় মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী। হাতে স্টেথিস্কোপ আর গায়ে সাদা অ্যাপ্রোন জড়িয়েও তিনি ভাবেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। সামাজিক দায়িত্ববোধ তাকে দেয় পরিবেশ কর্মীর তকমা। যশোরের মেয়ে অমি। শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে (জামালপুর) এমবিবিএস, চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। এর বাইরে আরেকটি পরিচয় রয়েছে তার। জলবায়ু বিষয়ক সংগঠন ‘ব্রাইটার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ’ এর ভাইস চেয়ার এই তরুণী। ফ্রাইডেস ফর ফিউচারের ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবেও কাজ করেন।

অমির বেড়ে ওঠা যশোরেই। ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রতি ছিল আসক্তি। স্কুলের লাইব্রেরি থেকে বিভিন্ন বই সংগ্রহ করে পড়তেন। সেসব বই পড়তে পড়তেই একসময় প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। ভালো বিতার্কিকও ছিলেন অমি। স্কুল, কলেজে জলবায়ু বিষয়ক অনেক বিতর্কে অংশ নেন। তখনই বুঝতে পারেন, বাংলাদেশ জলবাযুর পরিবর্তনের ফলে প্রচুর পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপ‚রণের সেই ন্যায্য দাবি আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। নিজের দেশ, জলবায়ু আর পরিবেশ ভাবিয়ে তোলে অমিকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জলবায়ু আন্দোলন সম্পর্কে আরও বেশি জানার চেষ্টা করেন। আস্তে আস্তে জানার আগ্রহ আর কাজ করার আগ্রহ বাড়ে। এভাবেই পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে তার কাজের শুরু। ২০১৮ সাল থেকে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন অমি। বর্তমানে জীবনের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পরিবেশ আন্দোলন।

চিকিৎসাবিদ্যার কঠিন পড়াশোনার চাপ সামলে এই কাজগুলো করছেন অমি। অনেকটা নিজের সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই। পরিবেশ আন্দোলনে কাকে অনুসরণ করেন জানতে চাইলে অমি বলেন, ‘সত্যি বলতে সেভাবে কোনো ব্যক্তিকেই অনুসরণ করা হয় না। তবে বেশকিছু মানুষের কাজ খুবই অনুপ্রেরণা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ।’ কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন সংকটে পড়তে হয় এই তরুণীকে। বিশেষত দক্ষতা বৃদ্ধি ও আর্থিক সহায়তার ব্যাপারগুলোতে তরুণরা পিছিয়ে আছেন বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়। পড়াশোনা আর সাংগঠনিক কাজ- দুটো কীভাবে সামলান? জানতে চাওয়া হলে অমি বলেন, ‘সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে জানলে সবকিছুই করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। তাই দুটো সামলাতে তেমন সমস্যা হয়নি।’ নারী হিসেবে অবশ্য ছোটোখাটো কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। বরং নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অমির সংগঠন ব্রাইটার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ‘এ বছর সংগঠনের বেশ কিছু দল উঠান বৈঠকের আয়োজন করে। তারা একেবারে গ্রাম থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষদের জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানায়। এর বাইরেও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কী হচ্ছে এইটা জানতে ৭ দিনের একটি পরিসংখ্যান করেছিলাম। রংপুর বিভাগের ৭ জেলায় ৭ দিনে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছি।’ যোগ করেন অমি। বাংলাদেশে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ অনেক বেশি গুরুত্বপ‚র্ণ বলে মনে করেন এই তরুণী। তার মতে, জলবায়ু সম্পর্কে সচেতন না হলে ৫০ বছর পর অত্যন্ত খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে দেশবাসীকে। আবাদি জমি হারানোর সংখ্যা বাড়বে। প্রচুর জনগোষ্ঠি ঘরহারা হবে।

বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছে। দিনদিন এই আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্য অমি বলেন, ‘নিজের কাজটা আমাদের সবার ঠিকভাবে করে যাওয়া দরকার। আর একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার, আমি দেশকে ভালো কিছু দিলে দেশও আমাকে দেবে। আসুন সবাই মিলে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলি।

লন্ডনে কপ ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল অমির। তবে মেডিকেলের প্রথম প্রফ (পরীক্ষা) থাকায় সেখানে অংশ নিতে পারেননি। অবশ্য তাতে দুঃখ ছিল না। জলবায়ুর ন্যায্য দাবি আদায়ের সংগ্রাম আজীবন করে যেতে চান। আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চান বসবাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী।

Leave A Reply

Your email address will not be published.