Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে লাভলু খুনে স্ত্রী-ছেলে জড়িত!

ছিনতাইকৃত সোনার টাকা ভাগাভাগির জের

0

প্রতিবেদক :
ছিনতাইকৃত সোনার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্ব›েদ্বর জেরেই খুন হয় খোলাডাঙ্গার লাভলু। এ হত্যার সাথে খোলাডাঙ্গার কামরুজ্জামান ওরফে খোড়া কামরুলসহ আরও কয়েকজন জড়িত। ডিবি পুলিশ লাভলুর ছেলেসহ দুই আসামিকে আটক করেছে। উদ্ধার করেছে বিদেশি পিস্তল ও গুলি। আজ রোববার (১২ জুন) জেলা পুলিশ প্রেস বিফ্রিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আটককৃতরা হলেন, নিহত লাভলুর ছেলে সাকিল হোসেন (১৬) ও খোলাডাঙ্গা রেল কলোনীর আব্দুর রশিদের ছেলে ইসরাইল।

ডিবি পুলিশ জানায়, কামরুজ্জামান ওরফে খোড়া কামরুল ও তার সহযোগীরা কয়েকমাস আগে সোনা চোরাকারবারীদের কাছ থেকে ৬-৭ কেজি সোনার বার ছিনতাই করে। খোড়া কামরুলের সহযোগী লাভলুর ছেলে সাকিল ও স্বর্ণকার কবীর হাওলাদার। তাদের সাথে ছিলেন লাভলু নিজেও। সোনা বিক্রি করে প্রতি বৃহস্পতিবার টাকা ভাগাভাগি করতেন তারা। ঠিক তেমনি গত বৃহস্পতিবারও ভাগবাটোয়ারার জন্য খোড়া কামরুল ও কবীরের ডাকে কামরুলের বাড়িতে যান লাভলু ও তার ছেলে সাকিল। এরইমধ্যে লাভলুর ছেলে ঘরের বাইরে মোবাইলে গেম খেলতে যায়। এসময় খোড়া কামরুল, কবীর ও রফিকুল লাভলুকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। রাত ১২টায় হঠাৎ গুলির আওয়াজ হয়। সাকিল ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখে তার পিতা লাভলু গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। বুকে গুলি লাগায় প্রচন্ড রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই লাভলুর মৃত্যু হয়। এসময় কামরুল, তার স্ত্রী, বোন ও ঘটনাস্থলে থাকা কবীর এবং রফিকুল সাকিলকে শান্তনা দেন। সাকিলকে এসময় অর্থের লোভ দেখিয়ে হত্যাটি ভিন্ন খাতে নিতে বলেন। একপর্যায়ে কামরুলের স্ত্রী ও বোন লাভলুর মুখে কাপড় গুজে দেয়। এরপর কামরুলের নির্দেশে কবীর ও রফিকুল মোটরসাইকেলে লাভলুর লাশ নিয়ে বেলতলা আমবাগানের মধ্যে ফেলে দেয়। এ সময় সাকিলকে অস্ত্র দিয়ে তা লুকিয়ে রাখতে বলে কামরুল।

এদিকে, শুক্রবার সকালে পুলিশ লাভলুর লাশ উদ্ধার করে। ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে প্রথমেই উঠে আসে ওই এলাকার লাভলুর প্রতিপক্ষের জড়িত থাকার বিষয়টি। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয় লাভলুর ভাই মনি হত্যা মামলার আসামিরা এ হত্যাকান্ডে জড়িত। এর কয়েক ঘন্টার মাথায় লাভলুর স্ত্রীর পরকিয়ার সম্পর্কের জেরে হত্যা করা হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে নিহত লাভলু হোসেনের ছেলে সাকিল হোসেন ও স্ত্রী সালমাকে ডিবি পুলিশের টিম হেফাজতে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। সাকিল হোসেন ঘটনা আড়াল করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। শেষমেষ সাকিল হত্যার কথা স্বীকার করে হত্যাকান্ডে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে। একইসাথে হত্যার সময় ও লাশ গুম করার ঘটনাস্থলে হত্যাকারীদের সথে উপস্থিত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে এবং হত্যার কারণসহ বিস্তারিত বিবরণ দেয়।

তার স্বীকারোক্তিতে সাকিলের বাড়ির পাশের সদু পাগলের পুকুর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সাকিলের তথ্যেই খোড়া কামরুলের সহযোগী ইসরাইলকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে আরও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এছাড়া ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামী কামরুজ্জামান ওরফে খোড়া কামরুলকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। হত্যার ঘটনাস্থল খোড়া কামরুলের বসতবাড়িতে যেয়ে খোড়া কামরুল ও তার স্ত্রীকে না পেয়ে তালা ভেঙ্গে সাকিলের দেয়া তথ্যের সত্যতা পায় ডিবি পুলিশ।

এ ঘটনায় লাভলুর বাবা আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।হত্যা মামলার আসামিরা হলেন, লাভলুর ছেলে কিশোর সাকিল, পলাতক আব্দুল আজিজের ছেলে কামরুজ্জামন ওরফে খোড়া কামরুল, বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মালেক হাওলাদারের ছেলে খোলাডাঙ্গা গ্রামের ভাড়াটিয়া কবীর হাওলাদার, কামরুলের ভগ্নিপতি উপশহর এলাকার রফিকুল ইসলাম, কামরুলের স্ত্রী মেহেরুন খাতুন ও কামরুলের বোন শারমিনা।

এছাড়া পুলিশের পৃথক দুটি অস্ত্র মামলার মধ্যে একটিতে আটক ইসরাইল ও কামরুলকে আসামি করা হয়েছে। অপরটিতে লাভলুর ছেলে, সাকিল হোসেন, খোড়া কামরুল, কবীর হাওলাদার, রফিকুল , কামরুলের স্ত্রী মেহেরুন খাতুন ও বোন শারমিনাকে আসামি করা হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে সাকিল ও ইসরাইলকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত সাকিল শিশু হওয়ায় তাকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ও ইসরাইলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

নিহত লাভলু ওই এলাকার মধ্যেপাড়া কলোনীর আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি আফিল গ্রুপে চাকরি করতেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.