Take a fresh look at your lifestyle.

শুভ জন্মদিন সেলিনা হোসেন

0

বাবলু ভট্টাচার্য :
তিনি একই সাথে কথাসাহিত্যিক, গবেষক এবং প্রাবন্ধিক। তার লেখার জগৎ বাংলাদেশের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। জীবনের গভীর উপলব্ধির প্রকাশকে তিনি শুধু কথাসাহিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, শাণিত ও শক্তিশালী গদ্যের নির্মাণে প্রবন্ধের আকারেও উপস্থাপন করেছেন। বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তার লেখায় নতুনমাত্রা যোগ করেছে।
তিনি সেলিনা হোসেন।

সেলিনা হোসেনের পৈতৃক নিবাস বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার হাজীরপাড়া গ্রামে। বাবা এ কে মোশাররফ হোসেন ছিলেন রাজশাহী রেশম শিল্প কারখানার পরিচালক। মা মরিয়মন্নেসা বকুল ছিলেন গৃহিণী। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। বাবার কর্মস্থল বগুড়ায় তার শৈশব কাটে।

পঞ্চাশ দশকে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় বগুড়ার লতিফপুর প্রাইমারি স্কুলে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি বগুড়ায় ভি, এম (ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল) গার্লস স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। বাবার বদলির চাকরির কারণে এরপর তারা রাজশাহীতে এসে পি এন গার্লস স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর রাজশাহী মহিলা কলেজে আই এ ক্লাসে ভর্তি হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঢাকার ‘পূবালী’ পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নে (মতিয়া গ্রুপে) যোগ দেন। দলের পক্ষে সভা-মিছিলে অংশ নেন। তিনি মন্নুজান হলের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের (রাকসু) দু’বার সহকারী কমনরুম সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।

সেলিনা হোসেনের কর্মজীবন শুরু হয় বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে, ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে। কর্মরত অবস্থায় তিনি বাংলা একাডেমির ‘অভিধান প্রকল্প’, ‘বিজ্ঞান বিশ্বকোষ প্রকল্প’, ‘বিখ্যাত লেখকদের রচনাবলী প্রকাশ’, ‘লেখক অভিধান’, ‘চরিতাভিধান’ এবং ‘একশত এক সিরিজে’র গ্রন্থগুলো প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০ বছরেরও বেশি সময় ‘ধান শালিকের দেশ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির পরিচালক হন।

তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। তার দুটি গ্রন্থ ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ এবং ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। তার কয়েকটি গল্প নিয়েও নাটক নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি ১৯৬৯ সালে প্রবন্ধের জন্য পান ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক। ১৯৮০ সালে উপন্যাসের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ১৯৮১ সালে ‘মগ্নচৈতন্যে শিস’ উপন্যাসের জন্য আলওয়াল সাহিত্য পুরস্কার। ১৯৮২ সালে অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার। ১৯৮৭ সালে ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ উপন্যাসের জন্য কমর মুশতারী পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে ‘অনন্যা’ ও ‘অলক্ত’ পুরস্কার পান। এছাড়া ১৯৯৪-৯৫ সালে তিনি তার এয়ী উপন্যাস ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ রচনার জন্য ফোর্ড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ পান।

১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সেলিনা হোসেন। ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি, কানাড়ি, রুশ, মালে, মালয়ালাম, ফরাসি, জাপানি, ফিনিস, কোরিয়ান প্রভৃতি ভাষায় তার বেশ কয়েকটি গল্প অনূদিত হয়েছে।

১৯৮৩ সালে ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ পায়। ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় ‘টানাপোড়েন’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ ২০০১ সালে মালয়ালাম ভাষায় অনূদিত এবং ভারতের কেরালা প্রদেশ থেকে প্রকাশিত হয়।

পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ‘যাপিত জীবন’ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ‘নিরন্তর ঘন্টাধ্বনি’ উপন্যাস পাঠ্যসূচিভুক্ত। শিলচরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি উপন্যাস এমফিল গবেষণাভুক্ত।

২০০৫ সাল থেকে শিকাগোর ওকটন কলেজের সাহিত্য বিভাগ দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য কোর্সে তার ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাসটি পাঠ্যসূচিভুক্ত হয়।

সেলিনা হোসেন ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে (১৪ জুন) রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.