Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

0

বাবলু ভট্টাচার্য :
বাবা ভেবেছিলেন, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। ছেলে ভেবেছিল, সে হবে সাহিত্যিক। বাবার ইচ্ছেপূরণের জন্য ছেলে ভর্তি হয়েছিল যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। নিজেকে সাহিত্যের বেষ্টনীতে আটকাতে ছেলে শুরু করেছিল লেখালেখির চর্চা। কিন্তু মাঝপথে থমকে গেল দু’জনের ইচ্ছে। ছেলের জীবনে জড়িয়ে গেল গান। দিনে দিনে গানই হয়ে উঠল তার জগৎ, ধ্যান-জ্ঞান-নেশা এবং শেষমেশ পেশাও।

মুখোপাধ্যায় দম্পতির চার ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে হেমন্ত ছিলে‌ন দ্বিতীয়। তার ছেলেবেলা কাটে বহুড়াতে। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর কালীদাসবাবু সপরিবার কলকাতায় চলে আসেন। শহরে হেমন্তদের ঠিকানা হয় ভবানীপুর। হেমন্ত প্রথমে ভর্তি হন বাড়ির কাছে নাসিরুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুলে। তার পর মিত্র ইনস্টিটিউশন।

সহপাঠীদের মধ্যে হেমন্তের প্রিয় বন্ধু ছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং শ্যামসুন্দর। তাদের বাড়িতে ছিল হারমোনিয়ম-তবলা- গ্রামোফোন রেকর্ড। শ্যাসুন্দরদের বাড়িতে যাতায়াত শুরু হয়। রেকর্ডের গান শোনা থেকে হারমোনিয়ম বাজিয়ে সেই গান তোলা- সবই চলতে থাকে ওই বাড়িতে। বন্ধুদের মধ্যে সুভাষ (মুখোপাধ্যায়) হঠাৎ বন্ধু হেমন্তকে রেডিওতে গান গাওয়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগল।

অডিশন দিলেন হেমন্ত। তখন তার বয়স বছর ষোল হবে। তিন মাস পরে বাড়িতে চিঠি এলো। এবার রেকর্ডিং। কিন্তু রেকর্ডিং-এ গাইবেন কী? পরিত্রাতা সেই সুভাষ। হেমন্তের অনুরোধে রাতারাতি লিখে ফেললেন একটি গান। ১৯৩৭ সালের ডিসেম্বর মাস। ব্যস, আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হেমন্তকে।

শুরুর দিনগুলো থেকেই হেমন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে শুধু কাজ করে গিয়েছেন। আসলে এই সলতে পাকানোর দিনগুলো পেরোতে পেরোতেই হেমন্ত দখল করে নিয়েছিলেন সঙ্গীত- প্রেমী মানুষের মন।

চল্লিশের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম প্লে-ব্যাক করলেন হেমন্ত, ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবিতে। তার পরে বেশকিছু ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা। এর মধ্যেই সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে তিনি পর পর কয়েক বছর রেকর্ড করলেন বেশ কয়েকটি গান- ‘কোনও এক গাঁয়ের বধূ’ থেকে ‘রানার’- বাঙালি অন্যভাবে পেল এই জুটিকে। একই সময়ে বের হওয়া তার আধুনিক গানের রেকর্ডগুলিও ভীষণ জনপ্রিয় হয়।

১৯৫১ সালে বোম্বাই পাড়ি দিলেন হেমন্ত, ‘আনন্দমঠ’ ছবিতে সুর করবেন বলে। হিন্দিভাষীরা পেলেন নতুন এক গায়ক- হেমন্তকুমার। তার কণ্ঠে মুগ্ধ তখন প্রায় সারা ভারত।

বেশকিছু নামকরা চলচ্চিত্রে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সুর সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে আছে- ‘হারানো সুর’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘লুকোচুরি’, ‘স্বরলিপি’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’, ‘শেষ পর্যন্ত’, ‘কুহক’, ‘দুই ভাই’, ‘সপ্তপদী’ এবং হিন্দিতে অসংখ্য গানের সুরকার ও শিল্পী তিনি।

পঞ্চাশের দশকে সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার এবং গায়ক হিসেবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নাম আকাশস্পর্শী। তিনি এবার নিজেকে নিয়ে এলেন চলচ্চিত্র প্রযোজকের ভূমিকায়। প্রথম বাংলা ছবি মৃণাল সেনের পরিচালনায় ‘নীল আকাশের নীচে’।

এরপর একে একে হিন্দি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে থাকেন। যেমন- ‘বিশ সাল বদ’, ‘কোহরা’, ‘বিবি অওর মকান’, ‘ফরার’, ‘রাহগীর’ এবং ‘খামোশি’- উপরোক্ত সব চলচ্চিত্রেই সুর সৃষ্টি করেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ সালে ৬৯ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ১৯২০ সালের আজকের দিনে (১৬ জুন) বারাণসিতে জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.