Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : অনুপকুমার

0

বাবলু ভট্টাচার্য :
চলচ্চিত্রের বোদ্ধা ও সমালোচকরা বলেন‚ তিনি বিদেশে জন্মালে অনেক বেশি সমাদৃত হতেন। টালিগঞ্জের বাংলা চলচ্চিত্রে সাকিন বা মনের খবর শুধু নয়। যোগ্য সম্মানও পাননি জীবনপুরের এই পথিক। পরিচিতি হয়েছিল শুধুমাত্র হাস্যকৌতুক অভিনেতা হয়ে! তিনি অনুপকুমার।

আসল নাম সত্যেন দাস। বাবা ধীরেন্দ্রনাথ দাস ছিলেন গায়ক ও অভিনেতা এবং কাজি নজরুল ইসলামের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। পাশাপাশি‚ পারিবারিক দিক দিয়ে মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনের নিকট আত্মীয় তাঁরা।

অভিনয় শিক্ষার হাতেখড়ি বাবার কাছেই। পরে তালিম নিয়েছিলেন কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব শিশিরকুমার ভাদুড়ির কাছে।

অনুপকুমার ১৯৩৮ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি ‘ডিজি’র ‘হালখাতা‘ ছবিতে।

অভিনয়কেই পেশা হিসেবে নেন। কিন্তু পরিচয় হয়ে গিয়েছিল হাস্যকৌতুক অভিনেতা হিসেবেই। এর বাইরে ছক ভেঙে সুযোগ দিয়েছিলেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। তাঁর অনেক ছবিতেই পার্শ্ব অভিনেতা হয়ে ছিলেন অনুপকুমার। কিন্তু নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ‘পলাতক’ চলচ্চিত্রে। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় মনে দাগ কেটে যায়। স্মরণীয় অভিনয় করেছিলেন তরুণ মজুমদারেরই ‘নিমন্ত্রণ‘ ছবিতেও।

‘পলাতক’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পেয়েছিলেন BFJA পুরস্কার। ১৯৮৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমি সম্মান। পরের বছর শিরোমণি পুরস্কার। ১৯৯১ সালে যাত্রায় সেরা পরিচালকের সম্মান। ১৯৯৭ সালে অভিনয় জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে BFJA বিশেষ সম্মান।

১৯৮৬ সালে অনুপকুমার বিয়ে করেন অভিনেত্রী অলকা গাঙ্গুলিকে। দুজনের আলাপ নাটক করতে গিয়ে। বিয়ের পরেও সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো।

পছন্দ করতেন ডাল আলুপোস্ত ট্যাংরা মাছ আর সর্ষেবাটা দিয়ে পারসে মাছ। রান্নার হাতও ছিল দারুণ। ঘরের সব কাজ‚ যাকে বলে‚ জুতোসেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব করতে পারতেন নিখুঁতভাবে। কোনোদিন স্ত্রীকে কাজ ছেড়ে ঘরে বসে থাকতে বলেননি। এমনকি শ্যুটিং সেরে ফিরে এসে অলকাদেবী দেখতেন, রান্নাবান্না সারা। বাথরুমে গিজারটাও অন করা। দুজনে প্রচুর গল্প করতেন। যে আড্ডাই হোক না কেন‚ শেষ হতো থিয়েটার নিয়ে কথায়।

ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন সবার অভিভাবক রূপে। এই ভাবমূর্তির জন্য বয়স নির্বিশেষে সবাই ডাকত জেঠু বলে। ১৯৯৬ সালে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে কাশীপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি।

তার বছর দুয়েকের মধ্যেই চলে গেলেন সব জয় পরাজয়ের ঊর্ধ্বে। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে‚ মাত্র ৬৮ বছর বয়সে। আবার শূন্য হয়ে গেল জটায়ুর ভূমিকা। রবি ঘোষের মৃত্যুর পরে তিনিই পূর্ণ করেছিলেন সেই শূন্যস্থান। মাত্র বছর দেড়েকের ব্যবধানে ভক্তদের ছেড়ে চলে যান দুই জটায়ু।

নবদ্বীপ হালদার‚ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়‚ জহর রায়‚ রবি ঘোষের পরে বাংলা ছবিতে কমেডিয়ানের ব্যাটন ছিল তাঁর হাতে। বসন্ত বিলাপ‚ মৌচাক‚ দাদার কীর্তি, ফুলেশ্বরী ছবিতে তাঁর অভিনয় স্মরণীয়। কিন্তু তিনি কি নিজের হাতের ব্যাটন অন্য কাউকে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন ?

অনুপকুমার ১৯৩০ সালের আজকের দিনে (১৭ জুন) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.