Take a fresh look at your lifestyle.

শুভ জন্মদিন নির্মলেন্দু গুণ

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

বাবা ছিলেন চিত্রশিল্পী। কিন্তু কলকাতা আর্ট স্কুলের ছবি আঁকার পাঠ শেষ করতে না পারায় মনের অজান্তেই তিনি হয়তো চেয়েছিলেন- তার ছেলে-মেয়েদের কেউ একজন শিল্পী হোক। তাই হয়তো ছোট ছেলের মাঝে কবিতাগুণের প্রকাশ দেখে, শিল্পী হতে সহায়তা করতে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার বিশাল আকাশ। যে আকাশকে ক্যানভাস করে তার ছেলে আঁকবে কাব্যচিত্র। তার সেই স্বাধীনতার আকাশ পাওয়া ছেলেটির নাম নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী।

মাত্র ৪ বছর বয়সেই মা বীণাপনিকে হারান নির্মলেন্দু গুণ। মা মারা যাবার পর বাবা আবার বিয়ে করেন। লেখাপড়ার হাতেখড়ি নতুন মা চারুবালার হাতেই। ৩য় শ্রেণিতে, প্রথম স্কুলে ভর্তি হন বারহাট্টা স্কুলে। ক্লাস এইটে পড়ার সময় স্কুলে বাংলার নতুন শিক্ষক মুখলেসুর রহমান স্যারের মাধ্যমেই মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামের পর কবি জীবনানন্দের সাথে প্রথম পরিচিত হন তিনি।

দুই বিষয়ে লেটারসহ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান ১৯৬২ সালে। মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কান্ডারী’। মেট্রিকের পর আই.এস.সি. পড়তে চলে আসেন আনন্দমোহন কলেজে, ময়মনসিংহ।

মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের সুবাদে পাওয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপসহ পড়তে থাকেন সেখানেই। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে আই.এস.সি. পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে তিনিই একমাত্র নেত্রকোণা কলেজের।

সকলে খুশি। বাবা খুশি। এবার ছেলের সামনে উচ্চশিক্ষার সুগম পথ। ভালো ফলাফল তার যাত্রাকে বেগবান করবে এমনটাই আশা। বাবা চাইতেন ডাক্তারি পড়া। তিনি সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে। ভর্তির প্রস্তুতি নেন নির্মলেন্দু গুণ। হঠাৎ হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয় ঢাকায়। দাঙ্গার কারণে তিনি ফিরে যান গ্রামে।

২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ সালে ঢাকার ‘সাপ্তাহিক জনতা’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ‘কোন এক সংগ্রামীর দৃষ্টিতে’। এই সংকলনের বিভিন্ন কবিতায় ফুটে ওঠে বিদ্রোহ- যা শাসক শ্রেণির পছন্দ হয় না। ফলস্বরূপ মামলা হয়। জারি হয় নির্মলেন্দু গুণের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা।

পরে অবশ্য প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা খুরশেদ চৌধুরী ও মৌলনা ফজলুর রহমান সাহেবের মধ্যস্থতায় মামলা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এরপরই আসে অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাত। ডাকাতির মামলা হয় তাকে আসামী করে, আবার গ্রেফতারি পরোয়ানা। হুলিয়া। পলাতক জীবন। কখনও গৌরীপুর, শ্যামপুর। আবার কখনও জারিয়া-ঝাঞ্ছাইল। একসময় চলে আসেন ঢাকা। থাকতে শুরু করেন নাট্যকার বন্ধু মামুনুর রশীদের সাথে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট-এর হোস্টেলে। কাজ শুরু করেন আব্দুল্লাহ্ আবু সায়ীদের ‘কন্ঠস্বর’ পত্রিকায়।

‘৬৯-এর প্রথম দিকে রেডিওতে কবিতা পাঠের আসরে ডাক পান নির্মলেন্দু গুণ। ঢাকায় তার প্রচুর কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। তিনি লিখতেন ‘সংবাদ’, ‘আজাদ’, ‘পাক জমহুরিয়াত’, ‘জোনাকী’ প্রভৃতি পত্র-পত্রিকাতে। প্রকাশিত হয় তার কলাম ‘ফসল বিনাসী হাওয়া’।

২১ জুলাই ১৯৭০। তরুণ কবিদের কবিতা পাঠের আসরে পাঠ করেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘হুলিয়া’। হুলিয়া তাকে কবি খ্যাতি এনে দেয়। বড় বড় লেখকরা তার কবিতার প্রশংসা করেন। পশ্চিমবঙ্গের শক্তিমান লেখক শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘পূর্ব বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থে ছাপেন ‘হুলিয়া’ কবিতাটি। এরপর আর থেমে থাকার সময় কোথায়? প্রেম ও গণমানুষকে তার কবিতার বিষয়বস্তুতে পরিণত করে একে একে লিখে চলেন কবিতা : ‘অমীমাংসিত রমণী’, ‘চৈত্রের ভালোবাসা’, ‘তার আগে চাই সমাজতন্ত্র’সহ আরও অনেক কবিতার বই।

মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তার। অ্যালেন গিন্সবার্গ ছিলেন বাংলাদেশের একজন পরম সুহৃদ। যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতা লিখে তাতে সুরারোপ করে গেয়ে বেড়িয়েছেন মিছিলে মিছিলে। প্রচারণা চালিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে।

নির্মলেন্দু গুণ সাহিত্য সাধনার জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবি আহসান হাবীব সাহিত্য পুরষ্কার।

নির্মলেন্দু গুণ ১৯৪৫ সালের আজকের দিনে (২১ জুন) ময়মনসিংহের বারহাট্টার কাশবন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.