জন্মদিনে স্মরণঃ অজিত রায়
বাবলু ভট্টাচার্য :
‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার
সারা বিশ্বের বিস্ময়! তুমি আমার অহংকার…’
বিমুগ্ধ এই কথাগুলো যার সুরে অনুরণিত হয়েছিল সারা বাংলায় তিনি একাধারে গায়ক, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক কিংবদন্তি শিল্পী অজিত রায়।
অজিত রায়ের বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, মা কনিকা রায় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও স্কুল শিক্ষয়িত্রী৷ খুব ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে গানে তালিম নেন তিনি। মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ষাটের দশকে অজিত রায় চলে আসেন ঢাকায়। ‘৬৩ সাল থেকে ঢাকা রেডিওতে গান গাইতে শুরু করেন। বেশির ভাগই রবীন্দ্রসংগীত।
ষাটের দশকের শেষ পর্বের উত্তাল সময়ে নানা সাংস্কৃতিক সমাবেশে গণসংগীত পরিবেশন করে অজিত রায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন অজিত রায়। তিনি ছিলেন এই বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান সুরকার, শিল্পী এবং অন্যতম সংগঠক। এ সময় তাঁর সুরারোপিত একাধিক গান বাংলাদেশের অবরুদ্ধ মানুষদের ও মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছে উদ্দীপনা, অনুপ্রেরণা।
তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা’, ‘অপমানে তুমি সেদিন’, ‘কথা দাও কথাগুলো’, ‘আমি যুগে যুগে আসি’, ‘এদেশ বিপন্ন’, ‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব’, ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে আজ’, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’।
২০০০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক পেয়েছিলেন অজিত রায়। এছাড়াও, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। এগুলো হচ্ছে- ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদ থেকে শব্দসৈনিক পদক’, ‘১৯৮৮ সালে সিকোয়েন্স পদক’, ‘বেগম রোকেয়া পদক’, ‘ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী পদক’, ‘রবি রশ্মি পদক’, ‘২০১১ সালে রবীন্দ্র পদক’, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের গুণীজন পদক’, ‘বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার শ্রদ্ধাঞ্জলি পত্র’, ‘চট্টগ্রাম ইয়ুথ কয়্যার অ্যাওয়ার্ড’।
সঙ্গীতশিল্পী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অজিত রায় ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অজিত রায় ১৯৩৮ সালের আজকের দিনে (২৯ জুন) কুড়িগ্রামের রাজারহাটে জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব