Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ আহমদ ছফা

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

তিনি বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তি এবং মুক্ত চিন্তার এক অনন্য প্রতীক। প্রথা বিরোধী লেখক, সমাজবিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবি— কি বিশেষণে বিশেষায়িত করবো তাঁকে? তিনি তাঁর প্রতিভার শক্তি দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন একজন সৃজনশীল লেখককে কীভাবে সমাজ ও মানুষের জন্য দায়বদ্ধ থাকতে হয়।

লিখেছেন কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, রাজনৈতিক নিবন্ধ এবং আত্মজৈবনিক রচনা। আবার গানও লিখেছেন। চিত্রশিল্পের ওপর তার গভীর অনুরাগ আমাদেরকে বিস্মিত না করে পারেনি। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এবং চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে তাঁর লেখা রীতিমতো সম্ভ্রম জাগানিয়া। তিনি আহমদ ছফা।

হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, তারেক মাসুদের মতো অসংখ্য তরুণকে সৃজনশীল কর্মযজ্ঞের সঠিক ট্র্যাক চিনিয়ে দিয়েছিলেন এই মানুষটি। তাঁর প্রথাবিরোধী, নির্মোহ, অকপট দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য জীবিত অবস্থায় বুদ্ধিজীবি মহলে বিশেষ আলোচিত সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি।

আহমদ ছফার পিতা মরহুম হেদায়েত আলী ওরফে ধন মিয়া। মা মরহুমা আসিয়া খাতুন। দুই ভাই চার বোনের মধ্যে আহমদ ছফা ছিলেন বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান।

আহমদ ছফার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ গাছবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৬০ সালে নিজের গ্রামের নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম নাজিরহাট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন এবং ঐ বছরেই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। ১৯৭০ সালে এমএ পরীক্ষা দেয়ার আগেই বাংলা একাডেমীর পিএইচডি গবেষণা বৃত্তির জন্য আবেদন করেন এবং তিন বছরের ফেলোশিপ প্রোগ্রামের জন্য মনোনীত হন।

গবেষণার বিষয় ছিল ‘১৮০০ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত বাংলার মধ্যবিত্তশ্রেণীর উদ্ভব, বিকাশ, এবং বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তার প্রভাব’। কিন্তু পিএইচডি সম্পন্ন করেন নি। ১৯৮৬ সালে জার্মান ভাষার ওপর গ্যোটে ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি, যে জ্ঞান তাঁকে পরবর্তী সময়ে গ্যাটের অমর সাহিত্যকর্ম ‘ফাউস্ট’ অনুবাদে সাহস জুগিয়েছিল।

আহমদ ছফার প্রথম গ্রন্থ একটি উপন্যাস— ‘সূর্য তুমি সাথী’, প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গ্রন্থ হিসেবে মুক্তধারা থেকে প্রকাশ পায় তাঁর প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘জাগ্রত বাংলাদেশ’। প্রকাশকাল জুলাই ১৯৭১।

১৯৭১ সালে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ গঠন ও এর বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ নেন। ৭ই মার্চ ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা’ হিসেবে ‘প্রতিরোধ’ প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এপ্রিল মাসে কলকাতা চলে যান।

মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সেখান থেকে ‘দাবানল’ নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশে ফিরে লেখালেখিতে মনোযোগী হন। ১৯৭২ সালে ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ রচনা প্রকাশ করেন। এর কারণে তৎকালীন সরকারের রোষে পড়তে হয় তাঁকে। ১৯৭৯ সালে ‘সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস’ গ্রন্থ প্রকাশ পায়।

১৯৮০ সালে কাঁটাবন বস্তিতে ‘শিল্পী সুলতান কর্ম ও শিক্ষাকেন্দ্র’ চালু করেন। বাংলা একাডেমী থেকে ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশ পায় ১৯৮১ সালে। গ্যোটের ‘ফাউস্ট’ অনুবাদ মুক্তধারা থেকে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘অলাতচক্র’।

১৯৯৬ সালে ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ’ এবং ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ প্রকাশিত হয়। জাপানী ভাষায় ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ’ উপন্যাসের অনুবাদ প্রকাশ পায় ১৯৯৮ সালে।

‘লেখক শিবির পুরস্কার’ এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রণীত ‘সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার’ প্রত্যাখ্যান করেন ছফা। ১৯৮০ সালে ‘ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার’ এবং ২০০২ সালে ‘মরণোত্তর একুশে পদক’ এ ভূষিত হন আহমদ ছফা।

২০০১ সালের ২৮ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন ৫৮ বছর বয়সী আহমেদ ছফা।

আহমদ ছফা ১৯৪৩ সালের আজকের দিনে (৩০ জুন) চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.