Take a fresh look at your lifestyle.

ধোনি হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী : পুরো ঘটনাটি মাত্র ৪-৫ মিনিটে ঘটেছে

0

প্রতিবেদক :
যশোরে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ডের শিকার জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধোনিকে হত্যার সময় ঘটনাস্থলে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ক্লিনার আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে পিন্টু বিশ্বাস। পুরো ঘটনাটি তিনি দেখেছেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি সবার আগে যুবদলনেতা ধোনিকে বাঁচাতে যান। চোঁখের সামনে তরতাজা একটি প্রাণকে বাঁচাতে না পারায় তিনি স্তব্ধ ও মর্মাহত। তার দাবি, পুরো ঘটনাটি ঘটেছে মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে। আর এই কিলিং মিশনে ঘটনাস্থলে অংশ নেয় ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী তিন যুবক।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার ১১টার একটু পর ধোনির বাসার সামনে শহরের শংকরপুর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে ইউসুফের চা দোকান থেকে চা খেয়ে পাশেই স্থানীয় শান্তি কমিটির অফিসে বসেছিলেন যুবদলনেতা ধোনি। বেলা ১১টা ২০ বা ১১টা ২২ মিনিটের দিকে আনসার ক্যাম্পের দিকে থেকে একটি রিকশায় ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী তিনজন যুবক এসে শান্তি কমিটি অফিসের সামনে দাঁড়ায়। ঐ তিন জনের মধ্যে একযুবক শান্তি কমিটির অফিসের মধ্যে থেকে ধোনির জামার কলার ধরে বের করে নিয়ে আসেন। এরপর সড়কের ওপরেই ধোনির ডানপায়ে রামদা দিয়ে একটি কোপ মারে এক যুবক। পরে ধোনিকে টানতে টানতে ধোনির বাসার সামনে বৌরানী ফার্মেসির সামনে নিলে ধোনি পড়ে যায়। এরপর তিন যুবকের মধ্যে দুই যুবক ঐ ফার্মেসির সামনে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকেন। একইসাথে ছুরিকাঘাতও করতে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকান্ডে ঘটনাস্থলে তিন যুবক থাকলেও একযুবক টিশার্ট (গেঞ্জি) পরিহিত। তিনি অন্য দুই যুবককে নিরাপত্তার পাহারা দিচ্ছিলেন। তাদের হাতে বড় হাশুয়া, একটি বড়রামদা ও দুইজনের হাতে দুটি চাকুও ছিল।

কিছুটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব এই প্রত্যাক্ষদর্শী আরও বলেন, ‘আমার চোখের সামনে লোকটা মারা গেল। খুব ভালো ছিল মানুষটা। বাঁচাতে পারলাম না। কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে তিনি বলেন ‘চা খেয়ে আমিও দোকানে বসেছিলাম। তার চিৎকার চেচামেচি শুনে আমি দৌঁড়ে যাই ধোনির কাছে। কাছে যেতেই ঐ তিন যুবক পালিয়ে যায়। পালানোর সময়ে ঠিক যেই পথ দিয়ে ওরা আসেন আনসার ক্যাম্পের দিকে স্বাভাবিকভাবে হেটে পালিয়ে যান তারা। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতা শামীম আহমেদ মানুয়ার সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ ছিল। এই কারণেই এই হত্যাকান্ড হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

ওই তিন যুবক যে পথে পালাচ্ছিলেন ওই পথ নিয়েই ওই সময়ে ধোনিকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসছিলেন স্থানীয় স’মিল শ্রমিক শাহজাহান শেখ ও রাজমিস্ত্রি শ্রমিক ফয়সাল হোসেন। বুধবার (১৩ জুলাই) বিকেলে কথা হয় ধোনির হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থলে।এই দুই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘তারা যখন ধোনিকে বাঁচাতে আসছিলেন তখন তিন যুবকের মধ্যে একজন বড় রামদা উঠিয়ে বলেন এগিয়ে আসলে তোদেরও লাশ ফেলে দিয়ে যাবো। এখান থেকে চলে যা! এরপর হাটতে হাটতে ওই তিনযুবক পালিয়ে গেলে ধোনির কাছে যান তারা। সেখানেই রক্তাক্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ধোনি। হত্যাকান্ডের সময়ে ধোনির পরণে পরা ছিল লুঙ্গি। পুরো লুঙ্গিই রক্তে ভিজে যায়। এর পরে তার স্বজন ও স্থানীয়রা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে যশোরে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটনার পরে চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে মানুষের উপস্থিতি আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আতংকে অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বুধবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ পড়ে রয়েছে। সেখানে অস্থায়ী বেদিতে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতৃবৃন্দের ফুলের শ্রদ্ধা জানানোর ফুল রাখা রয়েছে।

চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের অস্থায়ী বেদিতে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতৃবৃন্দের ফুলেল শ্রদ্ধা, ছবি : কপোতাক্ষ

এদিন বিভিন্ন স্থান থেকে স্বজনেরা আসার পর বুধবার বেলা ১১টার দিকে শংকরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেজপাড়া কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ ঘন্টা পার হলেও এখনও কোনো মামলা দায়ের হয়নি। পুলিশও জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। পরিচিত লোকজনই তাকে কুপিয়ে খুন করেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। যশোর পুলিশের মুখপাত্র গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক রূপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এলাকায় সজ্জন হিসেবে পরিচিত থাকলেও যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধোনির বিরুদ্ধে হত্যাসহ সন্ত্রাসী বিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে ১২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে যুবলীগ কর্মী ইয়াসিন আরাফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন ধোনি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বেজপাড়া ব্রাদার্স ক্লাবের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ইয়াসিন আরাফাত। এই মামলায় মাসখানেক আগে ধোনি জেল থেকে বের হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে নিজ দলের যে মানুয়ার সাথে ধোনির রাজনৈতিক বিরোধ ছিল, তিনি এই ইয়াসিন আরাফাতের শ্বশুর। ধোনি হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তদন্তে রায়হান নামে এক হামলাকারীকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাকে আটক করতে পারলে হত্যাকাণ্ডের জট খুলবে বলে ধারণা পুলিশের।

নিহত যুবদলের স্ত্রী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শারমিন আক্তার বলেন, বুধবার সাড়ে ১১টার দিকে যখন রান্নাঘরে রান্না করছিলাম, তখন রাস্তায় চিৎকারের আওয়াজ শুনে রাস্তায় বের হই। রাস্তায় বের হয়েই দেখি তার স্বামীকে কয়েকজন যুবক কুপিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে কাউকে চিনতে পারিনি। তবে এই হত্যাকান্ড রাজনৈতিক বলে তিনি দাবি করেছেন। তার স্বজনরা সিদ্ধান্ত নিয়ে মামলা করবেন বলে জানান তিনি। একইসাথে তিনি এই হত্যার বিচার দাবি করেছেন।

তবে নিহতের শ্যালক তপু রহমান গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বাসার সামনে বসেছিলেন বদিউজ্জামান ধোনি। এ সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী রায়হান, রহিম, আকাশসহ ৪-৫ জন সন্ত্রাসী তার ওপরে অতর্কিত হামলা চালায়। দুর্বৃত্তরা তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। তার দাবি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শামীম আহমেদ মানুয়া নামে একব্যক্তি তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মানুয়াকে ধরতে পারলেই এই হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে বলে তিনি মনে করেন।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বদিউজ্জামান একজন নির্ভেজাল রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। দলীয় কোন্দলে এই হত্যা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যশোরে বিএনপির ভিতরে কোনো দলীয় কোন্দল নেই। তবে স্থানীয় শামীম আহমেদ মানুয়ার সঙ্গে বিরোধ ছিল। তবে এই হত্যাকান্ডের সঠিক কি কারণ সেটা বলতে পারছি না। এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে হত্যার বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারছি না। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের পুলিশ শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করবে এটাই প্রত্যাশা করি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.