Take a fresh look at your lifestyle.

স্ত্রী-সন্তানদের ঠাণ্ডা মাথায় খুনের নৃশংস বর্ণনা দিলেন বাবু

স্ত্রী ও বড় মেয়ের গলা টিপে ধরা ও ধস্তাধস্তি দেখে চিৎকার শুরু করলে গামছা দিয়ে ছোট মেয়েকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা

0

প্রতিবেদক :
প্রথমে স্ত্রী ও বড় মেয়ের গলা টিপে ধরে। ধস্তাধস্তি দেখে ছোট মেয়েটি চিৎকার শুরু করে। পরে গামছা দিয়ে ছোট মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাবু। শনিবার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে এমনই জবানবন্দি দিয়েছেন ঘাতক জহিরুল ইসলাম বাবু। তিনি আরও জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। আজ শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসু আসামির এ জবানবন্দি গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। জহিরুল ইসলাম বাবু সদরের জগন্নাথপুর গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার মশিউর রহমান বিশ্বাসের ছেলে।

এর আগে, শুক্রবার (১৫ জুলাই) মধ্যরাতে নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বীথির বাবা বাদী হয়ে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। শনিবার দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষে এদিন সন্ধ্যায় অভয়নগর উপজেলায় নিহত সাবিনার বাবার বাড়ি সিদ্দিপাশাতে তিনজনের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

জহিরুল ইসলাম বাবু জবানবন্দিতে আরও জানিয়েছেন, তিনি পেশায় একজন রডমিস্ত্রি ও মাদকাসক্ত। তিনি অভয়নগরের সিদ্দিপাশা গ্রামের শেখ মুজিবর রহমানের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বিথীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে বিথীর সাথে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ চলছিল। বিথী তার পিতার বাড়িতে থাকতে পছন্দ করত। আড়াই মাস আগে বিথী তার দুই মেয়ে নিয়ে পিতার বাড়ি চলে গেছে। অনিচ্ছা সত্তে¡ও জহিরুলকে মাঝেমধ্যে তার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থাকতে হতো। এনিয়ে সংসারে চরম অশান্তি চলছিল। শুক্রবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে জহিরুল তার বাড়ির উদ্দেশ্যে শ্বশুরবাড়ি থেকে রওনা হয়। পথে বিথীর সাথে জহিরুলের পারিবারিক বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। এরমধ্যে স্ত্রী ও বড় মেয়ের গলা চেপে ধরলে ছোট মেয়ে চিৎকার করছিল। এরপর তিনজনের গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে জানিয়েছেন জহিরুল ইসলাম।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে আসছিলেন জহিরুল ইসলাম বাবু। চাপাতলা গ্রামে আব্দুস সবুরের বাড়ির পিছনে কলাবাগান ও ঘাসের জমিতে নিয়ে স্ত্রী বিথী ও বড় মেয়ে সুমাইয়া খাতুন এবং শেষে ছোট মেয়ে সাফিয়া খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। লাশ তিনটি সেখানে ফেলে বাড়িতে এসে পরিবারের লোকজনকে ঘটনা জানান বাবু। এসময় তার বড়ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ বাড়িতে গেলে বাবু পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এ ঘটনায় নিহত বিথীর পিতা শেখ মুজিবর রহমান বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এদিকে একসঙ্গে তিনটি প্রাণ নৃশংসভাবে স্বামী বা পিতার কাছে হত্যার শিকার হওয়ার ঘটনায় দুই পরিবারের চলছে শোকের মাতম। প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় বুকফাটা কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে নিহত সাবিনার শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ি। দুই পরিবারের স্বজনদের কান্না দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না প্রতিবেশীরাও।

একসঙ্গে মেয়ে ও নাতনির এভাবে চলে যাওয়ায় বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন সাবিনার বাবা শেখ মুজিবর রহমান। তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে ২০১১ সালে সাবিনার সঙ্গে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মশিউর বিশ্বাসের ছেলে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসারে দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে জহুরুল আমার কাছে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে সে আমার মেয়ে ও নাতিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করত। মেয়ে ও দুই নাতির সুখের কথা চিন্তা করে ২০২১ সালের ২২ জুন একলাখ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করি। এরপর আরও টাকা চাইলে সাবিনা তার দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৯) ও সাফিয়া আক্তারকে (২) সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসে। পরবর্তীতে গত ১৫ জুলাই শুক্রবার সকালে জামাই জহুরুল আমার বাড়িতে আসে। আমার মেয়ে ও দুই নাতিকে সঙ্গে নিয়ে এদিন নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথে অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের চাঁপাতলা গ্রামে নূর ইসলামের কলাবাগানের মধ্যে নিয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়ের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায় সে। স্বামীর হাতে স্ত্রী ও নিজ সন্তান এমন নৃশংস হত্যার ফাঁসি দাবি করেছেন তিনি।

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম শামীম হাসান বলেন, আটক জহুরুল শনিবার যশোর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে নৃশংস হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় নিহত সাবিনার বাবার বাড়ি সিদ্দিপাশাতে তিনজনের জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.