Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে সড়ক দুর্ঘটনা বলে ‘খুন’ ধামাচাপা

স্বামী হত্যার বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

0

প্রতিবেদক :
যশোরের চৌগাছা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের বিপ্লব হোসেন সড়ক দুঘটনায় মারা যাননি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুন করে সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রচার চালায় নিহতের চাচাতো ভাই ও অনুসারীরা। তাদের মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে দাফন করে। পরবর্তীতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও এলাকার মানুষের আলোচনায় হত্যার বিষয়টি সামনে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রী নাসরিন আক্তার। তিনি গত ১৬ মে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ জনের নামে মামলা করেছেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আদালতে মামলা করায় আসামিরা বাদী ও তার সন্তানদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

আসামিরা হলেন, চৌগাছা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে আরিফ হোসেন, আলামিন ও আরশাদ আলী, রমজান মালিথার ছেলে আরিফুল ইসলাম, নিয়ামতপুর গ্রামের বুদোর ছেলে বিপুল হোসেন।

 সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে তারা আবেদন করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যায়। পরে তাদের মনে হয়েছে এটা হত্যা। এজন্য মামলা করেছে। মামলাটি আমরা তদন্ত করছি। ভিকটিমের লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

–  রেশমা শারমিন, পুলিশ সুপার, পিবিআই, যশোর

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাসরিন আক্তার বলেন, বাড়িতে একটি কুকুরের বাচ্চা আসা নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আসামিদের সাথে আমার স্বামী বিপ্লব হোসেনের সাথে বিরোধ হয়। এই বিরোধ নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। বিষয়টি আসামিরা মেনে নিতে পারেনি। ফলে আসামিরা বিপ্লব হোসেনকে খুন-জখমের ষড়যন্ত্র করতে থাকে। গত ১ মার্চ সন্ধ্যায় আমার স্বামী বিপ্লব হোসেন মোটরসাইকেলে তার খালু শ্বশুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে মুক্তদহ গ্রামের মোড়ে (চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়ক) আসামিরা বিপ্লবের গতিরোধ ও মারপিট করে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় আসামিরা প্রভাবিত করে থানায় অভিযোগ দিতে বাঁধা দেয়। আমার স্বামীর লাশ ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হয়নি। সে সময় লাশ দাফন হয়ে যায়। পরে খোঁজখবর নিয়ে ও ঘটনার সময় উপস্থিত স্বাক্ষীদের সাথে কথা বলে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আমি বাদী হয়ে গত ১৬ মে আদালতে মামলা করেছি। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এ ব্যাপারে চৌগাছা থানায় আর কোনো মামলা হয়েছে কি না তা প্রতিবেদন আকারে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে অবহিত করার নির্দেশ দেন। এরপর ৩১ মে আদালত যশোর পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতে মামলা করায় আসামিরা বিভিন্ন সময়ে আমাকে ও আমার সন্তানদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। হুমকির ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমরা চরম আতঙ্কে আছি। স্বামী হত্যার বিচার চাই। প্রয়োজনে আমার স্বামীর লাশ পুনরায় তুলে ময়নাতদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, প্রত্যক্ষদর্শী দুজন নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাত তখন পৌনে ৮টা। চৌগাছা থেকে মোটরসাইকেলে দুইজন ফিরছিলেন। পথিমধ্যে মুক্তদহ মোড়ে সড়কের পাশে ৭-৮ জন লোক একজন রক্তাক্ত মানুষকে রাস্তার পাশে ঝোঁপের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় তারা এ দৃশ্য দেখে থেমে যান। ঐ লোকগুলোকে প্রশ্ন করেন আপনারা কি করছেন এটা। জবাবে তারা বলে লোকটির করিমনের (ইঞ্জিনচালিত যান) সাথে অ্যাকসিডেন্ট (দুর্ঘটনা) হয়েছে। তখন আমরা দুজন বলি আপনারা তাকে হাসপাতালে না নিয়ে রাস্তার পাশে ঝোঁপের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন। তারা সদুত্তর না দিয়ে চলে যান। পথচারী আরেকজনের সহায়তায় লোকটিকে (বিপ্লব) একটি ইজিবাইকে তুলে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মোবাইল ফোনে বিপ্লবের স্বজনদের খবর দেয়া হয়। এরমধ্যে কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে বেশ কয়েকজন হাজির হন। যারা ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত বিপ্লবকে হাসপাতালে না নিয়ে রাস্তার পাশে ঝোঁপের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা উদ্ধারকারীকে বলেন, বিপ্লব আমাদের ভাই। সমস্যা নেই, আপনি চলে যান। পরে জানতে পারি বিষয়টি দুর্ঘটনা বলে প্রচার করে লাশ দাফন করা হয়েছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে তারা আবেদন করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যায়। পরে তাদের মনে হয়েছে এটা হত্যা। এজন্য মামলা করেছে। মামলাটি আমরা তদন্ত করছি। ভিকটিমের লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত বিপ্লবের মা সাবিরন বেগম, ভাই রুবেল হোসেন, মেয়ে সাবিনা আক্তার বিপাশা, খালু শ্বশুর রফিকুল ইসলাম।

Leave A Reply

Your email address will not be published.