অবশেষে যশোরের বিতর্কিত নিকাহ রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হুসাইনের লাইসেন্স বাতিল
প্রতিবেদক :
অবশেষে যশোর পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হুসাইনের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। মঙ্গলবার আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব মুরাদ জাহান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তার নিকাহ লাইসেন্স বাতিল করা হয়। অফিস আদেশে বাল্যবিবাহ নিবন্ধন, জেলা রেজিস্ট্রারকে অপমানজনক ভাষা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণসহ একাধিক কারণ উল্লেখ করে হুসাইন কাজীর লাইসেন্স বাতিল করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একই আদেশে পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রারের ভারপ্রাপ্ত হিসাবে তিন নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ নূরুল ইসলামের উপর অর্পণ করা হয়েছে।
আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব মুরাদ জাহান চৌধুরী স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যশোর পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হুসাইনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই ঝিনাইদহের বদনপুর গ্রামের কন্যাশিশুর বিয়েসহ বিভিন্ন বাল্য বিবাহ নিবন্ধন ও নিজ অধিক্ষেত্রের বাইরে বিবাহ নিবন্ধন করার বিষয়টি যশোর জেলা রেজিস্ট্রারের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও মোহাম্মদ হুসাইন জেলা রেজিস্ট্রারকে অশ্রাব্য ও পদমর্যাদাকে অপমানজনক ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তাকে পত্র দিলেও তিনি তা গ্রহণ না করে ফেরৎ দিয়েছেন। এছাড়াও বাল্য বিবাহ নিবন্ধন করায় মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। মোহাম্মদ হুসাইন বিভিন্ন সময় একই বিবাহে বর ও কনেপক্ষকে ভিন্ন ভিন্ন কাবিননামা দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্তে প্রমাণিত হয়। এ কারণে দু’বার তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে তিনি তার জবাব দেননি যা মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯ এর বিধি ১১ অনুযায়ী অসদাচরণের শামিল। এসব কারণে তার নামের নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যশোরের আলোচিত বারান্দিপাড়ার দুরুদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ হুসাইন তার বিতর্কিত কাজের মাধ্যমে গত কয়েক বছর প্রতারক হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত। তিনি জাল সিল ও জাল নিকাহ রেজিস্ট্রার বই তৈরি করে অবৈধভাবে অনেক বিয়ের কাবিননামা সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ। নিজ এলাকার বাইরে অন্য কাজীর এলাকায় বিয়ে সম্পাদন করায় তার নামে একাধিক মামলা হয়। বাল্য বিবাহ করানোর জন্য এর আগে তাকে একাধিকবার হাজতবাস করতে হয়েছে। নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে বিয়ে ও তালাক কার্যক্রমে আইনের তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারিতা করায় তার বিরুদ্ধে কাজী সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে। হুসাইন কাজীর লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর পরই জেলা রেজিস্টার, যশোর বিগত ২৮ জুলাই হতে ৬০৩ (১০) নম্বর স্মারকের এক অফিস আদেশে যশোর পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রি কার্যক্রম পরিচালনার দয়িত্ব ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্টার মুহাম্মাদ নূরুল ইসলামের উপর অর্পণ করেছেন।