Take a fresh look at your lifestyle.

হ্যাচারি আছে, উৎপাদন নেই

কাজ না করেই বেতন নিচ্ছেন কর্মকর্তারা

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
মেহেরপুরে মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাতে ১৯৭৬ সালে বার্র্ষিক ৫ লাখ পোনা উৎপাদনে হ্যাচারি স্থাপন করা হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে চুয়াডাঙ্গা সড়কে পৌর গোরস্থানের সামনে ১০ একর জমিতে ৮টি পুকুর ও একটি হ্যাচারি স্থাপন করা হয়। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সেখানে পোনা উৎপাদন লাভজনক ছিল। তারপরই পোনা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় হ্যাচারিটিতে। এরপর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসে বসে সরকারি সবধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। খামার সংস্কারের নামে প্রতিবছর সংস্কার না করেই ভুয়া ভাউচারে টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে। খামারের ৬ বিঘা জমি বহিরাগতদের বর্গা দেয়া টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা দেয়া হয়না। খামার ম্যানেজার নিয়ম বহির্ভূতভাবে অফিসের একটি দ্বিতল ভবনের ওপরে আবাসিক হিসেবে বসবাস করে আসছেন। বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কারণে মৎস্য খামারটি দুর্নীতির আখড়াতে পরিণত হয়েছে। বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে খামারটি।

২০১৮ সালে খামার ব্যবস্থাপক হিসেবে আসেন আসাদুজ্জামান মানিক। তিনি ব্রæট ব্যাংক প্রজেক্টের অর্থায়নে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে হ্যাচারি সংস্কার করেন। ওইবছর হ্যাচারিটিতে ডিম ফুটিয়ে রেনু পোনা উৎপাদন হয়। রেনু পোনা গ্রেডিং না করার কারণে রেনু পোনা ব্যবসায়ীরা হ্যাচারিমুখো হন না। এ কারণে ২০১৯ সাল থেকে পানিতে আর্সেনিকের কারণ উল্লেখ করে রেনু উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খামারের ৮টি পুকুর পাহারা দিয়ে বেতনসহ সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খামারের উত্তরাংশে আছে ছয় বিঘা জমি। খামার ম্যানেজার বার্ষিক বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে শহরের হোটেল বাজারের লাল্টু হোসেন ও জিয়া উদ্দীনের কাছে বর্গা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদের সুযোগ দিয়ে আসছেন। খামারের সেচযন্ত্র স্যালো ও জ্বালানি ব্যবহার করে সেসব জমিতে সেচ দেয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে খামারে গিয়ে দেখা যায় জিয়া উদ্দীন বর্গা নেয়া ওই জমি পরিচর্যা করছেন। খামারের ৮টি পুকুরে রয়েছে মা মাছ। সেইসব মাছ ছুটির দিনে বিক্রি করার অভিযোগও আছে।

খামারে ৮টি পুকুর রয়েছে মা মাছের চাষ ও জাত ভেদে পোণা চাষের জন্য। ওইসব পুকুরের ঝোপঝাড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাজের জন্য ২০০১ সালে বাজেট আসে ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। কোনো কাজ না করেই ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে ওই টাকা। প্রতিবছরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নর টাকা সংশ্লিষ্ট কাজে লাগানো হয়না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা হয়। জমি বর্গা নেয়া দুই কৃষক তাদের জমিতে সেচ সুবিধা নেবার বিনিময়ে পুকুরপাড়ে দায়সারা পরিষ্কার করে দেন বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য অফিসের এক কর্মী। জানা গেছে বর্গা দেয়া জমিতে সেচ দিতে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় তা ওই সরকারি খামারের। ফলে প্রতিমাসে গড়ে ৫ হাজার টাকা করে সরকারের খরচ হচ্ছে।

মেহেরপুরের মৎসজীবী ও মাছচাষিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৮ সালে মেহেরপুর মৎস্য খামার থেকে পোনা কিনে তারা প্রতারিত হন। তারা রুই মাছের পোনা কিনে মাছ চাষ করেন। পরে দেখেছেন তাদের বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা দেয়া হয়েছে। ফলে ওই বছর তারা মাছচাষে লোকসানের মুখে পড়েন। এরপর থেকে পোনার জাত ঠিক করতে না পারার কারণে মেহেরপুর হ্যাচারি থেকে আর কোনো ব্যবসায়ী রেনু পোনা সংগ্রহ করেনা।

খামারের ম্যানেজার ইকবাল শরিফ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ২০১৮ সালে রেনু পোনা উৎপাদন হয়। খামারের পুকুরে আর্সেনিকের কারণে মাছ মরে যাওয়ায় আর রেনু উৎপাদন করা হয়না। খামারের ৬ বিঘা জমি কত বছরের জন্য আগের ম্যানেজার কোন চুক্তিতে দিয়েছেন তা জানা নেই। মাছ বিক্রির বিষয়ে বলেন, পুকুরের মা মাছ অসুস্থ কিংবা মারা গেলে সেই মাছ খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়। তিনি স্বীকার করেন নৈশপ্রহরী না থাকার কারণে তিনি আবাসিক হিসেবে খামারের ভবনে থাকেন।

জেলা মৎস্য অফিসার মো. রোকনুজ্জামান বলেন, বিষয়টি খামার ম্যানেজারের। আমি নবাগত। আগের বিষয় জানিনা। নতুন করে রেনু পোনা উৎপাদনে সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভাগীয় কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানোও হয়েছে। অনুমোদন ও বাজেট পেলে ফের রেনু উৎপাদন করা হবে।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.