প্রতিবেদক :
‘আমার সোনা আর স্কুলে যাবে না রে…। স্কুল থেকে ফিরে এসে মা বলে আর ডাকবে না রে…। ওরে আল্লা রে…তুমি আমার সন্তানরে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও রে…। আল্লা আমি কি পাপ করছিলাম! আমার বাচ্চা দুটো নিয়ে গেলে। আমি কি নিয়ে বাঁচবো, আমার সব শেষ হয়ে গেল রে…। ওদের জায়গায় আমারে নিতে পারলে না কেন!’
বারবার মুর্ছা যেতে যেতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন যশোরের খাজুরায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত আকাশ ও সামিরার মা সেফালি খাতুন।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়নের ভদ্রডাঙ্গা গ্রামে ছব্বারের মোড়ে নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবু হুসাইন আকাশ (১২) ও জান্নাতুল নাঈম সামিরা (৫)-এর পিতা ওই গ্রামের কবির হোসেন। তিনি যশোর সেনানিবাসে চাকরি করেন। আকাশ যশোর জিলা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।
নিহত শিশুর স্বজনরা জানান, কবির হোসেন গ্রামে ছব্বারের মোড়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। গত বুধবার সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে আকাশ ও সামিরা দুই ভাইবোন নির্মাণাধীন ওই বাড়ির ছাদে উঠে খেলা করছিল। ছাদে বাড়ির নিচের একটি দোকানের সাইনেবোর্ডে বিদ্যুতের লাইন দেয়া ছিল। বিদ্যুতের সেই তারে আকাশ হাত দিলে বিদ্যুতায়িত হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে সামিরাও বিদ্যুতায়িত হয়। তাদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উভয়কেই মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, শিশু দুটির মৃত্যুতে ভদ্রডাঙ্গা শোকের গ্রামে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন নিহতদের মরদেহ একনজর দেখার জন্য দুপুর থেকেই বাড়িতে ভিড় জমায়। সন্তানহারা পিতা-মাতাসহ স্বজনদের গগণবিদারী আর্তনাতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না গ্রামের মানুষ।
বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দীন জানান, শুক্রবার বিকেলে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সন্ধ্যার পর শিশু দুটির জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।