Take a fresh look at your lifestyle.

জলাবদ্ধতায় দুই হাজার বিঘা জমি অনাবাদি

হরিণার বিলে মাছের ঘের

0

প্রতিবেদক :
যশোর সদর উপজেলার হরিণার বিলে জলাবদ্ধতায় প্রায় ২ হাজার বিঘা জমিতে আমন চারা রোপণ করতে পারা নিয়ে অনিশ্চিত রয়েছেন কৃষকরা। এসব জমিতে হাঁটু থেকে কোমড় সমান পানিতে তলিয়ে আছে।

এদিকে হরিণার বিলে একের এক ঘের নির্মাণের কারণে বিলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। গতবার জলাবদ্ধতায় প্রায় দেড় হাজার বিঘার আমন চারা জমিতে পচে যায়। সেবার চারা নষ্ট হয়ে চাষিদের কোটির ওপর আর্থিক ক্ষতি হয়। আর এবার বিলের পানি না সরায় আমন চারা রোপণ করতেই পারেননি চাষি। হরিণার বিল অঞ্চলের কৃষকদের দাবি, এবার ২ হাজার বিঘার কাছাকাছি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

সূত্র জানায়, বিলের সাড়াঘুটো, বকুলনগর, রূপদিয়া, কালাবাগা, মাহিদিয়া, উত্তর সাড়াপোলসহ কয়েকটি স্থানে ৩০টিরও বেশি ঘের গড়ে উঠেছে। আরও অনেক ঘের গড়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই বিল জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

যাদব কুমার রায় নামে একজন চাষি জানান, বিলে তার ১১ বিঘা জমি আছে। কিন্তু জমিতে এখনও কোমড় সমান পানিতে ডুবে থাকায় আমন চারা লাগাতে পারেননি। তিনি বলেন, গতবার পানি জমে চারা মরে যাওয়ায় বিরাট আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আর এবার চারা রোপণই করতে পারেননি।

বিলে ৬ বিঘা জমি রয়েছে কৃষক হযরত আলীর। কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় সেই জমি পানিতে ডুবে থাকে। বিলের তিন ফসলি এই জমি থেকে বছরে তার একবারের বেশি ফলন আসে না। এ কারণে মাছ ধরে ও অন্য কাজ করে তাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।

বকুলনগর গ্রামের সাইদুর রহমান জানান, বিলে তাদের পরিবারের ৬ বিঘা জমি আছে। কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় পানিতে ডুবে থাকে। তাই সেখানে চাষাবাদ করা যায় না। তার একটি পাওয়ার টিলার ছিল। সেটা বিক্রি করে ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে ভালো দাম পাননি। তাই মনের দুঃখে সেই পাওয়ার টিলারের ওপর চায়ের দোকান দিয়েছেন।

জলাবদ্ধতায় দুই হাজার বিঘা জমি অনাবাদি, ছবি : কপোতাক্ষ

কৃষকরা জানান, হরিণার বিলে বিদ্যমান একেকটি ঘেরের আয়তন ৫০ থেকে ৬০ বিঘা পর্যন্ত। ৩০টির অধিক এরকম ঘের বিলের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমির জলাবদ্ধতার কারণ। ইদানিং নতুন করে আরও ঘের নির্মাণ চলছে।

সূত্র জানায়, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। জমি ভরাট, পুকুর খননসহ অন্যান্য কাজে আইন অনুযায়ী অনুমোদন নিতে হয়। তবে হরিণার বিলের কোনো ঘেরের মালিক কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি নেননি। সেই অর্থে এই ঘেরগুলো একবারেই অবৈধ।

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, জমির প্রকৃতিগত পরিবর্তন আনতে হলে অনুমোদন নিতে হয়। শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি না জমি ভরাট কিংবা খনন করা আইনসম্মত নয়। তিনি জানান, এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, একমাস হলো তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে জানার পর বক্তব্য দেবেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ দাশ জানান, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জমির কৃষিশ্রেণি পরিবর্তন না করে ঘের নির্মাণ আইনের ব্যত্যয়। যদি নিয়মের ব্যতয় পাওয়া যায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.