Take a fresh look at your lifestyle.

বাণিজ্য বাড়লেও বাড়েনি অবকাঠামো সুবিধা

নওয়াপাড়া নৌবন্দর

0

শাহিন আহমেদ, অভয়নগর :
যশোরের নওয়াপাড়া নৌবন্দর ব্যবহার করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়লেও কোনো ধরনের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বন্দরটির অবকাঠামো খাতে। অথচ প্রতিনিয়তই বন্দর দিয়ে বাড়ছে পণ্য পরিবহন। ব্যবসায়ীরা বলছেন এ বন্দর দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না তারা। বন্দরের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রেও নেয়া হচ্ছে না কোনো ধরনের প্রকল্প। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারাও অবকাঠামো সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের একটি টিম নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকও করেছেন।

নওয়াপাড়ার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সড়ক, রেল ও নদীপথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নওয়াপাড়ায় সার, খাদ্যশস্য ও সিমেন্ট ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ক্রমেই এলাকটি পরিণত হয় দেশের অন্যতম বড় বিপণন কেন্দ্রে। আমদানি করা সার ও খাদ্যশস্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে বড় জাহাজ থেকে খালাসের পর তা ছোট বার্জ ও কার্গোতে করে নদীপথে নওয়াপাড়া বন্দরে আনা হয়। এছাড়া ভারত থেকে স্থলপথে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তার বেশিরভাগ রেলের ওয়াগনে করে দর্শনা স্থলবন্দর হয়ে নওয়াপাড়ায় আনা হয়। এসব পণ্য সড়ক ও নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

 মূল সমস্যা নাব্যতা সংকট। ড্রেজিং করেও দূর করা যাচ্ছে না। দুইপাশ ভরাট হয়ে আছে। কিছু ব্রিজের স্প্যানের প্রভাবেও পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়। শ্রমিকরা লোড-আনলোড ঝুঁকিপূর্ণভাবে করে।

  • একেএম আরিফ উদ্দীন, অতিরিক্ত পরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ

বর্তমানে বন্দরটিতে থাকা ৮টি জেটি ও একটি পন্টুন ব্যবসায়ীদের কোনো কাজে আসছে না বলে জানান তারা। পণ্য আমদানির পর খালাস করার জন্য এগুলো নির্মাণ করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এসব জেটি ও পন্টুন ব্যবহারে খরচ বেশি হওয়ায় তা ব্যবহার করছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, নদীর তীর থেকে জেটি ও পন্টুন অনেক দূরে হওয়ার কারণে লেবার খরচ ও সময় বেশি ব্যয় হয়। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গাইডওয়াল নির্মাণের দাবি ব্যবসায়ীদের।

বিভিন্ন অসুবিধা সত্ত্বেও বন্দরটি ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে ৪ হাজারের বেশি জাহাজে পণ্য আসছে ২০ লাখ টনেরও বেশি। বন্দরটি ব্যবহার করে মূলত সার, সিমেন্ট, কয়লা, গমসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয়।

জানা গেছে, ২০০৪ সালের এপ্রিলে যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় নৌবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হয়। ২০০৭ সালের মে মাসে শুরু হয় বন্দরটির নির্মাণকাজ। ভৈরব নদের চেঙ্গুটিয়া থেকে ভাটপাড়া ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা নির্ধারণ করা হয় বন্দরের জন্য। স্থাপন করা হয় ছয়টি পন্টুন। পর্যায়ক্রমে বন্দর ব্যবহার করে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়লেও এতটুকুও হয়নি উন্নয়নকাজ।

বন্দর সূত্র জানায়, নদের দুই তীরভূমির পরিমাণ ৫১ দশমিক ৫৫ একর। এর বেশিরভাগ জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে পাট, সার, সিমেন্ট, চাল ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘাট-গুদাম।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণসহ ওয়্যার হাউজের সুবিধা বাড়ানো, নদীভাঙন রোধে কী-ওয়াল নির্মাণ, মালামাল ওঠানামার জন্য আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ এবং মালবাহী ট্রাকের জন্য পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরটি আধুনিকায়নের ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করলেও তার বিপরীতে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন না ব্যবসায়ীরা।

সার ও খাদ্যশস্য আমদানিকারক আদিত্য মজুমদার বলেন, নদের ভাঙন রোধে কী-ওয়াল এবং বার্জ ও কার্গো থেকে মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য প্রয়োজনীয় সিঁড়ি, সড়ক ও মালবাহী ট্রাকের জন্য পার্কিং ইয়ার্ড না থাকায় প্রতিনিয়তই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পণ্য পরিবহনের জন্য ঘাটও নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছি। নওয়াপাড়া নদীবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজের হার বাড়লেও কোনো ধরনের উন্নয়ন হচ্ছে না। শুধু ট্যাক্স দিয়েই যাচ্ছি। কোনো সুবিধা পাচ্ছি না।

নওয়াপাড়া সার ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন বলেন, ভৈরব নদকে ঘিরে নওয়াপাড়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। আমরা ঠিকমতো ট্যাক্স দিচ্ছি। কিন্তু নদীবন্দরের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। এখানে ছোট জাহাজ এলেও ঘাটে ভিড়তে পারে না। এজন্য আমরা গাইডওয়াল নির্মাণের দাবি করেছিলাম। কিন্তু তা করা হয়নি।

নোয়াপাড়া ট্রের্ডাসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জনি বলেন, নদীর নাব্যতার কারণে কার্গোগুলো ৬ ঘন্টা বসে থাকে। জোয়ার আসলে আবার শ্রমিকেরা কাজ করে। যে কারণে ব্যবসায়ীদের জাহাজের ডেমারেজ গুনতে হয়। নাব্যতার কারণে প্রায় জাহাজের বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে। দ্রুত নদী খনন করতে হবে।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান বলেন, প্রতিবছর এ বন্দরটিতে পণ্য আমদানি বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। নদী খনন করে এর পরিধি ও সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। তাহলে যশোরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বন্দরটি ব্যবহারে আগ্রহ বেশি দেখাবেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বন্দর রক্ষা কমিটির সাবেক নেতা এনামুল হক বাবুল বলেন, বর্তমানে আমাদের এই ভৈরব নদ আশীর্বাদ না হয়ে এখন অভিশাপে পরিনত হয়েছে।

নওয়াপাড়া নৌবন্দরের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের ৩৭ কিলোমিটারে ৩০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ করা হয়েছে। এখন সরকার বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে বন্দরটি থেকে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে সরকার বন্দরটির উন্নয়নও করছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র একটি প্রতিনিধিদল ১৯ আগস্ট নওয়াপাড়ায় ব্যবসায়ীদের সাথে সভা করেন। দলনেতা কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীন বলেন, এখানকার মূল সমস্যা নাব্যতা সংকট। ড্রেজিং করেও দূর করা যাচ্ছে না। দুইপাশ ভরাট হয়ে আছে। কিছু ব্রিজের স্প্যানের প্রভাবেও পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়। শ্রমিকরা লোড-আনলোড ঝুঁকিপূর্ণভাবে করে। তিনি বলেন, মাল্টিপোল ট্রান্সপোর্ট (সড়ক, নদী, রেল) হাব হিসেবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। পরিকল্পিতভাবে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসার জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে উর্ধ্বতন মহলের বিবেচনার জন্য পেশ করা হবে।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.