Take a fresh look at your lifestyle.

যশোর শহরে যুবলীগের তান্ডব

0

প্রতিবেদক :
যশোর জেলা যুবলীগের একাংশের মিছিল থেকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। আজ রোববার (২৮ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হামলা চালানো হয়। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ের ভিতরের চেয়ার টেবিল, ব্যানার ফেস্টুন ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। এর আগে শহরের দড়াটানায় সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ও বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়ি ভাংচুর করা হয়। পরে তার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যুবলীগের নেতাকর্মীদের মহড়া ও মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করায় বিকেল থেকে শহরজুড়ে থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয়। জেলা যুবলীগের সহসভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ শহরের গাড়িখানাস্থ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হয়। পরে শহরের বিভিন্ন সড়কে লাঠি, রড নিয়ে নেতাকর্মীদের মহড়া দিতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে। রাজনৈতিক দলের পবিত্রস্থান দলীয় কার্যালয়। সেটিও তান্ডব থেকে রক্ষা পায়নি। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। তার গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তাদের বাড়িতে হামলা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তাদের তান্ডবে আমরা কেউ নিরাপদ নই। আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের অভিভাবকদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। তারা আসলে কি চাইছেন। তারা অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তাদের ভূমিকায় আমরা হতবাক হয়েছি।

সূত্র জানায়, শনিবার (২৭ আগস্ট) সদর উপজেলার রুপদিয়া বাজারে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেফতার ২৮ নেতাকর্মীকে আজ রোববার (২৮ আগস্ট) বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। বিকেল ৩টার দিকে আদালতে নেতাকর্মীদের দেখতে যান বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। এসময় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তারা শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন জোরদার করেন। এরমধ্যে আদালত থেকে বেরিয়ে শহরের ঘোপের বাসায় যাওয়ার পথে যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিলের সামনে পড়ে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বহনকারী প্রাইভেটকার। এসময় তার গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের লালদিঘির পাড়ে বিএনপি কার্যালয় অতিক্রম করার সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এসময় বিএনপি অফিসের ভিতরের চেয়ার টেবিল, ব্যানার, ফেস্টুন ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। ভাংচুর শেষে মিছিলটি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রুখে দিতে যুবলীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। জেলা যুবলীগের সহসভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে সামবেশে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, প্রচার সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলন প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটকে পুঁজি করে বিএনপি দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত যশোরকে অশান্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত। আন্দোলনের নামে বিএনপি তার নেতৃত্বে অরাজকতা করছে। ইতিমধ্যে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির গাড়ি ভাঙচুর করেছে। যশোরে তাদের এই অপতৎপরতা আর চলতে দেয়া হবে না। শুধু শহরে নয়, কোনো ওয়ার্ডেও কর্মসূচি পালনের নামে বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না। যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করবে।

অপরদিকে রোববার বিকেলে শহরের ঘোপে সাবেকমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালায় যুবলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। এ সময় বাড়ির বাইরে থাকায় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে রোববার দুপুরের পর থেকেই যশোর শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এছাড়াও শহরে কয়েকটি পয়েন্ট গাড়ি ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, তারা আমাদের সঙ্গে রাজনীতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে একের পর এক জেলা বিএনপির শীর্ষনেতাদের উপর হামলা করেছে। জনগণ এখন রাজপথে নেমে এসেছে; এখন আওয়ামী লীগনেতাদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। সেই কারণে তারা আমাদের উপর এমন আক্রমণ করছে। আমরা রাজনৈতিকভাবেই এসব মোকাবেলা করবো। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনেই বার বার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আক্রমণ করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, আমরা কোনো হামলা চালাচ্ছি না। বিএনপি নেতা অমিতের তান্ডবে রাজপথে এসেছি। তাদেরকে প্রতিহত করছি।

এ বিষয়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, শহরে কিছুটা অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেছে। কোনোপক্ষই এখনও পর্যন্ত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.