Take a fresh look at your lifestyle.

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় হাকিমের দাফন সম্পন্ন

0

প্রতিবেদক :
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় শেখ আবদুল হাকিমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার (২৮ আগস্ট) বাদ আসর নতুন উপশহর মসজিদে জানাযার নামাজ শেষে ঘোপ কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এর আগে, শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রোববার দুপুরে লাশ যশোর শামস্-উল-হুদা স্টেডিয়ামে নিয়ে আসলে ক্রীড়াঙ্গনের নেতাকর্মীরা শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য ভিড় করেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই খেলোয়ারকে। পরে ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান হকি কোচ কাওসার আলী বলেন, শেখ আবদুল হাকিম তিন বছর যাবত স্ট্রোকজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন। খুব কম হাঁটা-চলা করতে পারতেন। এজন্য বাড়ি থেকে কম বের হতেন। হঠাৎ গত ২১ আগস্ট দিবাগত রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন যশোরের একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয় তাকে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে সোমবার সকালে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘যশোরে আমাদের ফুটবলের দুই আইডল ছিলেন ওয়াজেদ গাজী এবং হাকিম ভাই। এর মধ্যে গাজীভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। বেঁচে ছিলেন হাকিম ভাই। সেই তিনিও আজ শেষ নিশ^াস ত্যাগ করেছেন।’

শামস্-উল-হুদা স্টেডিয়ামে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব কবিরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন, ছবি : কপোতাক্ষ

আবদুল হাকিম সংক্ষিপ্ত জীবনী
আবদুল হাকিম ৮০ দশকের সেরা লেফট উইং ব্যাক ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে অন্যদের মতোই বিশ্বের দরবারে ক্রীড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেন। শেখ আবদুল হাকিম ১৯৪৯ সালের ৪ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত কাজীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। এক ছেলে ও তিন কন্যা সন্তানের বাবা তিনি। আবদুল হাকিম ১৯৬৩ সালে যশোর উপশহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। শিক্ষাজীবনে ১৯৬৬ সালে যশোর মুসলিম একাডেমী থেকে এসএসসি ও ১৯৬৮ সালে যশোর এমএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৬৫ সালে যশোর মডেল হাইস্কুলের পক্ষে আন্তঃস্কুর খুলনা বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হন। ওই বছরই তিনি যশোর জেলা ফুটবল দলের পক্ষে খেলায় অংশ নেন। কর্মজীবনে ১৯৬৮ থেকে ফুটবল খেলোয়াড় সূত্রে খুলনা জুট মিলে পার্সেজ অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে ইস্ট পাকিস্তান যুব দলে যশোরের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন। তার খেলার মূল পজিশন ছিল রাইট ব্যাক। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে খেলেছেন লেফট ব্যাক হিসেবে। তিনি ১৯৬৮-৬৯ ঢাকা লীগের দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন এবং তার দল রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ১৯৭০-৭৬ ইপিআইডিসি’তে (বর্তমান বিজেএমসি) যোগদান করেন। ওই সময় তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত আগাখান গোল্ডকাপে অংশ নিয়ে বিদেশি দলসমূহের বিপক্ষে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৭২ সালে তিনি আসামের বরদুলই শীল্ডে, ওই বছর ঢাকা স্টেডিয়ামে কলকাতা মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল দলের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স এবং ১৯৭৮ সালে ওয়ারী ক্লাবের পক্ষে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে কৃতিত্বের সঙ্গে খেলেন। ১৯৭৩ এবং ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত মারদেকা আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন।

শেখ আবদুল হাকিম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের পক্ষে ভারতের এলাহাবাদ, বিহার, বেনারস, পাঞ্জাবসহ বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেন। যশোর তথা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের গর্বিত সন্তান শেখ আবদুল হাকিম তার সম্মাননা হিসেবে কেবলমাত্র ১৯৯৬ সালে যশোর চাঁদের হাট পদক পেয়েছেন।

এদিকে, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় শেখ আবদুল হাকিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন যশোর-৩ আসনের এমপি ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ, জাসদের কার্যকরী সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা অশোক কুমার রায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব কবির, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজামান মিঠু, সাবেক জাতীয় দলের ফুটবল ও হকি খেলোয়াড় কাওসার আলী, জেলা ফুটবল রেফারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রীনিবাস হালদার, সৌখিন ক্রীড়াচক্রের সাধারণ সম্পাদক এবিএম আখতারুজ্জামান।

Leave A Reply

Your email address will not be published.