Take a fresh look at your lifestyle.

‘ওয়েট স্কেল’ নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন

যশোরের ঐতিহ্যবাহী ক্ষণিকা পিকনিক কর্ণার

0

প্রতিবেদক :
হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে যশোরের ঐতিহ্যবাহী ক্ষণিকা পিকনিক কর্ণারের প্রাণিক‚ল। উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাতে পিকনিক কর্ণারটির ১০ বিঘা জমি দখল করে ‘ওয়েট স্কেল’ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বলা হচ্ছে, সড়ক ও জনপদের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে খাদ্য ও বাসস্থান হুমকিতে পড়বে এ পিকনিক কর্ণারটিতে থাকা বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীরা। সংশ্লিষ্ঠদের এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্তে উদ্যোগে ফুঁসে উঠেছে যশোরের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। প্রতিবাদ জানিয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ঠদের সাথে মতবিনিময়, স্মারকলিপির পর এবার মানববন্ধন করেছে সংগঠনগুলো। পরিবেশবাদীদের দাবি, যেকোনো মূল্যে ক্ষণিকা পিকনিক কর্ণারকে রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ের সঙ্গে যশোরের সকল রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনগুলো নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে গড়ে তোলার হুশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।

সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে অবাঙালি প্রকৌশলী ফারুকির উদ্যোগে ৫৬ বিঘা জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় যশোরের রামনগরের ঐতিহ্য ক্ষণিকা পিকনিক কর্ণার। যা যশোরবাসীসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে বিশাল দিঘি ছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের গাছ-গাছালি ও জীববৈচিত্র। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই জৌলুস হারাতে থাকে ক্ষণিকা। এ অবস্থায় ৯০ দশকে এসে উৎসাহে ভাটা পড়ে দর্শনার্থীদের মাঝেও। একপর্যায়ে ঐতিহ্যবাহী বিনোদনকেন্দ্রটি ভরে ওঠে গাছপালা আর ঝোপঝাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা এবং পরিবেশবাদীরা বারবার প্রশাসন ও সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে যশোরের ঐতিহ্যবাহী পিকনিক কর্ণারটির জৌলুস ফেরাতে ভূমিকা রাখতে। কিন্তু তাদের সেই দাবি পূরণ হয়নি। এখন পার্কটির পশ্চিমপাড়ের দেয়ালের ১০ বিঘা ঐতিহ্য অংশ ভেঙ্গে ফেলে বসানো হচ্ছে ওজন স্কেল। নির্মাণ কাজ শেষের পর ওজন স্কেল চালু হলে সেখানে প্রতিনিয়ত পরিবহন দাঁড়ানো এবং পার্কিংয়ের ফলে পাখপাখালিসহ পার্কটির প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, ‘ওয়েট স্কেল’ নির্মাণের জন্য চলতি মাসেই কার্যক্রম শুরু হবে। সারাদেশে মহাসড়কগুলোতে অতিরিক্ত চাপ কমাতে ২৭টি জেলায় ২৭টি স্থানে সড়কে ‘ওয়েট স্কেল’ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রায় ১৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলাগুলোতে ‘ওয়েট স্কেল’ স্থাপনে কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ক্ষণিকা পিকনিকের পাশে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়েট স্কেল বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে মাটি পরীক্ষা ও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। যশোরের ‘ওয়েট স্কেল’ স্থাপনের জন্য ৮ একর জমির ডিজাইন করা হয়েছে, যা ক্ষণিকা পিকনিক কর্ণার থেকে নেয়া হবে। এখানে ‘ওয়েট স্কেল’ বসালে যশোর-খুলনা অঞ্চলের সড়কগুলো পরিবহনে অতিরিক্ত চাপ কমাতে ভ‚মিকা রাখবে।

এদিকে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের উদ্যোগের ফুঁসে উঠেছে যশোরের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। প্রতিবাদ জানিয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ঠদের সাথে মতবিনিময়, স্মারকলিপি প্রদান করেছে। আজ শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আয়োজনে পিকনিক কর্ণারের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সংগঠনটি। এতে অনেকেই সংহতি প্রকাশ করছেন, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয়রাও অংশ নেন।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ সড়ক ও জনপথের এ উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানান। মানববন্ধনে যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক মাস্টার নুর জালাল বলেন, যেকোনো মূল্যে ক্ষণিকা পিকনিক কর্ণারকে রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে যশোরের সকল রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনগুলো নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়া হবে। মানববন্ধনে সালেক নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমাদের জন্মের আগে থেকে এই পিকনিক কর্ণার দেখছি। আগে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ গাড়ি নিয়ে এখানে পিকনিক করতে আসতো। এখন এটির অযত্ন অবহেলার কারণে পরিবেশ খারাপ হয়ে গেছে। আমাদের দাবি, সরকার এর জীববৈচিত্র নষ্ট না করে রক্ষাণাবেক্ষণ করুক।

সমন্বয়ক মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, সারাবিশ্ব তথা বাংলাদেশ শত শত কোটি টাকা খরচ করে পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছে। সেখানে যশোরের ঐতিহ্যবাহী এবং পরিবেশের জন্য উপকারী স্থান নষ্ট করার পায়তারা করা হচ্ছে। এই পিকনিক কর্ণারের জলাশয়ে ও গাছগাছালিতে পানকৌড়ি, বক, হাসপাখিসহ ছোট বড় প্রাণী বসবাস করে। এমন একটা জায়গা নষ্ট করে ওজন স্কেল নির্মাণ করে কিভাবে। ক্ষণিকা পিকনিক কর্ণার জীববৈচিত্র অক্ষুন্ন রেখে আধুনিক করার জন্য দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ক্ষণিকা পিকনিক কর্ণারের জীববৈচিত্র যাতে বিনষ্ট না হয় সেই কারণেই সব জমি নেওয়া হচ্ছে না। যশোরবাসী না চাইলে আমরা বসাবো না। তাছাড়া এটি যশোর অফিস বাস্তবায়ন করছে না। আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলছি।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.