Take a fresh look at your lifestyle.

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের যুদ্ধক্ষেত্রের স্মৃতি রক্ষায় পদক বিক্রির স্ট্যাটাস!

0

প্রতিবেদক :
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের শাহাদৎবরণের স্থানের স্মৃতি রক্ষায় নিজের ‘জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদক’ নিলামে বিক্রি করতে চান যশোরের ঝিকরগাছার সন্তান কবি ও গবেষক সাইদ হাফিজ। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের শাহাদৎ বরণের দিনে আজ ৫ সেপ্টেম্বর এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জাতীয় স্বর্ণপদক বিক্রির এই ঘোষণা দেন। এদিকে, এই ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরবর্তীতে তিনি স্ট্যাটাসটি তুলে নিতেও বাধ্য হন।

কবি সাইদ হাফিজ জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এইদিনে (৫ সেপ্টেম্বর) যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার আটুলিয়া গ্রামে (বই-পুস্তকে আছে গোয়ালহাটি) রণাঙ্গনে অসীম সাহসিকতায় যুদ্ধ করতে করতে শহিদ হন। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী শার্শার কাশিপুরে দাফন করা হয়। তাঁর কবরটি সংরক্ষণ করা হলেও রণাঙ্গনের শেষ স্থানটি গো-ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এই স্থানটি সংরক্ষণের জন্য গত ১০ বছর ধরে আমি বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল না পাওয়ায় আমি এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছি।

স্ট্যাটাসে কবি সাইদ হাফিজ উল্লেখ করেছিলেন :
‘জাতীয় স্বর্ণপদক বিক্রি করতে চাই।
গত ১০ বছর ধরে একটা বিষয় আমাকে মানসিকভাবে ব্যাপক যন্ত্রণা দিচ্ছে। কিছুতেই আমি এই লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। মূল ঘটনাটা ঘটেছিল আজ থেকে ৫১ বছর আগে। ১৯৭১ সালের আজকের এইদিনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলাধীন আটুলিয়া গ্রামে (বই-পুস্তকে গোয়ালহাটি উল্লখ থাকলেও বাস্তবে জায়গাটির নাম আটুলিয়া) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ। সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে অসম সাহসিক যুদ্ধে তিনি একা শত্রুপক্ষের এতো বিপুল পরিমাণ ক্ষতিসাধন করেন যে, তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী বীরযোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে দুই চোখ উপড়ে ফেলে এবং মাথা ফাটিয়ে ঘিলু ছড়িয়ে দেয়। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে রাস্তার পাশের একটি কচুক্ষেত থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করেন।

কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার ৫১ বছর অতিবাহিত হলেও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ-এর মৃত্যুস্থানে ন্যূনতম একটি স্মৃতিফলকও বসানো হয়নি। এমনকি যেখানে তিনি মারা গিয়েছিলেন সেখানে এখন গরুর গোবর ও ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। আমি গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ধরণা দিয়েছি, পরিচিত মহলের সবাইকে অবহিত করেছি। সবাই কথা দিয়েছেন কিন্তু কেউই বীরশ্রেষ্ঠ’র স্মৃতি রক্ষার্থে এগিয়ে আসেননি। তাই কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে, আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করতে চাচ্ছি। এজন্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ‘পল্লী উন্নয়ন ও প্রায়োগিক গবেষণায় বিশেষ অবদান’-এর জন্য আমাকে যে ‘জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদক-২০১৮’ দিয়েছিলেন সেটা উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে আমার ক্ষুদ্র প্রাপ্তিকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

‘জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদক-২০১৮’ গ্রহণ করছেন কবি ও গবেষক সাইদ হাফিজ, ছবি : সংগৃহিত

আমার আফসোস মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার জন্ম হয়নি। কিন্তু যুদ্ধে স্বজন হারানোর ব্যথা আমারও আছে। তাই নতুন প্রজন্মের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখাকে একান্ত কর্তব্য মনে করি।

যে বা যারা আমার স্বর্ণপদকটি কিনে বীরশ্রেষ্ঠ’র স্মৃতি রক্ষার কাজে অংশগ্রহণ করতে চান তাদেরকে আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানাচ্ছি, পাশাপাশি এ-কাজে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’

কবি সাইদ হাফিজ আরও জানান, ‘এই স্ট্যাটাস দেয়ার পর ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে ফোন করে বলেছেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ আটুলিয়ায় নয়, গোয়ালহাটিতে শহিদ হয়েছিলেন। সেখানে স্মৃতিফলক আছে। আমাকে এটি নিয়ে সর্তক করেছেন বিধায় স্ট্যাটাসটি তুলে নিতে বাধ্য হয়েছি।’

কবি সাইদ হাফিজ আরও বলেন, ‘যশোরের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমি দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছি। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ যে স্থানটিতে শাহাদৎ বরণ করেন সেটি আটুলিয়ার মধ্যে। এবং তার পাশেই গোয়ালহাটি। এই দু’টি স্থানের কোথাও স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো কিছু নেই।’

তবে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হক দাবি করেছেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ গোয়ালহাটিতে শাহাদৎ বরণ করেন। সেখানে হয়তো বড় কিছু নেই; কিন্তু স্মৃতিফলক আছে। আর সেটি অবহেলিত; এমনও নয়। এ কারণে সাইদ হাফিজকে স্ট্যাটাস দেয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.