মেহেরপুর জাল দলিলে জমি রেজিস্ট্রিকালে ধরা
দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সরকারি জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জাল করে নিজের নামে করার পর মেয়ের নামে বিক্রি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এক প্রতারক। জমির দলিল, খাজনার রশিদ, সহকারি কমিশনারের আরএস রেকর্ডসহ অন্যান্য কাগজপত্র সবই টেম্পারিং করা। মেহেরপুর জেলার গাংনীর সাব-রেজিস্ট্রার পুলিশের কাছে অভিযোগকালে প্রতারক পালিয়ে রক্ষা পেয়েছে।
গাংনী সাব রেজিস্টার মো. মাহফুজ রানা জানান, মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. আবুল কাশেম (এনআইডি নম্বর ১৪৬৩১৪৮১৩৮) জাল নথিপত্র নিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর নিজে মেয়ের নামে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসে। গাংনীর কোদালকাঠি মৌজার বাংলাদেশ সরকারের খাসজমি নিজ নামে দেখিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে দলিলটি সম্পাদনা করতে সাহায্য নেন দলিল লেখক মো. নাসির উদ্দিনের। ওই দলিল লেখক ২০১৮ সালেও জাল দলিল রেজিস্ট্রি করার কারণে তার লাইসেন্স একবছর স্থগিত রাখা হয়েছিল। জমি রেজিস্ট্রিকালে প্রয়োজনীয় দলিলাদি পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায় মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেকর্ড রুমের ২৩ জুন’২২ তারিখের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রস্তুতকারক, তুলনাকারী, রেকর্ড কিপার, সহকারী কমিশনারের স্বাক্ষরে ৪টি আরএস রেকর্ডের সার্টিফাইড কপি সম্পূর্ণভাবে টেম্পার্ড বা জাল করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ডেপুটি কমিশনারের মালিকানা তথা খাসজমির মালিক বাংলাদেশ সরকারের স্থলে প্রজা কলামে আবুল কাশেমসহ অন্য কতিপয় নাম সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি রেকর্ডের খাজনা দাখিলা যা অনলাইন বা ডিজিটাল প্রকৃতির এবং মটমূড়া ইউনিয়ন তহশিলদার বদরুন্নাহার স্বাক্ষরিত জাল পাওয়া যায়। রেজিস্টারিং অফিসারের রেকর্ড ও নামজারির সঠিকতা যাচাইয়ের নিমিত্তে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে কিংবা ব্যক্তির পরিচয় যাচাইয়ে নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেইজে কোনো দাপ্তরিক প্রবেশাধিকার নেই। তাই দাখিলকৃত কাগজপত্র ও ব্যক্তির পরিচয় যাচাইও সম্ভব হয় না। দলিলে হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ছিল ০.৭৬৫০ একর (সাড়ে ছিয়াত্তর শতক)। দলিল এবং এলটি (ল্যান্ড ট্রান্সফার) নোটিশের সাথে সংযুক্ত জাল রেকর্ড ও জাল দাখিলাসমূহ জব্দ করা হয়েছে। সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত (অর্পিত সম্পত্তি) ০.৭৬৫০ একর জমি আবুল কাশেম নিজ নামে সৃজন করে হস্তান্তরের চেষ্টা করে।
সাব-রেজিস্ট্রার মো. মাহফুজ রানা বলেন, নিবন্ধন বিধিমালায় আমরা দায়মুক্ত থাকলেও রাষ্ট্রীয় সম্পদ সংরক্ষণে সচেতন থাকতে হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি এমনভাবে কাগজপত্রগুলো সৃজন করেছে যে ধরার কোনো উপায় ছিল না। জমির পরিমাণ বেশি দেখে সন্দেহ হলে উক্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষায় রেখে পাশেই এসি ল্যান্ড অফিসে যাচাই করতে গিয়ে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে জালিয়াত লোকটি পালিয়ে যায়। বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রারকে অবহিত করা হয়েছে।