Take a fresh look at your lifestyle.

মেহেরপুরের বাড়ির চালে মাঠে মিষ্টি কুমড়া

একই জমিতে অন্য ফসলের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে একইসাথে দুটি ফসল পাওয়ায় লাভবান কৃষকরা

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বাড়ির আঙিনায় মিষ্টি কুমড়া চাষ আর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাঠে মিষ্টি কুমড়ার চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। হাসি ফুটেছে ছোট বড় পরিবারগুলোতে বাড়ির আঙিনা থেকে চালে ছড়িয়ে পড়া ডগায় ডগায় কুমড়া দেখে।

কৃষিনির্ভর ও সবজি চাষ খ্যাত মেহেরপুর জেলায় বারো মাস মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়। আগে গৃহবধুরা বসতবাড়ির আঙিনায় মিষ্টি কুমড়া লাগিয়ে পারিবারিক চাহিদা মেটাতেন। বর্তমানে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে সাথি ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছেন কৃষকরা। বর্তমানে জেলায় কলা, আলু, আখ, বিভিন্ন ফলজ বাগানে সাথি ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়ার চাষ বেড়েছে। কম খরচে এবং তিনমাসের মধ্যেই এর উৎপাদন করা যায় বলে দিন দিন মেহেরপুর জেলায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিরুপ আবহাওয়ার জন্য গতবছর মিষ্টি কুমড়া চাষে ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। চাষের সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ফল ছোট ও বিকৃত হয়ে যায়। এবার আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় বাড়তি সার ও কীটনাশক ছাড়াই মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন ভালো হয়েছে। একই জমিতে অন্য ফসলের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়ার চাষে একইসাথে দুটি ফসল পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। আবার অনেক কৃষক এগুলো এককভাবে চাষ করেন। এক্ষেত্রে অবশ্য ফলনও বেশি পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগের হিসেবে জেলায় প্রায় ৪শ’ বিঘা জমিতে কুমড়ার চাষ হয়েছে।

সরেজমিনে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা মিষ্টি কুমড়া তোলা হচ্ছে ট্রাকে। নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে যাচ্ছে সুস্বাদু এই সবজি।

সদর উপজেলার উজ্জলপুর গ্রামের কুমড়া চাষি কামরুল হাসান বলেন, মাঠে প্রতিনিয়ত কুমড়ার চাষ বাড়ছে। গতবছর একবিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে ১০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছিলাম। এ বছর একবিঘা ১০ কাঠা জমিতে কুমড়ার চাষ করে ২০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছি। এখনও ২৫-৩০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করতে পারব। আশা করি গতবছরের লোকসান কাটিতে লাভবান হতে পারব।

গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের কুমড়া চাষি আব্দুর রহমান বলেন, মরিচের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে ২ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এবার এত দাম পাব আশা করিনি।

সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, তিনি আখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে কুমড়া লাগিয়েছেন। তার মতো এলাকার অনেক কৃষকই আখ, আলু, কলার জমিতে সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া লাগিয়েছে। তিনি বলেন, এখন আর বাজারে গিয়ে কুমড়া বিক্রি করতে হয়না। এখন জমি থেকেই ব্যবসায়িরা কুমড়া কিনে নেন। কেউ কেউ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে আবার কেউ কেউ জমি থেকেই ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সামসুল আলম জানান, কুমড়া চাষ লাভজনক। অল্প ব্যয়ে ফলন বেশি পাওয়া যায়। এই ফসল চাষের সুবিধাজনক দিক হলো এটি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। এতে অন্য ফসলও হয়, আবার বাড়তি হিসেবে কুমড়াও হয়। তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়। ক্ষতিকারক বালাইনাশক ব্যবহার করলে অনেক উপকারি পোকা মারা যায়। তাই কৃষকদের জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.