যশোর আদালতের ১০ বছরের মধ্যে পুরানো মামলার নিষ্পতির তাগিদ বিচারপতি জাহাঙ্গীরের
৮২ হাজার ৩৪৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে
প্রতিবেদক :
যশোর আদালতে ৮২ হাজার ৩৪৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। চলমান মামলার পাশাপাশি পুরানো এসব মামলা নিষ্পতির তাগিদ দিয়েছেন উচ্চ আদালতের মনিটরিং কমিটির খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। আজ রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেমিনারকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা রয়েছে, চলমান মামলার পাশাপাশি পুরানো মামলার জট কাটাতে হবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে পুরানো সব মামলার বিচার কাজ শেষ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষ দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে বিচার পাওয়ার আশায় দিনের পর দিন বছরের পর বছর কোর্টের বারান্দায় ঘুরছেন। দ্রুত মামলার রায় নিয়ে তারা ঘরে ফিরতে পারছেন না। কারও পক্ষে যাক বা বিপক্ষে যাক, মামলার রায় দ্রুত দিতে হবে।
বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিচারক সঠিক সময়ে এজলাসে ওঠবেন এবং নামবেন। দিনে দুইবেলা আপনারা এজলাস করবেন। বিচারপ্রার্থী মানুষ যেন কোর্টের বারান্দায় হয়রানি না হয়। এটা নিশ্চিত করা আমাদের পবিত্র ও নৈতিক দায়িত্ব। বিচার বিভাগের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত সব পর্যায়ে দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা বিচার বিভাগের মামলার জট কমাতে চাই। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্যে পুলিশ, প্রশাসন, বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় থাকা ভীষণ দরকার।
প্রশাসন ও পুলিশের উদ্দেশ্যে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকা দরকার। দেওয়ানি মামলার বিচারপ্রার্থীকে জমির রেকর্ড ঠিক করতে এসিল্যান্ড অফিসে দিনের পর দিন ঘুরতে হবে কেন? গুরুত্বপূর্ণ বড় মামলার সাক্ষী হাজির করার জন্য পুলিশ সুপারের সহায়তা থাকা দরকার। এ বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের অধস্তন কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভায় জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার তাদের বক্তেব্যে মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে তাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এরপর জেলা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, যশোরের আদালতে আমুল পরিবর্তন হয়েছে। বিচারকরা সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে এখন বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত সেবা পাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বিচারকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-২ এর বিচারক নিলুফার শিরীন, স্পেশাল জেলা ও দায়রা জজ সামসুল হক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন-১ এর বিচারক গোলাম কবির, ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আহম্মেদসহ জজশিপ ও ম্যাজেস্ট্রিসির বিচারকবৃন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এর আগে সভায় যশোর আদালতের মামলা পরিস্থিতি ও সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা ছিল ৫৪ হাজার ৪শ’ ৩৭টি। চলতি বছরে মামলা দায়ের হয়েছে ১১ হাজার ১৩০টি। চলতি বছরে ১৩ হাজার ৩শ’ ৭২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৪ হাজার ২শ’ ৮টি দেওয়ানি মামলা এবং ৯ হাজার ১৬৪টি ফৌজদারি মামলা।
বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৫২ হাজার ১৫৪টি বিচারাধীন মামলা রয়েছে। তার মধ্যে দেওয়ানি রয়েছে ৩৩ হাজার ৯শ’ ৪১টি ও ফৌজদারি ১৮ হাজার ২শ’ ১৩টি মামলা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের দুই আদালত ও স্পেশাল জজ আদালতে গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা ছিল ২ হাজার ৩শ’ ৩২টি। চলতি বছরে মামলা দায়ের হয়েছে একহাজার ৮শ’ ৫৫টি। এ দুই আদালতে ৮শ’ ১১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে ৩ হাজার ৩শ’ ৭৬টি।
এছাড়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা ছিল ২৪ হাজার ২শ’ ৮২টি। মামলা হয়েছে ১৪ হাজার ৭শ’ ৫৪টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ১২ হাজার ২শ’ ২৩টি। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে ২৬ হাজার ৮শ’ ১৩টি।
যশোর আদালতে চলতি বছরে ২৬ হাজার ৪শ’ ৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালতে চলতি বছর মামলা দাখিল হয়েছে ২৭ হাজার ৭শ’ ৩৯টি। বর্তমানে এসব আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৮২ হাজার ৩শ’ ৪৩টি।
উল্লেখ্য, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন যশোরের বিভিন্ন আদালতের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এছাড়া বিকেলে যশোর সার্কিট হাউজে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও আইন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। রাতে তিনি যশোর ত্যাগ করেন।