যশোর শহরে পরিবেশ আইন ভেঙে পুরোনো পুকুর ভরাট!
প্রতিবেদক :
যশোর শহরের ষষ্ঠিতলা কাঁচাবাজারের পাশে মশার প্রজনন হচ্ছে এমন অজুহাতে প্রচলিত আইন ভেঙে পুরোনো একটি পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই প্রথমে কয়েকদিন রাতের আঁধারে, পরে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় পুকুরটি ভরাটের কাজ চলছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, দিনকে দিন শহরের ছোট-বড় জলাশয়-পুকুরগুলো ভরাটের কারণে বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ষষ্ঠিতলার পুকুরটি ভরাট হলে ঐ এলাকার শত শত মানুষ জলাবদ্ধতার মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন। শহরবাসী ও জীববৈচিত্র রক্ষার স্বার্থে জলাধার বা পুকুরটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর শহরের ষষ্ঠিতলা কাঁচাবাজারের পাশে ৩৩ শতকের একটি বিশাল পুকুর। পুকুরের চারপাশেই মানুষের বসবাস। এর মালিক লিয়াকত আলী পুকুরের তিনভাগের দুইভাগ বালি দিয়ে ভরাট সম্পূর্ণ করেছেন।
জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুয়ায়ী পুকুর, খাল ও বিলসহ কোনো ধরনের জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাছাড়া জলাধার বা পুকুর, খাল-বিল এসব ভরাট না করতে উচ্চ আদালত ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। যশোর শহরের ষষ্ঠিতলার পুকুরটি ভরাটের জন্য আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। আমরা বিষয়টি দেখবো।
-সাঈদ আনোয়ার, উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরের
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির ইন্ধনে পুকুর ও জলাশয় ভরাট আইন লঙ্ঘন করে ভরাট করা হচ্ছে পুরানো পুকুরটি। ইতোমধ্যে পুকুরটির প্রায় ৭০ শতাংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসি দীর্ঘদিন পুকুরটিতে মাছ চাষসহ নানা কাজে ব্যবহার করতেন। সম্প্রতি জমির মালিক লিয়াকত আলী ও মহসিন আলী স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় পরিবেশ আইন না মেনে প্রতিদিন ভ্যানে করে মাটি ফেলছেন ওই পুকুরে। তবে জমির মালিক মহসিন ও তার ভাই লিয়াকতের দাবি, আমরা দুই ভাই এই ৩৩ শতক জমির মালিক। বছর ত্রিশেক আগে এখানে পুকুর ছিল। আস্তে আস্তে মাটি ভরাট হতে হতে ডোবায় পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমা হলেই বোঝা যায় এটা ডোবা। এর চারপাশে বসতবাড়ি। এখানে মশার প্রজনন ক্ষেত্র বা মশার উৎপত্তিস্থল। তাই প্রতিবেশীদের কথা রাখতে ডোবা ভরাট করার সিদ্ধান্ত নিই। বর্তমানে ভরাট করার দায়িত্বে রয়েছেন প্রতিবেশী সঞ্জয় জোয়ারদার। পুকুর ভরাটে পৌরসভা বা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি পুকুরের মালিক লিয়াকত আলী দেখাতে পারেননি।
পুকুরটি ভরাট হলে ষষ্ঠিতলার এলাকায় শত শত মানুষ জলাবদ্ধতার মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, দিনকে দিন শহরের ছোট-বড় জলাশয়-পুকুর ভরাটের কারণে বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে চাই না। তারা পুকুরটি রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা রাখার জোর দাবি জানিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাঈদ আনোয়ার বলেন, জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুয়ায়ী পুকুর, খাল ও বিলসহ কোনো ধরনের জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাছাড়া জলাধার বা পুকুর, খাল-বিল এসব ভরাট না করতে উচ্চ আদালত ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। যশোর শহরের ষষ্ঠিতলার পুকুরটি ভরাটের জন্য আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। আমরা বিষয়টি দেখবো।
যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু বলেন, পৌরসভার ভিতরে কোনো পুকুর বা জলাশয় ভরাট করতে হলে পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেয়া লাগে। পুকুর বা জলাশয় ভরাটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। যশোর শহরে এখন বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার একমাত্র কারণ শহরের জলাশয়গুলো ভরাট হওয়া।
এদিকে, যশোর শহরের ষষ্ঠিতলা এলাকায় পুকুর ভরাট হচ্ছে এমন খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান ৬ নম্বর পৌর কাউন্সিলর আলমঙ্গীর কবির সুমন। এসময় তিনি পুকুর ভরাট কাজে সংশ্লিষ্টদের এ কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। তিনি উপস্থিত লোকজনদের উদ্দেশ্যে বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকারী পুকুর ভরাটের মতো কাজ করা আইনত দন্ডনীয়। এই কাজে সংশ্লিষ্টরা যত প্রভাবশালী হোক না কেন, তা করতে দেওয়া হবে না।