Take a fresh look at your lifestyle.

ছেলে হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ সালমানের মা

0

প্রতিবেদক : ‘গত কিছুদিন ধরে আমার ছেলে খারাপদের সঙ্গে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছিল। আমি বাহিরে কাজে ব্যাস্ত থাকায় আমার ছেলেকে শাসন করতে পারিনি, যার ফলে আমার আজ এই পরিনতি। কোন বাবারা যেন এমন ভুল না করে! ওদের সুন্দর জীবনের জন্য ১০ বছর বিদেশে থেকেছি। আজ আমার ছেলের কী পরিণতি হলো! আমার আর কেউ থাকলো না!’ এভাবেই বিলাপ করছিলেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত কিশোর সালমানের বাবা আলমগীর হোসেন। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে মা রেশমা খাতুনের। ছেলে হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।
সালমান হোসেন (২০) সঙ্গে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তার দুই বন্ধু আসিফ হোসেন (১৯) ও আরমান হোসেন (১৯)। তাদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম ও কান্নার রোল। শনিবার সকালে সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের দূর্গাপুর-এড়েন্দা গ্রামে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। তিন কিশোরের করুণ মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পুরো গ্রামে।
স্বজনেরা জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে পাঁচ বন্ধু দুটি মোটরসাইকেল যোগে যশোরের ঝিকরগাছার গদখালিতে ঘোরার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। দুই বন্ধু বাড়িতে ফিরে আসলেও বাড়িতে ফেরেনি অপর তিন বন্ধু। এদিন রাত ৯টার দিকে ঝিকরগাছা থেকে ফেরার পথে নতুনহাট স্টোন ভাটার সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস অথবা ট্রাকের সাথে (নিশ্চিত হওয়া যায়নি) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে আসিফ (১৯) ও আরমান (১৯) দুই বন্ধু নিহত হন। অপর বন্ধু সালমানকে (২০) স্থানীয়রা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন-যশোর সদরের এড়েন্দা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে আসিফ (১৯), দূর্গাপুর গ্রামের নাজির আলীর ছেলে আরমান (১৯) ও একই গ্রামের আলমীগর হোসেনের ছেলে সালমান হোসেন (২০)। নিহত আরমান ও সালমান নতুনহাট পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং আসিফ বাড়ির পাশে বাজে দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে আর পড়াশোনা করেননি। শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহ‚র্তের মধ্যে এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভিড় জমান। পরিবারের সদস্যদের আর্তচিৎকারে হাসপাতাল এলাকায় কান্নার রোল পড়ে। শুক্রবার রাত ১টার দিকে আইনী প্রক্রিয়া শেষে তিন বন্ধুর মরদেহ দূর্গাপুর ও এড়েন্দা গ্রামে নিহতদের নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার ভোর হতে না হতেই নিহতদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধব এবং গোটা এলাকাবাসীর ঢল পড়ে। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় যেন কাউকে সান্তনা দেবার ভাষা পাচ্ছিলেন না।
শনিবার সকালে দূর্গাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি চারটি বাড়ির মধ্যে দুটি বাড়ির মধ্যে উঠানে খাটিয়ায় রাখা ছিল দুই বন্ধু সালমান ও আরমানের মরদেহ। অন্যদিকে পার্শবর্তী এড়েন্দা গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে রাখা ছিল অপর বন্ধু আসিফের মরদেহ। নিহত সালমানের মা বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন কিছুক্ষণ পর পর হারিয়ে ফেলছেন জ্ঞান। অন্যদিকে সালমানের বাবা আলমগীর হোসেন বুক চাপড়িয়ে চাপড়িয়ে ছেলেকে হারানোর আহাজারি করছিলেন। খাটিয়ার পাশেই আহাজারি করতে করতে কান্নাসরে সালমানের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গ্রামবাসীর প্রতি অনুরোধ করে বলেন, কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে যেন হাতে মোটরসাইকেল তুলে না দেয়া হয়। তাহলে আমার মতো আপনাদেরও একদিন সন্তান হারানোর বেদনা ভোগ করতে হবে।’বারবার বুকচাপড়াতে চাপড়াতে বলছিলেন, আহারে আমার সোনার মানিক রে। চলে গেছি। কত স্বপ্ন ছিলো। সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে। তোদের সুখ শাস্তিতে রাখবো বলে ১০ বছর বিদেশে থেকেছি। অন্যদিকে আসিফ ও আরমানের বৃদ্ধ বাবারা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যেন চোখের পানি শুকিয়ে গেছে এই দম্পতির। কোন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। আসিফের মরদেহ এদিন সকাল ১০টার দিকে এড়েন্দা মসজিদে জানাজা পড়িয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। অন্যদিকে সালমান ও আরমান দুই বন্ধুর ১১টার দিকে শৈশবের স্মৃতি জড়ানো বাজে দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক পৃথকদুটি কবরস্থানে দুই বন্ধুকে দাফন করা হয়।
এদিকে, তিন কিশোরের মৃত্যুতে নিহত তিন কিশোরের বাড়িতে ছুটে যান সদর ও জেলা বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।সেখানে দেয়াড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বলেন, ‘টিন এজার ছেলেরা দ্রæতগতিতে মোটরসাইকেল চালায়। এ গতির কারণে আজকে তিন কলেজছাত্রের প্রাণ গেলো। আমাদের অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। অল্প বয়সী সন্তানদের চাওয়ামাত্র মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া উচিত নয়। এবং তারা বন্ধুদের সঙ্গে কী করে বেড়াচ্ছে তা নজরে রাখতে হবে। বিশেষ করে, দ্রæতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলে অকালে এভাবে সড়কে প্রাণ ঝরবে না বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, নিহত স্বজনদের কোন অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘাতক পরিবহনটি আটক করা সম্ভব হয়নি। অভিযান চলমান রয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.