Take a fresh look at your lifestyle.

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং : বড় ‘ভিকটিম’ হতে পারে দেশের কৃষি খাত

0

বার্তাকক্ষ :

বাংলাদেশের বড় বড় ঘূর্ণিঝড় বা সুপার সাইক্লোনের সামনে প্রায়ই ঢাল হয়ে দাঁড়ায় সুন্দরবন। তবে এবার সম্ভবত সেটি হচ্ছে না। কারণ, সিত্রাং সুন্দরবনকে পাশ কাটিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে উপকূলে আঘাত হানবে। এর ফলে যা হতে পারে তা বেশ আশঙ্কাজনক, বিশেষ করে দেশের কৃষি খাতের জন্য। সিত্রাং যদি এখনকার অনুমিত পথে বিনা বাধায় বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে এর প্রভাবে উপকূল থেকে নিয়ে মধ্যাঞ্চলের বহু জেলার কৃষি জমি প্লাবিত হতে পারে। ফলে ধানসহ বিপুল পরিমাণ ফসল ধ্বংস হবে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের গতিবিধি ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নান বলেন, এবার ঘূর্ণিঝড়ের বড় ‘ভিকটিম’ হতে পারে দেশের কৃষি খাত।

এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী সিত্রাংয়ের প্রভাবে যদি ভারী বর্ষণ হয়

তাহলে কৃষি পণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষ করে, আমন ধান ও শীতকালীন সবজি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

-মো. আবদুল মান্নান, সিনিয়র আবহাওয়াবিদ

আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের পুরো উপকূল জুড়েই ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব থাকবে। তবে অন্যান্য সময় যে ঘূর্ণিঝড়গুলো হয়েছে, যেমন আম্ফান-এর তুলনায় এটি (সিত্রাং) কম শক্তিশালী হবে। বাতাসের পরিমাণও কম হবে। এখন এটি বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে আছে। যত কাছাকাছি আসবে ততই এর প্রভাব বাড়তে থাকবে। যেহেতু এটি অমাবস্যার সময়ে হবে, সেহেতু অন্যান্য সময়ের চেয়ে এবার জলোচ্ছ্বাসটা বেশি হবে।

এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী সিত্রাংয়ের প্রভাবে যদি ভারী বর্ষণ হয় তাহলে কৃষি পণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ। তিনি বলেন, বিশেষ করে, আমন ধান ও শীতকালীন সবজি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

তার মতে, ঘূর্ণিঝড়টি এখন যে পর্যায়ে আছে, সেখান থেকে দুটি বিভাগ ছাড়া দেশের সব বিভাগেই ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে সিত্রাংয়ে সবচেয়ে বেশি বর্ষণ হতে পারে। এর ফলে এসব অঞ্চলের কৃষি জমি ডুবে যাবে এবং ফসল নষ্ট হবে। অর্থনৈতিকভাবে প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষিরা।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি জলোচ্ছ্বাসের কারণে সুন্দরবন ডুবে যায় অথবা উপকূলীয় অঞ্চলে মাছের ঘের ডুবে যায় তাহলে এক ধরনের সংকট তৈরি হবে। এজন্য ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট সরকারি সব সংস্থাগুলোকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে।

তিনি বলেন, আমরা যেভাবে বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টিকে দেখছি, সেভাবে যদি এগিয়ে আসে তাহলে এটি সুন্দরবনকে বামে রেখে বেরিয়ে আসবে। সেক্ষেত্রে সুন্দরবন এটিকে বাধা দিতে পারবে না বা এর গতি কমাতে পারবে না। উল্টো যেটা হবে, সুন্দরবনের কিছু এলাকা ডুবে যেতে পারে। কোনো বাধা ছাড়াই কিন্তু এই ঝড়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আগে কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড়কে বড় ও বিধ্বংসী মনে হয়েছে এমন প্রশ্নে আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, আমার দৃষ্টিতে ৩টি ঘূর্ণিঝড় সমান পর্যায়ের মনে হয়েছে। ১৯৭০ সালের ভোলা সাইক্লোন, ১৯৯১ সালের ম্যারিয়েন সাইক্লোন এবং সিডর। এছাড়া আম্ফানও শক্তিশালী সাইক্লোন ছিল। কিন্তু এটি ভারত হয়ে আসায় বাংলাদেশে এর তীব্রতা লক্ষ্য করা যায়নি।

জানা গেছে, পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। তবে এগুলোর বেশিরভাগই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়। যেগুলো উপকূল বা স্থলভাগে আঘাত হানে সেগুলো ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাস বলছে, সমুদ্রতীরবর্তী বহু দেশ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, চীনে টাইফুন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইক্লোন।

আগে এ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো নাম দেওয়া হতো না। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে ঝড়ের নামকরণের জন্য নিয়ম বানানো হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে।

এবারের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের নাম দিয়েছে থাইল্যান্ড। এর অর্থ পাতা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.