Take a fresh look at your lifestyle.

ঝড়ের দিনে সমুদ্রের পাড়ে

0

শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা :

ঝড় কথন ১
তিনবেলা সমুদ্র দর্শনের লোভে ২ মাসের জন্য সমুদ্রের পাড়ে থাকতে এলাম। আমার বাসস্থান থেকে সমুদ্রের দূরত্ব ২০-৩০হাত। আজ সে প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসছে।
খুলনায় অনেক দূর্যোগ পার করেছি। আম্ফানের সময়ও বাতাসের শো শো শব্দে জানালার থাইগ্লাসটা কেঁপেছিল সারারাত! আজও কাঁপছে।
পার্থক্য সেদিন শো শো শব্দের সাথে সমুদ্রের ভয়াবহ গর্জন ছিল না! খুব কাছে কিছু একটা ধেয়ে আসছে এমন অনুভূতি ছিল না!!
সেদিন একা ছিলাম। আজ রুমমেট আছে।
আমার রুমমেট আমার মতই এডভেঞ্চার লাভার।
দুজন মিলে একটু পর পর বেলকনিতে যেয়ে ঝড়ের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করছি।
গত দেড় মাসে যতভাবে সমুদ্র কে দেখেছি আজ সবকিছু ছাপিয়ে গেছে। সকালে ক্লাসের এক ফাঁকে আমরা দৌড়ে গিয়েছিলাম সমুদ্র দেখতে। বিশাল উচ্চতার এক একটা ঢেউ। যেন‌‌ একটা আর একটার উপর আছড়ে পড়ছে তটে আছড়ে পড়ার আগেই। গত ১০ অক্টোবর জোৎস্না বিধৌত সমুদ্রের জোয়ার দেখে আত্মহারা হয়েছিলাম!! সেই ঢেউ এর কাছে কিছুই না। যা মনটা যেভাবে বেসামাল হয়ে উঠেছে তাতে যেকোনো সময় সমুদ্র যদি আমার বাসস্থানে চলে আসে খুব একটা অবাক হবো না।
ঝাউ বনের ওপর ভরসা কম। আমি এখন পর্যন্ত বুঝলাম না দৃষ্টিনন্দন ব্যতীত তাদের গুরুত্ব কোথায়? এলাকার লোকও জানে না। তারা বলে শুধু লাকড়ি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
ঝাউবন আর যাই হোক ,আমাদের ম্যানগ্রোভ নয়, মে কিনা নিজের সবটুকু দিয়ে, মাটি আঁকড়ে থেকে, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে একাই লড়াই করে আগলে রাখবে সবুজ প্রকৃতিকে।
আজ ম্যানগ্রোভ বনের দিন। ঠিক যেমন…
স্পেশাল মিশন ডে‌ তে স্পেশাল কমান্ডো!
প্রত্যেকটা শ্বাসমূল আগামী এক সপ্তাহ নির্ঘুম ডিউটি করবে! এটা নিশ্চিত!!
প্রকৃতি বড়ই রহস্যময়!
শান্ত সুন্দর থেকে ভয়ংকর সুন্দর হতে পারে কয়েক মুহূর্তেই!
প্রকৃতি যদি রক্তমাংসের মানুষ হতো তবে আমাদের মাঠে-ঘাটে সমাজের শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষের মুখের ভাষায় রোজ কি কি গালমন্দ শুনতো কে জানে!
কিন্তু সেটা অবিনশ্বর এক অসীম সত্তার প্রতিনিধি!
থাকুক সে তার মতো!!
অপর বিস্ময় হয়ে ! চিন্তার খোরাক হয়ে!
আমার মতো কিছু বদ্ধ উন্মাদ পাগল মানুষের হৃদয়ের অনুভূতি হয়ে ..
যারা ফোনের শেষ চার্জটুকু নিয়ে, কারেন্ট বিহীন ঘরে এই দিনের কথা লিখে স্মৃতি করে রাখতে চায়!

ঝড়কথন ২
যে যা খোঁজে আল্লাহ তাকে তাই দেন। হঠাৎ করে অতীব প্রয়োজনে আমাদের বের হতে হলো। এতক্ষণ দূর থেকে কল্পনা করছিলাম! এবার চোখের সামনে প্রকট হলো ঘূর্ণিঝড়ে ফুসে ওঠা ভয়ংকর সমুদ্র!!
অদ্ভুত শোনাতে পারে, সমুদ্রের ঢেউগুলো ফণা তোলা সাপের মতো লাগলো! এক একবার ফুঁসে উঠে সাদা সাদা বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে! কোন দিক তছনছ করবে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না!! এদিকের ঝাউবনের অসহায়ত্ব ভয়াবহ!
এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে এক দৌড়ে ফিরে এলাম!
যে মানুষের ঘর ভেসে যাবে আজ …যে মানুষের শেষ অবলম্বন টুকু হারিয়ে যাবে আজ… যার সমস্ত স্বপ্ন আজকের এই ঘূর্ণিঝড় বিলীন হয়ে যাবে খোদা তার সহায় হোন …

ঝড় কথন ৩
২দিনের জন্য এসে সমুদ্র দেখা আর সেই সমুদ্রের সাথে বাস করা এক কথা নয়। আমরা ছুটির দিনে যে সমুদ্র দেখতে আসি তা অনেকটা কনে দেখার মতো! সব ঠিকঠাক।
যারা সমুদ্রের সাথে বসবাস করে তাঁরাই জানে একটা সমুদ্রের সাথে সংসার করার পরিণতি!!
হয়তো কাল পরশু রোদ উঠে যাবে।
সমুদ্রতট হাতের নাগাল থেকে দূরে, নিজের জায়গায় চলে যাবে। সমুদ্র তটে কাঁকড়া খেলা করবে। নিজের খেয়াল খুশি মতো আঁকিবুঁকি করবে। জেলী ফিস উঠে আসবে। বালি রেখার নকশার মধ্যে শামুক ঝিনুকের মেলা বসবে।
ঝাউবনগুলোর তো কোনো উপায় নেই তারা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে।
আমার মনে হয় আমি ঝাউবনের একটা গুরুত্ব খুঁজে পেয়েছি । এরা বছরের পর বছর সমুদ্রের নিকট প্রতিবেশী হয়ে থাকে ।
এরা সমুদ্রের সব কিছু দেখতে পায় !
কাউকে বলতে পারেনা!
এরা কালের অব্যক্ত সাক্ষী!
ভালো থাকুক ঝাউবন
ভালো থাকুক সমুদ্র
ভালো থাকুক সমুদ্রপারের মানুষ
ভালো থাকুক আমার মত সমুদ্র বিলাসী মন!

লেখক : চিকিৎসক ও সংস্কৃতিসেবী

Leave A Reply

Your email address will not be published.