Take a fresh look at your lifestyle.

গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী  লাঠি আর লাঠিয়ালের কসরৎ দেখে মুগ্ধ শহরের মানুষ

0

প্রতিবেদক
ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ছন্দের তালে তালে লাঠির বিভিন্ন ধরনের কসরত দেখিয়ে দর্শকদের মন জয় করে চলছেন লাঠিয়ালরা। খেলা দেখে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও বয়সের মানুষ মুগ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে যশোর শহরের ঐতিহ্যবাহী টাউন হল ময়দানে লাঠি খেলা দেখে দর্শকদের চোখেমুখে মুগ্ধতার ছাপ দেখা গেছে। যশোর ইনস্টিটিউটের প্রাণপুরুষ খ্যাত রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের ১৬৩তম জন্মদিন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী স্মরণ উৎসব উপলক্ষে এই লাঠি খেলার আয়োজন করে যশোর ইনস্টিটিউট। প্রায় ঘন্টাব্যাপী খেলা উপভোগ করতে মাঠের চারদিকে সমাবেত হন হাজারও দর্শক। এতে কুষ্টিয়ার বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর ৫০ জন সদস্যের একটি দল নৃত্যের তালে তালে লাঠিয়ালরা প্রদর্শন করতে থাকেন নানা কসরত। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে সুরক্ষা আর প্রতিপক্ষকে কাবু করতে মেতে ওঠেন লাঠিয়ালরা।

খেলার শুরুতে বাদ্যের তালে তালে ঘোরে লাঠি। এরপর শুরু হয় লাঠিয়ালদের কেরামতি। শক্ত হাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ভেলকি দেখান তারা। লাঠি খেলার মধ্যে ২ লাঠি, ৪ লাঠি, শর্কি খেলা, তলোয়ার খেলা, ছুরি খেলাসহ আরো অনেক খেলা দুই দলে বিভক্ত হয়ে প্রদর্শন করেন লাঠিয়ালরা। এর মধ্যে একদল শিশুরাও রয়েছেন। লাঠি খেলায় বড়দের শক্ত হাতের বিপরীতে ছোটরাও কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই সেটিও প্রমাণ দিয়েছেন তারা। খেলার বিভিন্ন সময়ে মুহুর্মুহু করতালি আর উচ্ছাস তারই প্রমাণ দেয়। খেলায় অংশ নেওয়া সদস্যরা জানান, এই খেলায় জয়-পরাজয় মুখ্য নয়। দর্শকদের বিনোদন দেওয়াই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। ঐতিহ্যবাহী এই খেলা দেখতে আগ্রহের কমতি ছিলো না শহরবাসীর। গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী লাঠিয়ালদের অপূর্ব কৌশল দেখে মুগ্ধ হয় শহরের দর্শক।

যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মী প্রণব দাস বলেন, ‘যশোর ইনস্টিটিউটের প্রাণপুরুষ রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের জন্মদিন উপলক্ষে প্রথমবারের মতো সপ্তাহব্যাপী স্মরণ উৎসব হচ্ছে। প্রাণবন্ত আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানায়। উৎসবে আজ দেখলাম গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। আমরা প্রতিবছর এমন খেলার আয়োজন দেখতে চাই। দর্শকদের আগ্রহ আর ভালোবাসায় এখনো বেশ কিছু খেলোয়াড় এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলা ধরে রাখতে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি প্রশাসন ও আয়োজকদের উদ্যোগ নিতে হবে। লাঠিখেলা দেখে খুবই আল্পুত কলকাতা থেকে আসা রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের কনিষ্ঠতম সদস্য কবি ও সাহিত্যিক ডা.গৌরব দীপ ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, ‘সনাতনী এই খেলা আমরা কিন্তু এখন দেখতে পায় না। বহুদিন আগে খেলাটি দেখেছি। সেটা আমার স্মৃতিতে নেই। আজ খেলাটি দেখেছি অনেক ভালো লাগলো। দুই বাংলার এই জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খেলা বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে ভ‚মিকা রাখার অনুরোধ করেন তিনি।

লাঠি দলের দলনেতা মিজানুর রহমান জানান, তারা বিভিন্ন জায়গায় লাঠি খেলার প্রদর্শনী করে থাকেন। এ খেলার মাধ্যমে লোকদের যেমন আনন্দ দেন তেমনি নিজেরাও আনন্দ পান। কিন্তু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে লাঠি খেলার আয়োজন করা হলে তাদের অনেক লোকসান হয়। তাই লাঠিখেলাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে সরকারি সহায়তার দাবি জানান তারা। তারা মনে করেন এতে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হতো

এদিকে, রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের ১৬৩তম জন্মদিন উপলক্ষে এদিন বিকালে সপ্তাহব্যাপী স্মরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য্য এমপি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যশোর ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু। বক্তব্য রাখেন যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আমিরুল আলম খান, রবীন্দ্র গবেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অসিত বরণ ঘোষ, রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের কনিষ্ঠতম সদস্য কবি ও সাহিত্যিক ডা. গৌরব দীপ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।

আয়োজন সম্পর্কে  যশোর ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু বলেন, ‘ রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের ১৬৩ তম জন্ম ও ৯০ তম মৃত্যু দিবস উপলক্ষে স্মরন উৎসবের আয়োজন করেছে যশোর ইনস্টিটিউট। এই উৎসব প্রাণবন্ত করতে আয়োজন করা হয় লাঠি খেলা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের জন্যই এই আয়োজন। তাছাড়া এখন তো আর এই খেলা সবসময় দেখা যায় না। লাঠি আর লাঠিয়ালের কসরৎ দেখে মুগ্ধ হয়েছে মানুষ। এই সরল উৎসবে থাকবে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ লাঠি খেলা, মোরগ লড়াই, কবিতা পাঠ ও আবৃতি এবং সংবর্ধনা। যা আগামী ৩০ অক্টোবর এই স্মরণ উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.