Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে মায়ের কবরের পাশে চিরশায়িত হবেন আকবর

0

প্রতিবেদক :
‘ইত্যাদি’ খ্যাত সংগীতশিল্পী আকবরকে যশোরে দাফন করা হবে। আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা খররটি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে আজ রোববার (১৩ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ৩টার দিকে গায়কের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন তার মেয়ে অথৈ।

আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা জানান, ঢাকার মিরপুর আকবরের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার গ্রামের যশোরের সুজলপুর। সেখানে বাদ এশা জানাজা শেষে কারবালা কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে চিরশায়িত করা হবে।

দুই বছর ধরে ডায়াবেটিস, জন্ডিস, কিডনি, রক্তের প্রদাহসহ আরও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন আকবর। দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ায় তার শরীরে পানি জমে ডান পা নষ্ট হয়ে যায়। দুই সপ্তাহ আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই পা কেটে ফেলা হয়। পা কাটার পর তার কিডনি ও লিভারের সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৫ নভেম্বর দুপুরে তাকে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে (বারডেম) ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৯ নভেম্বর ভোরে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে আর ফিরতে পারলেন না এই গায়ক।

উল্লেখ্য, দেড় যুগ আগে বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ গানটি গেয়ে তুমুল হইচই ফেলে দেন তখনকার পেশায় রিকশাচালক আকবর। তবে সেই গান বদলে দেয় তার জীবন। রাস্তায় রিকশায় প্যাডেল মারা ছেড়ে গানে মনোনিবেশ করেন তিনি। এরপর ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ শিরোনামে ইত্যাদির জন্য মৌলিক গান করেন তিনি। এটিও পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। সেই থেকে নতুন নতুন গান প্রকাশের পাশাপাশি দেশে-বিদেশের মঞ্চেও নিয়মিত গাইতে থাকেন আকবর।

যশোরের রিকশাচালক থেকে রাতারাতি জাতীয় তারকায় পরিণত হন আকবর। ২০০৩ সালে বৈপ্লবিক এই ঘটনা ঘটান নন্দিত নির্মাতা-সঞ্চালক হানিফ সংকেত।

আকবরের উত্থান যতটা দ্রুত ছিল, শেষটা সেভাবে হয়নি। এভাবেও বলা যায়, অসুখ আর অভাবে ধুঁকে ধুঁকে রবিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে তিনি মরেই গেলেন। তার এমন অসহায় সময়েও বরাবরের মতো পাশে থাকার চেষ্টা ছিল হানিফ সংকেতের। আকবরের চিকিৎসার বিষয়ে সরাসরি যুক্ত ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। তবুও আকবরের অভাবটা কাটেনি, অসুখটাও সারেনি। সুখটাও ফেরেনি।

হানিফ সংকেতের সঙ্গে আকবর, ফাইল ছবি

স্বাভাবিকভাবেই আকবরের প্রস্থান খবরে কেঁপে উঠেছে সংকেতের মন। এদিন আকবরের নিথর দেহের পাশে সবার আগে তাকেই দেখার কথা, যেমনটা যায় অন্য অনেকের বেলায়। কিন্তু এবার আর সেটা হলো না। কারণ হানিফ সংকেত অবস্থান করছেন দূর রংপুরে ‘ইত্যাদি’র শুটিংয়ে।

আকবরের মৃত্যু চিকিৎসক নিশ্চিত হওয়ার পরই স্ত্রী কানিজ ফাতেমার প্রথম কলটা যায় হানিফ সংকেতের কাছে। তার ভাষায় : ‘আজ দুপুরে আকবরের স্ত্রী হঠাৎ ফোন করে অঝোরে কাঁদছিল, বলল- ‘আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে সে।’ ফোনটা যখন পাই তখন আমি রংপুরে পরবর্তী ‘ইত্যাদি’র জন্য একটি প্রতিবেদন ধারণ করছিলাম। ফোন পেয়েই বুঝেছিলাম আকবর আর নেই। কারণ বেশ কিছুদিন থেকেই তার শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। ক্রমশই অবনতি হচ্ছিল। নিয়মিত খোঁজ রাখছিলাম। চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা হচ্ছিল। লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস-সবকিছু মিলিয়ে শারীরিক অবস্থা ছিল অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। অবশেষে জীবনের কঠিন সত্য মৃত্যু। তবে এটুকু সান্ত¡না জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আকবরের চিকিৎসার কোনো ত্রæটি হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং আর্থিক সহায়তাও দিয়েছিলেন। এছাড়াও অনেকেই তাকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

স্মৃতিকাতর হানিফ সংকেত আরও বলেন, ‘আকবরের সংগীত জীবনের উত্তরণের পথটা সহজ ছিল না। ২০০৩ সালে যাত্রার পর থেকে অনেকটা একাই ওকে নিয়ে যুদ্ধ করেছি। আকবর খুব বেশি গান করেনি। তবে যে কটা করেছে তা সব প্রজন্মের শ্রোতাদের আবেগ-অনুভূতি ছুঁয়ে গেছে- যা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনেক দিন।’

উল্লেখ্য, একসময় যশোরে রিকশা চালাতেন আকবর। তবে গানের গলা ছিল সুরেলা। সেই সুরে তিনি স্থানীয় অনেককেই মুগ্ধ করেছিলেন। এরপর হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’তে এসে ব্যাপকভাবে পরিচিতি পান। পরবর্তীতে নিজের মৌলিক গানেও পান সাফল্য। তার গাওয়া ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে’ গানটি সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছিল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.