Take a fresh look at your lifestyle.

‘পানির দুই সমস্যা’ যশোরের চাঁচড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পবাসীর গলার কাঁটা!

0

প্রতিবেদক :
‘পানির দুই সমস্যা’ যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে বৃষ্টি হলেই পানি বারান্দা ছাপিয়ে ঘরে প্রবেশ করে; অন্যদিকে খাবার পানি সঙ্কট- এই দুই সমস্যাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্রকল্পের ১১২ ঘরের বাসিন্দাদের। পাশাপাশি কিছু ঘরে ফাটল দেখা দেয়া, রাস্তা না থাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা এবং বহিরাগতদের উৎপাত নিয়েও বিড়ম্বনায় রয়েছেন তারা।

যশোর সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে যশোরের চাঁচড়ায় ১০০টি ঘর ভূমিহীনদের হাতে দেওয়া হয়। পরে সেখানে আরও ১২টি ঘর তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন সেখানে ১১২টি পরিবার বসবাস করে। যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে; তারাই সেখানে বসবাস করছে। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘শতবর্ষ’ প্রকল্প। প্রকল্পের আগে সেখানে ঘিঞ্জি ঘনবসতি আর দুর্গন্ধময় পরিবেশ ছিল। যে কারণে অনেকে সেটাকে বস্তি বলে অভিহিত করতো। এখন ঘর নির্মাণের ফলে সেটাই সুদর্শন পল্লী হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেখানে এই পরিবারগুলোর জন্য নির্মিত ঘরের পাশাপাশি রয়েছে বিনোদন কেন্দ্র, পুকুর, বৃক্ষরাজি শোভিত সৃজিত বনায়ন, পাকা সড়ক, মসজিদসহ নানা সুবিধা।

তবে যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ায় নির্মিত ‘প্রধানমন্ত্রীর ‘শতবর্ষ’ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ সরেজমিন ঘুরে বেশকিছু সমস্যা সঙ্কট উঠে এসেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭ নম্বর ঘরের বাসিন্দা ভ্যানচালক আব্দুর রহিম (৭০) জানালেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের মধ্যে কোনো রাস্তা ও ড্রেন নেই। তাই বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়; পানি ঘরে উঠে যায়। আর চাপকলগুলোতে আয়রন উঠে। পানি খাওয়া যায় না। বাইরে থেকে পানি আনতে হয়।

২১ নম্বর ঘরের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম (৪০) ডেকোরেশনের কর্মী। তিনি জানান, বৃষ্টি হলেই পানি আটকে যাওয়াই তাদের বড় সমস্যা। এখানে কোনো ড্রেন নেই। আর ঘরের মেঝে প্রায় মাটির সাথেই। তাই বৃষ্টি হলেই পানি ঘরে চলে আসে। এখানে ১২টি চাপকল আছে। কিন্তু চাপকলের পানি খাওয়া যায় না। আর পানি ব্যবহার করলেও সেই পানিও আটকে থেকে সমস্যা সৃষ্টি করে। দু’টি সাবমার্সেবল টিউবয়েল স্থাপন করা হলেও তার একটি নষ্টই থাকে। ফলে খাবার পানি বাইরে থেকে আনতে হয়।

চাঁচড়ার আশ্রয়ণ ‘শতবর্ষ’ প্রকল্প, ছবি : কপোতাক্ষ

ফতেমার মা গৃহকর্মী রহিমা বেগম (৬০) জানালেন, চাঁচড়ার এখানেই আগে তারা বসবাস করতেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি ঘর তিনি পেয়েছেন। সেখানে দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করছেন। আর দুই ছেলে ঘর না পাওয়ায় পাশের এলাকায় বউ-বাচ্চা নিয়ে ভাড়া থাকেন। তাদেরও একটা ঘর দরকার বলে জানালেন তিনি।

তুলা মিলের শ্রমিক ৬৭ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সায়েরা বেগম জানালেন, বাইরের লোকজন এখানে এসে সমস্যা করে। এর প্রতিবাদ করায় তার ছেলে রনিকে দেড়মাস আগে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীরা খুন করেছে। এখন আর প্রতিবাদ করার কেউ নেই। রাতে আশেপাশে মাদক, জুয়ার আসর বসে। আর রাস্তা ড্রেনের পাশাপাশি এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলারও জায়গা নেই। আশ্রয়ণ প্রকল্পের উত্তরপাশে ময়লা ফেলা হয়। কিন্তু তা সেখানে থেকে সরানো হয় না। ফলে এই ময়লা থেকে গন্ধ ছড়ায়।

৮০ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সবুর গাজীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩০) বললেন, ঘর পাওয়ার কিছুদিন পরই ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক অফিসার এসে দেখেছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

৮৩ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম (৭০) জানালেন, ঘর নির্মাণের সময় তারা বলেছিলেন, ঘরের পোতা করে একটু উঁচু করে ঘর বানাতে। কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনেনি। মাটির উপরেই ইট গেঁথে ঘর বানানো হয়েছে। এখন বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি চলে আসে।

চাঁচড়ার আশ্রয়ণ ‘শতবর্ষ’ প্রকল্প, ছবি : কপোতাক্ষ

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা দিনমজুর মোহাম্মদ ফারুকের স্ত্রী হেনা (৫০) বলেন, বৃষ্টি হলে ঘরের নিচ দিয়ে পানি উঠে, উপর দিয়েও পানি পড়ে। বৃষ্টি শুরু হলে বালতি ভরে ভরে ঘর থেকে পানি ফেলতে হয়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনের দোকানি ৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা কাশেম আলী জানান, প্রকল্পের সামনে যে পুকুরে যে বসার জায়গা বানানো হয়েছে। তাতে বাইরের লোকজন এসে বসে থাকে, আড্ডা দেয়। বখাটেরা উৎপাত করে।

যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ দাশ জানান, যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১১২টি পরিবার বসবাস করে। এছাড়াও সদরে মোট তিনধাপে ৫৪১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ৫৫টি ঘর বরাদ্দ এসেছে। এই ঘরগুলো সবই খাসজমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে কোনো জায়গায় রাস্তা ও ড্রেনের সমস্যা রয়েছে। আমরা বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে সেগুলো নির্মাণ করার চেষ্টা করছি।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.