Take a fresh look at your lifestyle.

আজ মেহেরপুর মুক্ত দিবস

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের পবিত্রভূমি মুজিবনগর মেহেরপুর জয় বাংলা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। বিজয় উল্লাসে ফিরে আসতে শুরু করে ভারতে আশ্রিত মেহেরপুরের মানুষ। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর তথা মেহেরপুর পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিবছর দিবসটি মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে মুক্ত দিবস হিসেবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুরের মুজিবনগরের আম্রকাননে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ প্রথম সরকার শপথগ্রহণ করে। এরপরই তৎকালীন মেহেরপুরের এসডিও তৌফিক ই ইলাহির সক্রিয় ভূমিকায় ছাত্র-জনতা, আনসার-মুজাহিদদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়।

মেহেরপুরের মুক্ত দিবসের সেদিনের আনন্দের মূহুর্তের কথা বলতে গিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ পাতানের দু’চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রথম সরকারের শপথগ্রহণের পর মেহেরপুর কার্যত হানাদারবাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সে অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল দুপুরে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে সড়কপথে মেহেরপুর প্রবেশ করার সময় সদর উপজেলার আমঝুঁপি গ্রামে নির্মম হামলা চালায়। সেদিনই এ অঞ্চলের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এক সপ্তাহের মধ্যে মেহেরপুর সরকারি কলেজ, ভকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিউট ভিটিআই ও কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে দিশেহারা পাকসেনারা মেহেরপুর থেকে পালাবার সময় দিনদত্ত ব্রিজ, খলিশাকুন্ডি ও তেরাইল ব্রিজ ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংস করে বৈদ্যুতিকসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এসময় কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যন কারও জানা নেই।

দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ৫ ডিসেম্বর রাত থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী গোপনে মেহেরপুর ছেড়ে পালাতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর সকালে মিত্রবাহিনী মেহেরপুর শহরে প্রবেশ করলে অবরুদ্ধ জনতা মিত্রবাহিনীর সঙ্গে জয়ের উল্লাসে যোগ দেয়। দীর্ঘ নয়মাস পর চারদিক থেকে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে মেহেরপুর। ওপার বাংলায় আশ্রিত মানুষ ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে শুরু করে। ভারতীয় বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষও স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে মেহেরপুরে ছুটে আসেন। এদিন লাল সবুজের পতাকা দৃষ্টিকাড়া স্থানগুলোতে টাঙ্গিয়ে দেয় স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ।

গাংনী থানার মুজিববাহিনীর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, দেশমাতৃকার জন্য শহীদ হন মুক্তিকামী নারী-পুরুষ। ভাটপাড়া থেকে অনতিদূরে সাহারবাটী টেপুখালির মাঠ ভিজে যায় মুক্তিকামী জনতার রক্তস্রোতে। গণহত্যার শিকার হয় হিন্দা, লক্ষী নারায়ণপুর ধলা, গাড়াবাড়িয়া, জোড়পুকুরিয়া, ভোমরদহ, ধর্মচাকীর শতাধিক সাধারণ মানুষ। ৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে লাল সবুজ পতাকা হাতে জয়বাংলা শ্লোগানে শ্লোগানে চারিদিক মুখরিত হয়ে ওঠে মেহেরপুর।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.