Take a fresh look at your lifestyle.

দোরগোড়ায় স্বাস্থসেবা পৌঁছে দিচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক

তৃণমূল মানুষের কাছে মডেল

0

প্রতিবেদক :
ঝাড়ু হাতে ঘরটা পরিষ্কার করা শেষের পরই বারান্দায় ছবি তুলতে গেলেই ইতস্তত করলেন ভদ্রলোক। ঝাড়ু আর পাপোস হাতে এমন ছবির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। আপত্তির সুরে ছবি তোলার কারণ জানতে চাইলেন। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর ভিতরে বসার আমন্ত্রণ। বসতে বসতে বললেন, ১১ বছর একই রুটিনে এভাবেই ঘর পরিষ্কার করে কাজে বসতে হয়। কাজ কী জানার আগেই ছেলেকে সাথে নিয়ে এসে হাজির হলেন বাহাদুর পার্ক এলাকার গোলাপী (২৮)। বললেন, গায়ে জ্বর। ঠান্ডা লাগা আছে। গ্যাসেরও সমস্যা। সব শুনে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মো. রাকিব আহসান রেজিস্টার খাতায় নামধাম লিখে হাতে ধরিয়ে দিলেন ফ্রি ওষুধ। কিন্তু দিলেন না তার চাহিদামতো স্বামীর জন্য ওষুধ। রোগী না দেখে দেয়ার নিয়ম নেই। এমন সব ছোটখাট ঘটনাতেই বাঁধে নানা বিপত্তি। সেবা না পাওয়া, ওষুধ চুরির মতো নানা অপবাদে জর্জরিত হন সিএইচসিপিরা। বাহাদুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল সাড়ে ৯টায় পৌঁছে এমন কথাই জানা গেল। যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ক্লিনিকটির অবস্থান। প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য এসব কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রীর ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। গর্ভবতী মায়েদের প্রসাবপূর্ব ও পরবর্তী সেবা, শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিসেবা, পরিবার পরিকল্পনা শিক্ষা ও পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে এসব ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে। সচেতনতার অভাবে সেবাগ্রহিতাদের সংখ্যা কম থাকলেও এখন ক্লিনিকগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে। ছোটখাট অসুখে চিকিৎসার পাশাপাশি মিলছে বিনামূল্যে ওষুধ। ২৭ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ থাকে বছরজুড়েই।

বিরামপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, ছবি : কপোতাক্ষ

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে সরকার দেশে প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প চালু করে। বিএনপি তা বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। বর্তমানে জেলার ৯১টি ইউনিয়নে ২৮২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সপ্তাহের ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত একজন সিএইচসিপি রোগীদের সেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রয়েছেন একজন করে স্বাস্থ্য সহকারি ও পরিবার কল্যাণ সহকারি।

সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ক্লিনিকগুলো ভালো ভূমিকা রাখছে। মেডিকেল অফিসার ডা. সাইদুর রহমান ইমন বলেন, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ওষুধের স্বল্পতা থাকলেও কমিউনিটি ক্লিনিকে নেই। প্রত্যেক ক্লিনিকে গড়ে ৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেয়ায় শুধু সদরের সরকারি হাসপাতালেই আড়াই-তিন হাজার রোগীর চাপ কম পড়ে।

গত একসপ্তাহ বাহাদুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, বালিয়াডাঙ্গা, লেবুতলা ফুলবাড়ি, বিরামপুর ও নওয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, এসব ক্লিনিক নির্ধারিত সময়ে খোলে এবং বন্ধ হয়। কাঠমারা কমিউনিটি ক্লিনিকে মাঝেমধ্যেই প্রসূতির নরমাল ডেলিভারিও হয়।

তবে অভিযোগ রয়েছে, শহরকেন্দ্রিক কমিউনিটি ক্লিনিক অফিস সময় মেনে চললেও প্রান্তিক গ্রাম অঞ্চলে এখনও দেরিতে খুলে তাড়াতাড়ি বন্ধ করে চলে যান সিএইচসিপি। আবার সিএইচসিপিদের সেবা প্রদান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষিত মানুষের মধ্যে। বিপরীতে সেবা প্রদানকারীদের মধ্যেও রয়েছে হতাশা। বাহাদুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. রাকিব আহসান বলেন, ১১ বছর আগে আমরা যে বেতনে ঢুকেছিলাম, এখনও সেই বেতন। এত সেবা দেয়ার পরও আমাদের ভবিষ্যতের কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিরামপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি শহিদুল ইসলাম বলেন, ২৪ ঘণ্টাই ক্লিনিকের সেবার আওতায় আনা জরুরি। এজন্য ক্লিনিক আধুনিকায়ন, প্রাথমিক পরীক্ষা-নীরিক্ষার আওতায় আনা হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আরও ভালো সুবিধা পাবে।

সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থসেবা পৌঁছে দিয়েছে। তৃণমূল মানুষের কাছে এই ক্লিনিক এখন মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু ক্লিনিকে সমস্যা আছে উল্লেখ করে বলেন, আগামীতে সেগুলোর সমস্যা দ্রæত সমাধান করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (সিবিএইচসি) ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক সীমিত পরিসরে কাজ করে। সাধারণ স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরামর্শের জন্য ১৫-২০ কিলোমিটার রাস্তা মাড়িয়ে উপজেলা বা জেলা সদরে যেতে হয় না। তবে এসব ক্লিনিকের চিকিৎসাসুবিধা সম্প্রসারণের কোনো পরিকল্পনা এখনই নেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.