Take a fresh look at your lifestyle.

অভয়নগরে ১০৭ চুল্লিতে গাছ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন চলছে

দুইবার গুড়িয়ে দিলেও বন্ধ হয়নি অবৈধ এ ব্যবসা

0

শাহিন হোসেন, অভয়নগর প্রতিনিধি :
অভয়নগরে ১০৭টি চুল্লিতে ফলজ, বনজ গাছ পুড়িয়ে অবৈধভাবে কয়লা উৎপাদন এখনও বন্ধ হয়নি। চুল্লির রসদের জোগান দিতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছপালা। অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব গাছ কেটে তা পুড়িয়ে উৎপাদন করছেন কয়লা। ১০৭টি চুল্লিতে এসব কয়লা বানানো হচ্ছে। চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের আমতলা ও সোনাতলা এলাকাবাসী জানায়, প্রথমদিকে গুটিকয়েক ব্যক্তি কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি ও বিক্রি করে আসছিল। পরে ব্যবসায়ীরা অবৈধ এ কারবারের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। সিদ্দিপাশা ঘনবসতিপ‚র্ণ এলাকা। আমতলা ও সোনাতলা এলাকার গাছ কাটাসহ পার্শ¦বর্তী এলাকা থেকেও গাছ কাটা শুরু করেছে তারা। অথচ সেখানে রয়েছে শত শত পরিবারের বসতি। ঘন ঘন বাড়িঘর থাকা সত্বেও বসতিবাড়ির পাশে গাছপালা কেটে পোড়ানো হচ্ছে। এসব চুল্লিতে বছরের পর বছর পোড়ানো হচ্ছে বাগানের গাছ। ফলজ, বনজ গাছ কেটে জ্বালানি পুড়িয়ে চুল্লিতে কয়লা উৎপাদন হচ্ছ দেদারসে।

এলাকার বাসিন্দা হানিফ সরদার, শাহিন শেখ, হারুন শেখ, ইউসুফ শেখ, আরিফ সরদার, নাজিম মোল্যা, হিমায়েত শেখ, মিজান সরদার, জাকির মোল্যা, সুখেন ভদ্র, খবির ফারাজী, সঞ্জয় দাস, গোবিন্দ দাস, সবুজ সরদার, শরিফুল শেখ বলেন, এ অঞ্চলে ১০৭টি চুল্লি তৈরি করে কয়লা বানানো হচ্ছে। তারা এতটাই বেপরোয়া যে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, মুখ খুলতেও সাহস পান না। মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, দাতব্য চিকিৎসালয়, পানের বরজ ও ক্ষেতখামার রয়েছে। এতে এ এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, সোনাতলা গ্রামের হারুন মোল্যা, বর্তমান মেম্বর জিয়া মোল্যা, হাবিব হাওলাদার, শহিদ মোল্যা, তসলিম মিয়া, কবীর শেখ, ছোট্ট মোল্যা, শান্ত হোসেন, তৌকির মোল্যা, মনির শেখ, ফারুক হাওলাদার এবং ধূলগ্রামের হরমুজ সর্দার, রকশেদ সর্দার, ইয়াছিন শেখসহ কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ এই কারবারে যুক্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রলিতে করে কাঠ নিয়ে শতাধিক মাটির কাঁচা চুল্লি তৈরি করে কয়লা বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। গাছপালা কেটে ছোট ছোট কাঠের টুকরা বানিয়ে চুল্লির মধ্যে দিয়ে জ্বালানো হচ্ছে। একপাশ দিয়ে ছোট কয়লা বের করা হচ্ছে। অন্যপাশে সেই কয়লা শুকানো হচ্ছে। বাকি জায়গায় বস্তায় ভর্তি করে রাখা হয়েছে। চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে চুল্লির খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৭ থেকে ১০ দিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২শ’ থেকে ৩শ’ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হয়ে গেলে সেগুলো বের করে ঠান্ডা করে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) থান্দার কামরুজ্জামান জানান, বিষয়টি জেনেছি। কয়েকমাস আগে কয়লা উৎপাদন চুলা ড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এর আগে ১০৪টি অবৈধ চুল্লি স্কেভেটার দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এবার তদন্তপূর্বক স্থায়ীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.