Take a fresh look at your lifestyle.

যশোর জেলা সাহিত্য মেলা’র ‘অগোছালো’ শুরু

কবি সাহিত্যিকদের নানা অভিযোগ

0

প্রতিবেদক :
নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে যশোর জেলা সাহিত্য মেলার প্রথমদিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ বুধবার (২১ ডিসেম্বর) টাউন হল ময়দানে মেলা উদ্বোধনের পর প্রবন্ধপাঠ ও আলোচনা শুরু হয়। দুপুর একটায় এই আলোচনা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গড়ায় বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। ফলে কর্মসূচিতে লেখক কর্মশালার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ব্যাহত হয় অন্যান্য কর্মসূচি।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের ইস্যু করা দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিকদের জন্য দাওয়াতপত্রের চিঠিতে নাম ছিল ভুলে ভরা। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে, মঞ্চে আলোচনার সময় প্রশ্ন উঠেছে প্রবন্ধ বাছাই নিয়েও।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শাহনাজ সামাদ যশোর জেলা সাহিত্য মেলা উদ্বোধন করেন। এর আগেই শুরু হয় আলোচনা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সাহিত্য মেলার প্রথমদিনের কর্মসূচিতে ছিল প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা, লেখক কর্মশালা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কুইজ, স্থানীয় লেখকদের স্বরচিত সাহিত্য পাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠান দুপুর একটায় শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা চলেছে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। ফলে লেখক কর্মশালা পন্ড হয়ে যায়। কুইজ কার্যক্রম ছিল অগোছালো।

এদিকে, ‘যশোর জেলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ নিয়ে লেখা প্রবন্ধ পাঠের কথা থাকলেও সেই প্রবন্ধ ৫ মিনিটে শেষ করার ঘোষণা করা হলে কবি সাইদ হাফিজ তা পাঠ করেননি। একই বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন জেলা মেলার ‘আলোচিত’ কমিটির আলোচিত সদস্য ড. শাহনাজ পারভীন। এছাড়া ‘যশোর জেলার কবিতা ও ছড়া’ বিষয়ে কে এম বদিয়ার রহমান এবং ‘যশোর জেলা কথাসাহিত্য, নাটক, প্রবন্ধ ও অন্যান্য’ বিষয়ে সৈয়দ এমদাদুল হক প্রবন্ধ পাঠ করেন।

প্রবন্ধ পাঠের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে দেশবরেণ্য গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং প্রবন্ধ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হোসেনউদ্দীন হোসেন, গল্পকার মনি হায়দারও সমালোচনা করেন।
এদিকে, কর্মসূচি ঘোষণাপত্রে জেলা প্রশাসনের লেখা নিয়ে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে অনুদানপ্রাপ্ত সকল সংস্কৃতিসেবী, সকল তবলচি, প্রশিক্ষক ও সকল কবি, সাহিত্যিক, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সংশ্লিষ্ঠ অন্যান্যদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’ কবিসাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ‘অনুদানপ্রাপ্ত’ শব্দটি নিয়ে অভিযোগ করেন।

অন্যদিকে, অপর এক পত্রে প্রবন্ধের আলোচকদের নামের ভুল নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। ওই পত্রে কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হোসেনউদ্দীন হোসেনের নাম ‘হোসেন উদ্দিন হোসেন’ এবং গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের নাম ‘মোঃ রফিকুজ্জামান’ লেখা হয়।

এর আগে গত কয়েকদিন ধরেই জেলা মেলা নিয়ে ওঠে সমালোচনার ঝড়। বেশ কিছু অভিযোগে বলা হয়, জেলা প্রশাসনের তৈরি করা উপকমিটি তাদের পছন্দের কবিসাহিত্যিকদের নিয়ে করছেন এই মেলা। জেলা প্রশাসন কিংবা তার কোনো প্রতিনিধি এ বিষয়ে কোনো প্রচার-প্রচারণা করেনি। দেওয়া হয়নি কোনো বিজ্ঞপ্তি। জেলার লেখকদের লেখা নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশের কথা থাকলেও লেখা আহ্বান করা হয়নি। যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মনোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক করে করা হয়েছে ওই কমিটি। কমিটিতে আরও আছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক ও কবি হোসেনউদ্দীন হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে আছেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ড. সবুজ শামীম আহসান, ড. শাহনাজ পারভীন ও গোলাম মোস্তফা মুন্না।

প্রথমদিনের জেলা সাহিত্য মেলা বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, ‘এটি সাহিত্যের ক্ষেত্রে সরকারের অন্যতম ভালো একটি উদ্যোগ।’ এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাকে না জানিয়েই ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে। একটি সভায় আমাকে ডাকা হয়। সেখানে গিয়ে আমি অনেককেই দেখিনি। সেসময় তাদের কথা আমি জানতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম এরা থাকলে অনুষ্ঠানটি ফলপ্রসূ হতো। তারা তিনটি প্রবন্ধ পাঠের জন্য নির্বাচন করে আমাকে জানায়। বাছাইয়ের আগে কিছু বলেনি।’

কবি পলিয়ার ওয়াহিদ বলেন, ‘জেলা সাহিত্য মেলা নিঃসন্দেহে সরকারের ভালো উদ্যোগের একটি। তবে, বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত যে মেলা হয়েছে, সেখানেও তত্ত্বাবধানের অভাব দেখা গেছে। ওইসব জেলার অনেক কবি-সাহিত্যিক না জানতে পেরে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। যশোরেও তেমনটিই হচ্ছে বলে জেনেছি।’

জেলা পর্যায়ে সাহিত্য মেলায় সরকারে অবদানের প্রশংসা করে কবি ও সাহিত্য সংগঠক খায়রুল কবির চঞ্চল বলেন, ‘এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। কমিটির সদস্যরা সাংগঠনিকভাবে তৎপর হলে জেলার সব কয়টি উপজেলার কবিসাহিত্যিকরা এতে অংশগ্রহণ করতে পারতেন। আগামীতে যেকোনো আয়োজন আরও সুন্দর ও সুচারুরূপে অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা রাখি।’

কবি ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ আহসান কবীর বলেন, ‘যশোর আমার জন্ম জেলা। সেই জেলায় ভালো কিছু হলে ভালো লাগে। সাহিত্য নিয়ে ভালো কিছু হলে আরও ভালো লাগে। কিন্তু দূর থেকে শুধুই অগোছালো একটি জেলা সাহিত্য মেলার কথা শুনলাম। এটি দুঃখজনক।’

কবি তহীদ মনি বলেন, ‘যশোরের কবি-সাহিত্যিকরা অধিকাংশই জানেন না কারা কীভাবে এ মেলায় যুক্ত হয়েছে। আসলে কোনো বাছাই প্রক্রিয়াই হয়নি। মুখচেনা, ঘনিষ্ঠ আর আজ্ঞাবহদের যুক্ত করে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।’

জেলা মেলায় প্রবন্ধ পাঠ না করা প্রসঙ্গে কবি সাইদ হাফিজ বলেন, ‘আমাকে প্রবন্ধ পাঠের জন্য ৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এত অল্প সময়ে প্রবন্ধ পাঠ করা যায় না। এজন্য আমি প্রবন্ধ পাঠ না করে একথা উল্লেখ করেই কিছু আলোচনা রেখেছিলাম।’

জেলা প্রশাসনের ইস্যু করা দাওয়াতপত্রের চিঠিতে অতিথি দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিকের নামের ভুল প্রসঙ্গে মেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি মোনায়ার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’ অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষর যেহেতু আমার, দায় তো আমাকেই নিতে হবে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.