Take a fresh look at your lifestyle.

মেহেরপুরে শীতে ৪৫ দিনে ১২ মৃত্যু

শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগের প্রকোপ

0

মেহেরপুর প্রতিনিধি :
শীতজনিত নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, অ্যাজমা ও আগুনে পুড়ে মৃত্যু বেড়ে গেছে মেহেরপুর জেলায়। গত দেড়মাসে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে মারা গেছে ৬৫ জন। ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় মারা গেছে ১২ জন।

চিকিৎসকদের মতে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শীত বেশি পড়ে। এই সময় শীতে উল্লেখিত রোগে বেশি মারা যায়। শীতে কাবু মানুষকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যে গরম কাপড় দেয়া হয় সেটা যথেষ্ট না হওয়ায় এবং সচেতনতার অভাবে মানুষ শীতে ভুগে মারা যায়। চিকিৎসাসেবার প্রাপ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সচেতন মানুষের। রোগির চাপে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় রোগিদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। খোলা বারান্দায় রোগিরা চিকিৎসাসেবা নিতে শীতে কাবু হয়ে পড়ছে।

মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের গত ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৫ জন মারা গেছে। এরমধ্যে শ্বাসতন্ত্রের কারণে ডিসেম্বর মাসে ৬ জন ও চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ জন মিলে মোট ১২ জন মারা গেছে। জানুয়ারি মাসে মারা গেছে ৬ জন । গত ১৪ জানুয়ারি গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের আবু জায়েদ, ১১ জানুয়ারি সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মকিম উদ্দীন, যাদবপুর গ্রামের মাবিয়া খাতুন ও রামদাসপুর গ্রামের নুর ইসলাম, ২ জানুয়ারি পুরন্তরপুর গ্রামের তাহমিনা খাতুন ও গাংনীর ভাটপাড়া গ্রামের মো. হিরু বিশ্বাস। এছাড়া শীত নিবারনে আগুন পোহাতে গিয়ে গাংনীর চেংগাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম মারা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগব্যাধি দেখা দেয়। এরমধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, সর্দি-কাশি, জ¦র, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি ও নিউমোনিয়া অন্যতম।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৩২ জন। সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। জনবল সংকটে আউটসোর্সিং লোকবল দিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আউটসোর্সিং লোকবল সেবা দিতে রোগিদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে বলে রোগিরা অভিযোগ করেন। রোগি পক্ষের অভিযোগে লাকি নামের এক আউট সোর্সিংয়ের সেবিকাকে সাবধান করেন হাসাতাল তত্ত্বাবধায়ক।

প্রচন্ড শীত ও কুয়াশার সাথে শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগির স্থান সংকুলান হচ্ছেনা হাসপাতালগুলোতে। গত ২৪ ঘন্টায় মেহেরপুর ২৫০ শয্যা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭১ জন রোগি ভর্তি হয়েছে শুধুমাত্র সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে। যাদের অধিকাংশই শিশু। সরেজমিনে দেখা গেছে চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি রোগির স্বজনরা জানালেন, হাসপাতাল থেকে খাবার স্যালাইন দেয়া হলেও বাইরে থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। রোগিদের অভিযোগ অস্বীকার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, লোকবল সংকটে শতভাগ সেবা দেয়া যাচ্ছেনা। রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় ডাক্তারদের কোনো অবহেলা নেই।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার জানান, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে হাসপাতালে রোগির সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে গত ৪৫ দিনে ৬৫ জন মারা গেছে। এরমধ্যে ১২ জন মারা গেছে শ্বাসতন্ত্রের কারণে। একজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে এবং বিভিন্ন রোগে মারা গেছে ৫২ জন মিলে মোট ৬৫ জন।

সিভিল সার্জন জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল কঠিন রোগব্যাধি দেখা দেয়। এরমধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, সর্দি-কাশি, জ¦র, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি নিউমোনিয়া অন্যতম। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও কুয়াশার কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত খাবার ও কলেরা স্যালাইন রয়েছে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেন কলেরা স্যালাইন নেই তা দেখা হচ্ছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.