Take a fresh look at your lifestyle.

মেহেরপুরের পাতাকপি বিশ্ববাজারে

রফতানি হচ্ছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
সবজি উৎপাদনে কৃষিনির্ভর মেহেরপুর জেলার সুনাম রয়েছে। দেশের চাহিদার ১৫ শতাংশ মেটায় মেহেরপুরের সবজি। সবজি চাষিরা ভরা মৌসুমে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হতেন। কখনও কখনও চাষের খরচও তুলতে পারতেন না তারা। কষ্টের সবজি গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে বিক্রি করতে হতো। এখন মেহেরপুরের পাতাকপি রফতানি হচ্ছে বিশ্ববাজারে। প্রতিটি পাতাকপি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কিনছে ১৪ থেকে ১৬ টাকায়। বিভিন্ন দেশের বাজারে প্রতিটি কপি বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি টাকায় ৬০ থেকে ১০০ টাকায়। মেহেরপুরে উৎপাদিত পাতাকপি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরে রফতানি হচ্ছে।

একটা সময় গাংনীর সাহারবাটিতে সবজি চাষ হতো। লাভবান হওয়ায় জেলার প্রতিটি গ্রামে সবজি চাষ হয়। ভরা মৌসুমে এসব সবজির দাম কমে যেত। এখন সেই সবজি দেশের বাইরে চাহিদা থাকায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। তারা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাতাকপি সরবরাহ করছেন বেশি দামে। মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে কীটনাশকমুক্ত পাতাকপি রফতানি পণ্যের তালিকায় যুক্ত হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন সম্ভাবনাময় খাতও তৈরি হয়েছে। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় বিদেশে রফতানিযোগ্য পাতাকপি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

কৃষি বিভাগ চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করায় পাতাকপির উৎপাদন বৃদ্ধি, গুণগত মান বজায় রাখার পাশাপাশি খরচও কমছে। কৃষি বিভাগের হিসেবে দেশের গন্ডি পেরিয়ে চলতি বছরে মেহেরপুর থেকে বিষমুক্ত ১৫শ’ মেট্রিকটন পাতাকপি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানে রফতানি হচ্ছে। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এগ্রো ফ্রেশ কোম্পানির মাধ্যমে এসব পাতাকপি রফতানি হচ্ছে। মাঠ থেকেই পাতাকপি কিনে নিচ্ছেন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান।

মেহেরপুরের সাহারবাটি, বন্দর, মোনাখালি, সোনাপুর, কাথুলিসহ বিভিন্ন গ্রামে এই কপির আবাদ হচ্ছে। আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। প্রতিদিন মেহেরপুর থেকে লরি ভরে নেয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে সুমদ্রপথে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় রফতানি হচ্ছে। দেশের বাজারে এক ট্রাক পাতাকপি চাষি পেতেন ৪০-৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে দেশের বাইরে বিক্রি করে পাচ্ছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি অফিস জানায়, জেলায় ১২শ’ হেক্টর জমিতে পাতাকপি চাষ করেছেন কৃষকরা। সাধারণত শীতের মধ্যেই পাতাকপি চাষ ও হারভেস্টিং শেষ হয়ে যায়। চলতি মৌসুমে ৪টি দেশ এক হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন বাঁধাকপি নেয়ার চাহিদা দিয়েছে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে।

সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের চাষি বাবর আলী বলেন, আমার দেড়বিঘা জমিতে পাতাকপি চাষ করেছি। জমি থেকেই এক ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন। তারা সাদা প্যাকেটে মুড়িয়ে বস্তাবন্দি করে ট্রাকে নিয়ে যান চট্টগ্রাম বন্দরে। আমি দেড়বিঘা জমির বাঁধাকপি বিক্রি দিয়েছি ৯০ হাজার টাকায়। আমার খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। মোনাখালী গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, আমার নিজের লরি আছে। কৃষকের কাছে থেকে কিনে আমিন ট্রেডার্স নামের দিনাজপুরের একটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিই। আবার অনেক সময় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও এসে সরাসরি কৃষকের কাছে থেকে কিনে লরি ভরে নিয়ে যায়। প্রতি লরি ৭০-৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। দেশের বাইরে এগুলো যাচ্ছে। তাই চাষিরা এমন দাম পাচ্ছে। তা না হলে ৪০-৪৫ হাজার টাকা দাম হতো।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, আমাদের নিরাপদ সবজির বাজার তৈরি করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এবছর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানে নিরাপদ সবজি হিসেবে বাঁধাকপি বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে। অন্যান্য দেশেও বাড়ছে নিরাপদ এই সবজির চাহিদা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.