Take a fresh look at your lifestyle.

গদখালীর ফুল উৎসবের সুবাস ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশে

0

প্রতিবেদক :
হাড়িয়া গ্রামের রুবেল হোসেনের ছোট একটা ফুলের খেত আছে। ফোটান গাঁদা, গ্লাডিউলাস আর চন্দ্রমল্লিকা। এসব ফুল বিক্রি করে তার কিছু টাকা উপার্জন হয়। কিন্তু তাতে সংসার চলে না। তাই তিনি ভ্যান চালান। সেই ভ্যানটাকে তিনি সাজিয়েছেন নিজের খেতের গাঁদা, গ্লাডিউলাস আর চন্দ্রমল্লিকা দিয়ে। ফুল উৎসবে এ তার ভালোবাসার অনবদ্য নিদর্শন। বর্নি গ্রামের ভ্যানচালক মো. তরিকুল ইসলামের নিজের ফুল খেত নেই। তাই তিনি মাঠের একজনের কাছ থেকে কিনেছেন ২০ টাকা দিয়ে গাঁদা ফুল। এরকম ফুলে ফুলে সাজানো ভ্যান আর ইজিবাইকে ভরে উঠেছে গদখালি এলাকা। ফুল উৎসবকে ঘিরে এমন রঙিন সাজে প্রত্যেকটি মানুষই যেন মেতে উঠেছেন। এলাকার প্রতিটি মুদি দোকান থেকে খেলনার দোকান, রেস্টুরেন্ট, নাগরদোলার মাঠ ফুলের সাজে সজ্জিত। এমনটি ফুলের প্রতিটি খেত আর জারবেরা ফুলের শেডকেও ফুলের মালা আর বেলুন দিয়ে রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি শেডই যেন একেকটি ফুলমেলার স্টল। উৎসব মুখরতায় ফুলের এমন মাখামাখি এখন ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালি এলাকা জুড়ে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নে এই ফুলের রাজ্যে চার দশক পর প্রথমারের মতো ফুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) শুরু হওয়া ফুলের এ মেলা শেষ হবে আজ শনিবার (২১ জানুয়ারি)।

ফুল উৎসবকে ঘিরে নিজের খেতের গাঁদা, গ্লাডিউলাস আর চন্দ্রমল্লিকা দিয়ে ভ্যান সাজিয়েছেন রুবেল হোসেন, ছবি : কপোতাক্ষ

১৯৮২ সালের দিকে শের আলি সরদার রজনীগন্ধা ফুল চাষের মাধ্যমে এখানে ফুলের চাষ শুরু করেন। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি ১৫শ’ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেন রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিউলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগের বেশি যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ফুল এখন যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ায়ও। প্রথমদিকে বছরের নির্দিষ্ট কয়েকমাসে হলেও এখন প্রায় সারাবছরই ফুলচাষ হয়ে থাকে।

উৎসবের সুবাস সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ফুল উৎসব থেকে। আয়োজকরা বলছেন, ফুলের চাষ করেই এ এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বয়ে এসেছে চাষিদের জীবনে। এই সমৃদ্ধির সোপান ছড়িয়ে পডুক সারাদেশে, এটা চান এখানকারই ফুলচাষিরা। আর জেলা প্রশাসনের চাওয়া আরও একটু বাড়তি : ফুলকে ঘিরে গড়ে উঠুক পর্যটনশিল্পের নতুন দিগন্ত। মেলার উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, সময় এসেছে ফুলকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশের। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম গদখালি। এই গ্রামের নাম জানে না এমন কেউ নেই। তাই গ্রামকে ঘিরেই গড়ে তোলা সম্ভব পর্যটন শিল্পের নতুন দিগন্ত। গদখালিকেন্দ্রিক ফুলকে অনেকদূর নিয়ে যেতে চাই।

ফুলের প্রতিটি খেতই যেন ফুল উৎসবের একেকটি স্টল, ছবি : কপোতাক্ষ

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপরিচালক হুসাইন শওকত ফুল উৎসবের জন্য একটা দিনকে বেছে নেয়ার আহ্বান জানান। তার ভাষ্য : এটা ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব গোলাপ দিবস বা ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে হতে পারে।

কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, গদখালির এই ফুল উৎসব একদিন জাতীয় রুপ পাবে।

উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের কথা ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় আমরা আনন্দিত। ফুলের রাজ্যে প্রবেশদ্বারে একটা গেট বানোনোর প্রস্তাব করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বললেন, এটা দারুন আনন্দের। আমাদের নতুন একটা অনুষ্ঠান যুক্ত হলো।

ফুলচাষের সফল উদ্যোক্তা সাজেদা বেগম বলেন, এই মেলায় ফুলচাষিদের সাহস বেড়ে গেল। ফুলচাষিরা আরও লাভবান হবে। এখানে ফুল দেখতে মানুষ যত আসবে, ততই আমরা লাভবান হবো। প্রতিবছর সারাদেশে এমন ফুল উৎসব আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক বলেন, নানান রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা শ্লোগানে জেলাকে ব্র্যান্ডিং করেছে সরকার। কিন্তু জেলা ব্র্যান্ডিং নিয়ে মেলা করা সম্ভবত দেশে এটাই প্রথম। উপজেলা প্রশাসন এর আয়োজক।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.